নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে জমে উঠছে নতুন টাকার ব্যবসা। ২ থেকে ৫০ টাকার নোটে ব্যবসা বেশি হচ্ছে। প্রতি বান্ডেলে (১০০ পিস) সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেশি নেয়া হচ্ছে। বিক্রেতারা জানান, ২ টাকার বান্ডেলে ৪০ টাকা, ৫ টাকার বান্ডেলে ১০০ টাকা, ১০ টাকার বান্ডেলে ১০০ টাকা, ২০ টাকার বান্ডেলে ১৫০ টাকা এবং ৫০ টাকার বান্ডেলে ২০০ টাকা বেশি রাখা হয়।
ঈদ উদযাপনের এক অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে টাকার নতুন নোট। প্রিয়জন, বিশেষত শিশুদের হাতে নতুন টাকা তুলে দিতে সব অভিভাবকেরই আগ্রহ থাকে। আগেভাগেই নতুন টাকা সংগ্রহ করতেও তাই মানুষের মধ্যে যথেষ্ট আগ্রহও তৈরি হয়েছে। এ কারণেই ঈদ সামনে রেখে নতুন টাকার জমজমাট ব্যবসাও দেখা যায় রাজধানীর বিশেষত মতিঝিল ও গুলিস্তান এলাকায়।
নিন্ম আয়ের কিছু মানুষ এ ব্যবসা করেন। যদিও সারা বছর ধরেই নতুন টাকা বেচাকেনা চলে এসব এলাকায়। তবে ঈদের আগে ব্যবসাটা হয় জমজমাট। রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের পাশে অবস্থিত সেনাকল্যাণ ভবনের সামনে সোমবার সকালে কথা হয় নতুন টাকার ব্যবসায় জড়িত ফাতিমা বেগমের সঙ্গে। তিনি ৫০০ টাকার (৫ টাকার এক বান্ডেল) নতুন নোট বিক্রি করেন এক গ্রাহকের কাছে। ৫০০ টাকা বদলে নিতে গ্রাহক তাকে দেন ৬০০ টাকা। অর্থাৎ এ থেকে ফাতিমার আয় হয় ১০০ টাকা। ফাতিমা বেগম নিজে এবং তার সঙ্গের একজন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাউন্টারে দাঁড়িয়ে থেকে ৮ হাজার টাকার নতুন এই নোটগুলো সংগ্রহ করেন ওই দিন সকালেই।
ফাতিমা জানান, তার আয় ঈদ সামনে রেখে খানিকটা বেড়েছে। তিনি বলেন, কোনো কোনো দিন আয়-রোজগার ১ হাজার ২০০ টাকা, আবার কোনো কোনো দিন বিক্রি বেশি হলে প্রায় ২ হাজার টাকাও লাভ থাকে। এ জন্য দু-তিনজন সঙ্গী নিয়ে ফাতিমা নতুন টাকা সংগ্রহ করেন। বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের নিচতলায় তিনটি কাউন্টারে ও মূল ভবনের নিচতলায় একটা কাউন্টারে দেয়া হয় নতুন টাকা। যে কোনো গ্রাহক তার টাকা বদলে যে কোনো অঙ্কের নোট নিতে পারেন প্রতিদিন। তবে এবার প্রতিজনকে ৮ হাজার ৭০০ টাকা পর্যন্ত নতুন নোট দেয়া হচ্ছে।
অন্য বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান ফটকের সামনেই নতুন টাকা বেচাকেনার একটা বাজার বসে যেত। এবার বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তারক্ষীরা তা আর বসতে দিচ্ছেন না। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের ফটক ছেড়ে পাশেই সেনাকল্যাণ ভবনের সামনে এবার বসেছে নতুন টাকা বেচাবিক্রির এ বাজারটি। দিনের প্রায় সবটা সময়ই একটা জটলা থাকে সেখানে। দরদাম করে নতুন টাকা সংগ্রহ করেন আগ্রহী ব্যক্তিরা। কেউ কেউ ছোট ছোট ব্যাগের মধ্যে নতুন টাকা নিয়ে, আবার কেউ কেউ প্রকাশ্যেই হাতে নতুন টাকা সাজিয়ে বা বসে-দাঁড়িয়ে বিক্রি করে নতুন টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের নতুন নোটগুলোর কাউন্টারের সামনে যে সারি দেখা গেল, তার অধিকাংশই নতুন ব্যবসায়ী বলে মনে হয়। এদের একজন আনোয়ার হোসেন। তিনি গুলিস্তান এলাকায় নতুন টাকার ব্যবসা করেন বলে জানান। তিনি বলেন, তারা কয়েকজন মিলে লাইনে দাঁড়িয়ে নতুন নোট সংগ্রহ করছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, তাদের কাছে যে-ই আসুক নির্ধারিত পরিমাণ নতুন টাকা সবাইকে দিতে বাধ্য। কাউকে তো তারা বলতে পারবেন না যে তাকে নতুন টাকা দেয়া যাবে না। যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র যুগান্তরকে বলেন, প্রত্যেক ব্যক্তি একবারে ৮ হাজার ৭০০ টাকার নতুন নোট পাবেন। এ ছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও একই হারে বদলে দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কার মাধ্যমে নতুন নোট বাইরে যাচ্ছে তা জানা নেই।
প্রসঙ্গত, গত ৮ জুন থেকে নতুন নোট বদলে দেয়া শুরু হয়। এবারের ঈদে ২৫ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট ছাড়ার প্রস্তুতি নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সব শাখা অফিসের পাশাপাশি বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকে বিশেষ কাউন্টার খুলে এসব নোট বিনিময় করা হচ্ছে।
রাজধানীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ২০টি শাখা থেকে নতুন নোট দেয়া হচ্ছে। এসব শাখা থেকে একজন ব্যক্তি ২, ৫, ১০, ২০ ও ৫০ টাকার একটি করে বান্ডেল অর্থাৎ মোট ৮ হাজার ৭০০ টাকার নতুন নোট পাবেন। এর বাইরে কেউ চাইলে ১, ২ ও ৫ টাকার কয়েন নিতে পারবেন যত খুশি।
দৈনিক দেশজনতা/ এমএইচ