২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | দুপুর ১:৩৫

ছাত্রদলে সভাপতি-সম্পাদক ছাড়া বাকি পদে বিবাহিতরাও থাকছেন

দেশজনতা অনলাইনঃ ছাত্রদলের কমিটিতে বিবাহিত নেতাকর্মীদের না রাখার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন নীতিনির্ধারকরা। বিবাহিতদের গত তিন দিনের আমরণ অনশন-আন্দোলনের মুখে বিএনপি নেতারা নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন। শেষ পর্যন্ত কমিটিতে বিবাহিতদেরও স্থান দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। তবে, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বিবাহিতরা স্থান পাবেন না। সংগঠনের শীর্ষ এই দুই পদ ছাড়া বাকি পদে তারা প্রার্থী হতে পারবেন।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিলের সময় নিয়ম ছিল—২০০০ সাল থেকে পরবর্তী সময়ের যেকোনও বছরে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা প্রার্থী হতে পারবেন। তবে, বিবাহিত কেউ কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রার্থী হতে পারবেন না। কিন্তু বিবাহিত ছাত্রদল নেতাদের গত কয়েক দিনের আন্দোলনের পর ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তাদের রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এক্ষেত্রে বিবাহিতদের ঢাকা মহানগরের ৪টি ইউনিট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বড় বিশ্ববিদ্যালয় এবং জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে না রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, বিবাহিতদের মধ্যে ২০০০ সালের আগে যারা এসএসসি পাস করেছেন, তাদের ছাত্রদলের কমিটিতে পদ দেওয়া হবে না। তাদের অন্য সংগঠনগুলোতে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ছাত্রদলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বিবাহিতদের পদ দিতে ইতিবাচক তারেক রহমান। তবে শীর্ষ ২ পদে তাদের রাখার সম্ভাবনা নেই। কারণ, এই পদগুলো গুরুত্বপূর্ণ। তাদের ওপর নির্ভর করে সাংগঠনিক কার্যক্রম।’

এই নেতা আরও বলেন, ‘যেকোনও আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ছাত্র সংগঠন। সেখানে একজন অবিবাহিত নেতা যেভাবে আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনা করতে পারেন, বিবাহিতরা সেভাবে পারেন না।’

জানতে চাইলে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন বলেন, ‘আমাদের কাউন্সিলের আগে সারাদেশের কাউন্সিলররা ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে। সংগঠনের যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও তাকে দেওয়া হয়েছে। তিনি সংগঠনে একটি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে চান। তার সিদ্ধান্ত ছিল বিবাহিতদের ছাত্রদলের কমিটিতে না রাখার। ফলে তার সিদ্ধান্তের প্রতিও আমাদের সম্মান জানাতে হবে। এখন বিবাহিতদের কমিটিতে রাখা হবে কিনা, সেই সিদ্ধান্তও তিনি নেবেন।’

প্রসঙ্গত, গত ৩০ অক্টোবর থেকে বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচে ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ পেতে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করে আসছেন সদ্য বিদায়ী কমিটির অর্ধশতাধিক বিবাহিত নেতাকর্মী  তারা বলছেন, সংগঠনের গঠনতন্ত্রেও কোথাও লেখা নেই বিবাহিতরা ছাত্রদল করতে পারবেন না। অথচ এখন বলা হচ্ছে বিবাহিতদের ছাত্রদলের কমিটিতে রাখা হবে না। এমনটি হলে বিবাহিতদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের কী হবে? রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করতে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলেও জানান তারা।

আন্দোলনকারী ছাত্রদলের সদ্য বিদায়ী কমিটির স্কুল বিষয়ক সম্পাদক আরাফাত বিল্লাহ খান বলেন, ‘ছাত্রদলের কাউন্সিলের আগে বলা হয়েছিল, বিবাহিতরা কেউ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হতে পারবেন না। তবে নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তাদের রাখা হবে। এখন আমাদের বলা হচ্ছে বিবাহিতদের কমিটি রাখা হবে না। তাহলে আমরা এখন কোথায় যাবো?’

বিবাহিতদের ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে রাখার দাবি নিয়ে বিএনপির একাধিক নেতারে সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে আরাফাত বিল্লাহ বলেন, ‘কারও কাছ থেকে আমাদের দাবির বিষয়ে সুষ্পষ্ট আশ্বাস না পাওয়ায় আমরণ অনশন শুরু করেছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখান থেকে যাবো না।’

বিবাহিতদের ছাত্রদলের কমিটিতে পদ দেওয়ার দাবিতে চলমান আন্দোলনকে যৌক্তিক বলে মনে করছেন সংগঠনটির সদ্য বিদায়ী কমিটির নেতারাও। তারা বলছেন, যেহেতু সংগঠনের গঠনতন্ত্রে বিবাহিতদের ছাত্রদল করতে কোনও বাধা নেই, তাই তাদের দাবি অযৌক্তিক বলা যাবে না। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে দলের হাইকমান্ড কোনও সিদ্ধান্ত নিলে তাও মেনে নিতে হবে বলেও তারা মনে করেন।

এ প্রসঙ্গে সদ্য সাবেক ছাত্রদলের কমিটির সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান বলেন, ‘সংগঠনের গঠনতন্ত্রে বিবাহিতরা সংগঠন করতে পারবেন না—এ রকম কোনও নিয়ম নেই। তবে, দলের হাইকমান্ড কোনও সিদ্ধান্ত দিলে তার প্রতিও সম্মান দেখাতে হবে।’

নভেম্বরেই হচ্ছে ছাত্রদলের আংশিক কমিটি

চলিত মাসের যেকোনও সময় ঘোষণা হতে পারে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের ৪০ থেকে ৪৫ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি। একইসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরও আংশিক কমিটির ঘোষণা আসতে পারে। সেই লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল ও ঢাবি শাখা কমিটির খসড়াও করা হয়েছে। তারেক রহমানের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে খসড়া কমিটি চূড়ান্ত করে নভেম্বর মাসেই ঘোষণা দেওয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে ফজলুর রহমান খোকন বলেন, ‘এ মাসের মধ্যে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি আংশিক ঘোষণা করার চেষ্টা করছি। সংগঠনের অভিভাবক তারেক রহমানের সঙ্গে এ বিষয়ে আমরা আলাপ-আলোচনাও করেছি। যেকোনও সময় ঘোষণা করতে পারি।’ খোকন আরও বলেন, ‘আমাদের মতে, সংগঠনে যাদের অবদান আছে, তাদের নিয়ে ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে হবে। সেখানে বিবাহিতদের অবদান থাকলে তাদেরও কমিটিতে রাখার বিষয়ে হাইকমান্ডের সঙ্গে আমরা আলোচনা করছি। আশা করি, শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’

গত ৫ মে ভেঙে দেওয়া ছাত্রদলের রাজীব আহসানকে সভাপতি ও আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত কমিটি ছিল ৭৩৬ সদস্যবিশিষ্ট। এবার সেই বিশাল আকারে কমিটি হবে না। কমিটির আকার ছোট করে ১৭১ সদস্যবিশিষ্ট করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও ছাত্রদল সূত্রে জানা গেছে।

কমিটির আকার ছোট হচ্ছে জানিয়ে ছাত্রদলের সভাপতি খোকন বলেন, ‘১৭১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত ছিল।’ কমিটির আকার এর চেয়ে বড় হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

প্রকাশ :নভেম্বর ২, ২০১৯ ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ