২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৯:৪৩

বর্ষপূর্তিতে ৩ লক্ষ্য সামনে রেখে চাঙা হচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট

দেশজনতা অনলাইনঃ সরকারবিরোধী জোট—জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একবছর পূর্ণ হচ্ছে রবিবার (১৩ অক্টোবর)। এই বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে তিন লক্ষ্য নিয়ে চাঙা হচ্ছে জোটটি। লক্ষ্যগুলো হলো—সরকারবিরোধী দলগুলোকে নিয়ে ‘অর্থপূর্ণ’ আন্দোলন গড়ে তোলা, ‘বৃহত্তর কর্মসূচি’ নিয়ে রাজপথে নামা এবং জোটের পরিধি বাড়ানোর উদ্যোগ। সেই লক্ষ্যে জোটনেতারা কাজও করে যাচ্ছেন। তবে, জোটের কোনও কোনও নেতা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠে থাকাটা বড় চ্যালেঞ্জ। আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিএনপিকে বড় ‘ফ্যাক্টর’ হিসেবে দেখছেন তারা।জোট নেতারা বলছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ড. কামাল হোসেনকে সামনে রেখে গঠিত হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। জোটগতভাবে নির্বাচনেও অংশ নেয় জোটটি। কিন্তু নির্বাচনে বড় ধরনের ফল বিপর্যয়ের পর জোট নিয়ে বিএনপির মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। ফলে ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে যাওয়া বন্ধ করে দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। এরপর জোটের সিদ্ধান্ত অমান্য করে গণফোরামের থেকে নির্বাচিত সুলতান মোহাম্মদ মনসুর শপথ গ্রহণ ও তাকে জোট থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরবর্তী সময়ে দলটির আরেক সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানও শপথ নেন। এরপর কামাল হোসেনের নীরবতাকে ঘিরে শরিকদের মধ্যে রহস্যের সৃষ্টি হয়। সর্বশেষ দলীয় সিদ্ধান্তে বিএনপির এমপিদের শপথ নেওয়ার মধ্য দিয়ে ফ্রন্টের শরিকদের মধ্যে মনোমালিন্য বাড়তে থাকতে। এক পর্যায়ে কর্মসূচিহীন নিষ্ক্রিয় পড়ে জোট এবং বিভিন্ন অভিযোগে জোট ত্যাগ করে কাদের সিদ্দিকী। তবে গত ২৮ সেপ্টেম্বর বর্ষপূর্তি ও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থতিতে সামনে রেখে তৎপর হয় জোট। ওই ধারা অব্যাহত রাখতে কর্মসূচিও গ্রহণ করা হয়েছে। ডিসেম্বর বড় ধরনের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা সরকারবিরোধী এই জোটের।  তবে বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে আবারও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পরিকল্পনা চলছে জোটে।

এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘নির্বাচনের পর জোটের শরিকদের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছিল। বিশেষ করে, সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণের মধ্যে দিয়ে এই বিভেদ প্রকট আকার ধারণ করে। তবে, সেটা এখন অনেকটা কেটে গেছে। এখন আবারও জোটের কার্যক্রম ‍শুরু হয়েছে। বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ১৩ অক্টোবর আলোচনা সভা ও শোক র‌্যালি করছি আমরা।’

রব আরও বলেন, ‘আজও (১২ অক্টোবর) জোটের কার্যক্রমকে কীভাবে আরও গতিশীল করা যায়, তা নিয়ে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে—১৮ অক্টোবর বুয়েটের ছাত্র আবরার কবর জিয়ারত করা এবং ওই দিন পথ সভা করারও পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী ২২ অক্টোবর ঢাকায় নাগরিক শোকসভা করার।’

গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘আগামীতে সরকারবিরোধী দলগুলোকে নিয়ে আরও বৃহত্তর কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা রয়েছে ঐক্যফ্রন্টের। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। জোটের পরিধি বাড়ানোর চিন্তা রয়েছে।’

সরকার নিজেদের কর্মকাণ্ডের কারণে বেকায়দায় রয়েছে মন্তব্য করে সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘ইতোমধ্যে সরকারবিরোধী দলগুলো কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে। সবার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে। আশা করি, আগামী ডিসেম্বর জোটের বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি দেখতে পারবেন।’

ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বলছেন, যে লক্ষ্য নিয়ে ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়েছিল, মাঝে সেখানে থেকে নিজেদের মধ্যে সৃষ্ট বিভেদের কারণে অনেক দূরে চলে গেছেন তারা। এরফলে বিভিন্ন মহল থেকে জোটকে দুর্বল করার বিষয়ে নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে। এখন যেভাবে হোক জোট আবার রাজনৈতিক মাঠে সক্রিয় হয়েছে। এখন কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠে থাকাটাই বড় চ্যালেঞ্জ। আর সেই ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে বিএনপি। এ কারণে সাংগঠনিক শক্তির দিকে থেকে জোটের মধ্যে তারাই বড় দল।

এই প্রসঙ্গে জোটের শরিক দল নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমরা যে লক্ষ্যটা ঘোষণা করেছিলাম, সেই লড়াইয়ে আছি। এখন আবার শুরু করলাম। বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আলোচনা ও  র‌্যালি আছে। আরও কর্মসূচি দেবো, যেন সেই কর্মসূচি অর্থপূর্ণ হয়। এটাই এখন আমাদের মূল লক্ষ্য।’

জানতে চাইলেবিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বিএনপির কোনও দূরত্ব নেই। জোটের কার্যক্রম যথারীতি চলছে। সময়মতো যৌথ কর্মসূচি আসবে।’

প্রসঙ্গত, ১৩ অক্টোবর বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আলোচনা সভা ও শোকর‌্যালি করবে। এরপর আগামী ১৮ অক্টোবর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর শিক্ষার্থী আবরারে কবর জিয়ারত ও ২২ অক্টোবর নাগরিক শোকসভা করবে ঐক্যফ্রন্ট।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবে একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়। বিএনপির চেয়ারপাসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, নিরপেক্ষ নির্বাচনসহ ৭ দফা দাবি ও ১১টি লক্ষ্য নিয়ে এই জোট গঠিত হয়েছিল। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত এই ফ্রন্টের শরিক বিএনপি, গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। কিন্তু জোটের নিষ্ক্রয়তা অভিযোগে গত ৮ জুলাই বেরিয়ে যান  কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী।

প্রকাশ :অক্টোবর ১৩, ২০১৯ ৫:৪৪ অপরাহ্ণ