ভারতের সঙ্গে করা ‘দেশবিরোধী’ চুক্তি বাতিল ও আবরার হত্যার বিচারের দাবিতে সমাবেশটির আয়োজন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। সমাবেশের কারণে বিএনপি কার্যালয়ের সামনের রাস্তার বড় একটি অংশ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে রাস্তার একটি অংশ গাড়ি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। পুলিশের অনুমতি ছাড়াই বিএনপি এই সমাবেশের আয়োজন করে।
আবরার হত্যার মধ্য দিয়ে সরকার পতন আন্দোলনের শুরু হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি বলেন, ‘এখন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন সময়ের ব্যাপার। দেশের মানুষ কখনোই এই ফ্যাসিবাদী সরকারকে বরদাশত করতে পারে না।’
খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘আবরার রক্ত দিয়ে সরকার পতনের যে আন্দোলনের সূত্রপাত করে গেছেন, আমার বিশ্বাস, সারাদেশের ছাত্রসমাজ, যারা দেশপ্রেমিক ও গণতন্ত্রকামী, তাদের সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে সেই রক্তের প্রতিশোধ নেবে। তার রক্ত বৃথা যেতে দেবে না। কয়েকদিন আগে আমরা শহীদ জিহাদ দিবস পালন করেছি, তার রক্তে সেইদিন এরশাদ স্বৈরাচারের পতনের দিন শুরু হয়েছিল। আর আবরারের রক্তে এ সরকারের পতনের বীজ রোপণ করা হয়েছে। এই দেশে বেশিদিন ফ্যাসিবাদ টিকতে পারবে না।’
দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে বলে মন্তব্য করে মোশাররফ বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি না হলে দেশে কোনোদিন গণতন্ত্র মুক্ত হবে না।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় করা চুক্তিগুলোকে দেশবিরোধী চুক্তি বলে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘ফেনী নদী থেকে গত ১০ বছরে ভারত জোর করে ৭২ কিউসেক পানি নিয়ে যাচ্ছে। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফেনী নদী থেকে পানি দেওয়ার চুক্তি করে এসেছেন। কিন্তু ভারত কী পরিমাণে পানি নেবে, তা পর্যবেক্ষণের কোনও তথ্য চুক্তিতে নেই। ভারতকে পানি নেওয়ার অনুমতি দেওয়ার ফলে নদীর পাশের কৃষিকাজ ব্যাহত হবে এবং মুহুরী প্রজেক্ট পানির অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর প্রধানমন্ত্রী বলছেন, দেশের স্বার্থবিরোধী কিছু করেননি। এখানে আমাদের স্বার্থ কোথায়? সব স্বার্থ তো ভারতের।’
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্দর থেকে পণ্য দেরিতে খালাসের জন্য তাদের ক্ষতি হচ্ছে। সেখানে ভারতের পণ্য আমাদের বন্দরগুলো থেকে ছাড়া হলে আমাদের ব্যবসায়ীদের আরও ক্ষতি হবে। তাহলে ভারতকে পোর্ট ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে কীভাবে দেশের স্বার্থ রক্ষা হলো? আর একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের মধ্যে বিদেশিদের রাডার স্থাপিত হলে দেশের স্বাধীনতা থাকবে না। এখানে প্রধানমন্ত্রী কোন যুক্তিতে বলবেন, দেশের স্বার্থ রক্ষা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকার জন্য শেখ হাসিনা এসব দেশবিরোধী চুক্তি করেছেন। কিন্তু দেশের জনগণ দেশবিরোধী এসব চুক্তি মেনে নেবে না।’
বিএনপির এই সমাবেশে পুলিশের পক্ষ থেকে অনুমতি না নেওয়ার প্রসঙ্গে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘পুলিশের অনুমতির ওপর জনসভা করবো, এটা হতে পারে না। আমরা সমাবেশের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়েছি, তাদের সহযোগিতার জন্য। কিন্তু তারা রাজনৈতিক দলের সমাবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। এটা হতে পারে না। এজন্য ২ লাখ মা-বোন ইজ্জত দেয়নি। আর ৩০ লাখ মানুষও রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেনি।’
সমাবেশের অনুমতি না দেওয়া প্রসঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)-এর মতিঝিল জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মিশু বিশ্বাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পল্টনে বিএনপির কোনও সমাবেশ করার অনুমতি নেই। তাদের আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক কোনও অনুমতি দেওয়ার তথ্যও আমাদের কাছে নেই।’
সমাবেশে আসার সময় বিএনপির নেতাকর্মীদের আটক করা হয়েছে বলেও দলটির নেতারা অভিযোগ করেন। এ প্রসঙ্গে সমাবেশের সভাপতি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেন, ‘সমাবেশে আসার সময় কাউকে কাউকে আটক করা হয়েছে। সমাবেশ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের মুক্তি দিতে হবে। আর মুক্তি না দিলে পরবর্তী পরিস্থিতির জন্য আমরা দায়ী নই।’
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অধিকাংশ নেতা উপস্থিত ছিলেন না। দলটির ভাইস চেয়ারম্যান কাউকেও বক্তব্য দিতে দেখা যায়নি। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবুল খায়ের ভূঁইয়া, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ।