২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৯:৩২

‘রেণুকে ছেলেধরা বলে প্রথম সম্বোধন করেছিলেন রিয়া’

 দেশজনতা অনলাইন : রাজধানীর উত্তর বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিজের সন্তানের ভর্তির ব্যাপারে খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন তাসলিমা বেগম রেণু। স্কুলের প্রধান ফটকের কাছে কয়েকজন অভিভাবককে দেখতে পেয়ে কিভাবে সন্তানকে ভর্তি করানো যায়, তা জিজ্ঞেস করেন তিনি। উল্টো রেণুকে জিজ্ঞেস করা হয়, কোথায় থেকে এসেছে, বাসা কোথায়, কী পরিচয়? এসব কথার ফাঁকে সন্তানের ভর্তির বিষয়ে খোঁজ নিতে আসা রেণুকে ছেলেধরা বলে সম্বোধন করেন মোছাম্মৎ রিয়া বেগম ওরফে ময়না। তিনিই প্রথম রেণুকে ছেলেধরা সম্বোধন করেছিলেন বলে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে মামলার প্রধান আসামি মোহাম্মদ ইব্রাহিম ওরফে হৃদয় হোসেন মোল্লা (২০)।

এই সময়ের মধ্যে হাজারও লোকজন জড়ো হয় স্কুলের সামনে। পরিস্থিতি চলে যায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে। গেট থেকে ১০-১৫ জন স্কুলের ভেতরে প্রবেশ করে। এদের মধ্যে একজন স্কুলের পাশের রাস্তায় সবজি বিক্রেতা মোহাম্মদ ইব্রাহিম ওরফে হৃদয় হোসেন মোল্লা (২০)। টেনে হিঁচড়ে বের করে রাস্তায় আনা হয় রেণুকে। ছেলেধরা অভিযোগ তুলে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ২০ জুলাই সকালে এ ঘটনা ঘটে।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) রেণু হত্যা মামলায় প্রধান আসামি ইব্রাহিম ওরফে হৃদয় হোসেন মোল্লা ও অভিভাবক রিয়া আদালত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তাদের জবানবন্দি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাড্ডা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুর রাজ্জাক বলেন, দুই আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে আদালত তাদের কারাগারে পাঠিয়েছে।

২৩ জুলাই নারায়ণগঞ্জের ভুলতা এলাকা থেকে হৃদয়কে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। ডিবি সূত্রে জানা গেছে, হৃদয়ের মা-বাবা নেই। সে ওই এলাকার সবজি বিক্রেতা। ঘটনার দিন ওই স্কুলের পাশে সবজি বিক্রি করছিল। ছেলেধরা এসেছে শুনে অন্যদের সঙ্গে হৃদয়ও স্কুলের ভেতরে যায়। রেণুকে বাইরে নিয়ে আসে এবং গণপিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান রেণু।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডেমরা জোনাল টিমের সিনিয়র সহকারী কমিশনার নাজমুল হাসান ফিরোজ  বলেন, রেণু মারা যাওয়ার পর তার ছবি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। গ্রেফতার এড়াতে সে বাড্ডা এলাকা থেকে পালিয়ে যায়। আমরা বিভিন্নভাবে চেষ্টার পর নারায়ণগঞ্জের ভুলতা থেকে তাকে গ্রেফতার করি।’

হৃদয় বেশ কয়েকজনের কথা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বলেছিল, যাদের মধ্যে একজন ছিল অভিভাবক রিয়া। ২৫ জুলাই তাকে আটক করা হয়। এরপর রিমান্ডে থাকা হৃদয়ের মুখোমুখি করা হয় রিয়াকে। অভিভাবক রিয়া ঘটনার সময় ছিল বলে শনাক্ত করে হৃদয়। এর আগে ভিডিও ফুটেজ দেখে তাকে চিহ্নিত করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রিয়া হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করে।

বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম  বলেন, রিয়ার সন্তান ওই স্কুলের ক্লাস ওয়ানে পড়ে। বাড়ি গাজীপুরে, থাকতেন বাড্ডায়। সে আদালতে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে। আরও কয়েকজনকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে তাদেরও গ্রেফতার করা হবে।

উল্লেখ্য, গত শনিবার (২০ জুলাই) সকালে রাজধানীর উত্তর বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিজের সন্তানের ভর্তির ব্যাপারে খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন তাসলিমা বেগম রেণু। এ সময় ছেলেধরা সন্দেহে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে বিক্ষুব্ধ জনতা। ওইদিন সকাল পৌনে ৯টার দিকে উত্তর বাড্ডা কাঁচাবাজারের সড়কে এ ঘটনা ঘটে। রাতেই বাড্ডা থানায় অজ্ঞাত ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করেন নিহতের ভাগিনা সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটিু। হৃদয় এ মামলার প্রধান আসামি।

২৫ জুলাই মুরাদ মিয়া, মো. সোহেল রানা, মো. বিল্লাল, মো. আসাদুল ইসলাম ও মো. রাজু নামের পাঁচজনের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। গত ২২ জুলাই মো. শাহীন, মো. বাচ্চু মিয়া ও মো. বাপ্পি চার দিনের এবং গত ২৩ জুলাই মো. কামাল হোসেন ও আবুল কালাম আজাদের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ২২ জুলাই জাফর হোসেন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে কারাগারে রয়েছেন।

২৫ জুলাই উত্তর পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকা থেকে রিয়া খাতুনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর আগে ২৩ জুলাই নারায়ণগঞ্জের ভুলতা এলাকা থেকে হৃদয়কে গ্রেফতার করা হয়। এরপর হৃদয়ের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ডে থাকা অবস্থায় হৃদয় ও ২৫ জুলাই গ্রেফতার হওয়া রিয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার পর ২৬ জুলাই  তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।

প্রকাশ :জুলাই ২৭, ২০১৯ ১২:৪৪ অপরাহ্ণ