খেলা ডেস্ক
একটা মৃতপ্রায় ম্যাচকে নিজের ব্যাটের সঞ্জীবনী সুধা দিয়ে জাগিয়ে তোলার পরও তীরে এসে তরী ডোবালেন কার্লোস ব্রাথওয়েট। নিউজিল্যান্ডের কৃতিত্বকে কোনোরকম খাটো না করেও তাই বলতেই হয় ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাসে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ৫ রানের রুদ্ধশ্বাস জয় ছিনিয়ে নিলো কিউয়িরা। অন্যদিকে রাজকীয় শতরান সত্ত্বেও ‘ট্র্যাজিক হিরো’ হয়েই রয়ে গেলেন ব্রাথওয়েট।
২০১৬ টি২০ বিশ্বকাপ ফাইনালে ইডেন গার্ডেন্সে ম্যাচ জেতানো ১০ বলে ৩৪ রানের ইনিংস পাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে এসেছিল কার্লোস ব্রাথওয়েটকে। কিন্তু শনিবার শেষ অবধি ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়লে হয়তো আক্ষরিক অর্থে বীরের সম্মান অপেক্ষা করছিল বার্বাডোজের এই অল-রাউন্ডারের জন্য। কিন্তু জয় থেকে মাত্র ৬ রান দূরে দাঁড়িয়ে নিশমের বলে লং অনে বোল্টের হাতে ধরা পড়ে গেলেন ব্রাথওয়েট। মূহুর্তে অন্ধকার ঘনিয়ে এলো ক্যারিবিয়ান শিবিরে। নিজেকেই নিজে যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না ব্রাথওয়েট। ম্যাচ জিতেও তখন উচ্ছ্বাসে না মেতে ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানের দিকে তখন সহানুভুতির হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন ম্যাচের আরেক শতরানকারী কিউয়ি অধিনায়ক উইলিয়ামসন, জিমি নিশমরা।
২৯২ রানের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে খেলতে নেমে গেইলের উইকেট হারানোর পরই ম্যাচ থেকে হারিয়ে গিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২৪ ওভারে দু’বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের রান তখন মাত্র ১৫২। এরপর এভিন লুইস, কেমার রোচ, শেলডন কটরেলদের দিয়ে ব্রাথওয়েটের একক লড়াই এক কথায় বর্ণনাতীত। যা চলতি বিশ্বকাপে সবচেয়ে উত্তেজক ম্যাচ উপহার দিয়ে গেল ক্রিকেট অনুরাগীদের। একে একে উইকেট খোয়াতে থাকলেও একা কুম্ভে ব্রাথওয়েট তখন যেন শক্ত শেল হয়ে বিঁধছেন কিউয়িদের কাছে।
৪৫ তম ওভারে জয় থেকে ৪৭ রান দূরে দাঁড়িয়ে নবম উইকেটের পতন হয় ক্যারিবিয়ানদের। সেখান থেকে সমীকরণ বদলে ১২ বলে ৮ রানে নামিয়ে আনেন ব্রাথওয়েট। ওসানে টমাসকে সঙ্গে নিয়ে ৮০ বলে শতরান পূর্ণ করেন এই পাওয়ার হিটার। ক্যারিবিয়ান অল-রাউন্ডারের ইনিংসে এদিন ছিল ৯টি চার ও ৫টি বিশাল ছক্কা। ৭ বলে জয়ের জন্য যখন ৬ রান দূরে ক্যারিবিয়ানরা, ঠিক তখনই ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বিপদ দেকে আনলেন ব্রাথওয়েট নিজেই। নিজের ব্যাটে গড়ে তোলা জয়ের ভিত নিজের ব্যাটেই এক লহমায় ভেঙে দিলেন তিনি। স্মরণীয় জয় থেকে ৫ রান দূরে থমকে যেতে হল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। একইসঙ্গে নক-আউটের ওঠার যেটুকু আশা জিইয়ে ছিল, তা ওল্ড ট্র্যাফোর্ডেই রেখে এল দু’বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।
টস জিতে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে এদিন প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক জেসন হোল্ডার। উইলিয়ামসনের অধিনায়কোচিত ১৪৮ ও ডেপুটি রস টেলরের ৬৯ রানে ভর করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৯২ রানের টার্গেট ছুঁড়ে দেয় কিউয়িরা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ২০ রানে ২ উইকেট হারালেও তৃতীয় উইকেটে গেইল-হেটমেয়ারের ১২২ রানে জুটি ম্যাচে ফেরায় ক্যারিবিয়ানদের। ৮টি চার ও ৬টি ছক্কায় গেইল করেন ৮৪ বলে ৮৭। হেটমেয়ারের ব্যাট থেকে আসে মূল্যবান ৫৪ রান। কিন্তু ফের ১০ রানের মধ্যে ৩ উইকেট খুঁইয়ে ফের বিপাকে পড়ে যায় ভিভ রিচার্ডস, ক্লাইভ লয়েডের দেশ। সেখান থেকে ম্যাচ জেতাতে না পারলেও টেল এন্ডারদের নিয়ে ব্রাথওয়েটের একক লড়াই বহুদিন মনে রাখবেন অনুরাগীরা।