খেলা ডেস্ক
প্রথম লেগে অন্তত দুটি নিশ্চিত গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেছিলেন, হেরে গেলে হয়ত সাদিও মানেকেই দুষতেন অনেকে। অ্যানফিল্ডে ৮৫ মিনিটে তার হেড ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ম্যানুয়েল নয়্যার। অ্যানফিল্ডের মত আজও ম্যাচের শেষদিকে সুযোগ পেলেন মানে। এবার ঠিকই জাল খুঁজে পেলেন তিনি। ভূপাতিত হলেন অসহায় নয়্যার। অবশ্য এর আগেই নিশ্চিত হয়ে গেছে দু’দলের ভাগ্য। প্রায় পুরো ম্যাচই মিউনিখের টিপটিপ বৃষ্টি এবার নামল আকাশ ভেঙে; বায়ার্ন সমর্থকদের দুঃখ, হতাশার প্রতিচ্ছবি হয়ে থেকেছে সেটা। প্রথম লেগের ‘জিরো’ মানের ‘হিরো’ হওয়ার দিনে শেষ আটে পৌঁছে গেছে লিভারপুল। বায়ার্ন মিউনিখকে তাদেরই মাঠে ৩-১ গোলে হারিয়েছে ইয়ুর্গেন ক্লপের দল।
মানের জোড়া গোলে লিভারপুল জিতলেও আরেকজনের কথা না বললেই নয়। পুরো মৌসুমে মোহামেদ সালাহ, মানের পর খুব সম্ভবত লিভারপুলের সেরা ফুটবলার তিনি। ভার্জিল ভ্যান ডাইক আজ জানান দিলেন, কেন তাকে ইউরোপের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার ভাবা হচ্ছে এখন। প্রথম লেগ মিস করেছিলেন নিষেধাজ্ঞার কারণে, দ্বিতীয় লেগে ফিরলেন স্বরূপেই। বায়ার্নের আক্রমণ রুখে ডিফেন্সচেরা লম্বা পাসে আক্রমণে সাহায্য করেছেন মানে, সালাহদের। নিজে গোল করেছেন, করিয়েছেন মানেকে দিয়েও। লিভারপুলের ‘লেটার মার্কস’ পাওয়া ম্যাচে নিজের সামর্থ্যের জানান আবারও দিলেন ডাচ ডিফেন্ডার।
অ্যানফিল্ডে প্রথম লেগের পুরোটা সময় গোল করার চেয়ে গোল না খাওয়ার দিকেই যেন বেশি মনোযোগী ছিল লিভারপুল এবং বায়ার্ন। আলিয়াঞ্জ অ্যারেনাতে শুরুটা হয়েছিল প্রথম লেগের মতই। মাঝমাঠের লড়াইটা জমে উঠেছিল দারুণভাবে, কিন্তু গোল করার তাগিদের দেখা মিলছিল না কোনও দলের মাঝেই। গোলের প্রথম সুযোগের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে ২৫ মিনিট। ডিবক্সের বাইরে থেকে রবার্তো ফিরমিনোর শট চলে যায় গোলের বাইরে দিয়ে। তবে এজন্য খুব একটা ভুগতে হয়নি ক্লপের দলকে।
লম্বা পাসে লিভারপুলের দলে ভ্যান ডাইকের জুড়ি মেলা ভার। আবারও সেই লম্বা পাসে জাদু দেখালেন তিনি। ২৭ মিনিটে রবার্তো লেভানডফস্কির পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে পাস বাড়ালেন মানের দিকে। বল নিয়ন্ত্রণে এনে পাস দারুণ মুভমেন্টে ছিটকে ফেললেন নয়্যার এবং রাফিনহাকে। ফাঁকা পোস্টে বাঁ-পায়ের শটে দলকে লিড এবং ‘অ্যাওয়ে’ গোল এনে দেন মানে। তবে উদযাপনটা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি ‘অল রেড’দের।
৩৭ মিনিটে অ্যান্ডি রবার্টসনের ভুলে লিভারপুল ডিবক্সের ডানপ্রান্তে বল পেয়ে যান সার্জ গ্ন্যাব্রি। জার্মান ফরোয়ার্ডের ক্রস ফেরাতে গিয়ে বল নিজ জালে ঠেলে দেন জোয়েল মাতিপ। অবশ্য মাতিপ ক্লিয়ার না করলে ফাঁকা পোস্টে হয়ত গোল শোধ করতেন লেভানডফস্কি নিজেই।
প্রথমার্ধের শেষদিকে সমতায় ফিরলেও দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে আবারও খেই হারিয়ে ফেলে বায়ার্ন। ম্যাচে ফিরতে থাকে লিভারপুল। সালাহ, মানেদের গতির বিপক্ষে হিমশিমই খেতে হয়েছে রাফিনহাদের। ৫৫ মিনিটে সালাহর শট নয়্যার ফিরিয়ে না দিলে হয়ত তখনই আবার লিড নিতে পারত লিভারপুল। খেই হারিয়ে ফেললেও আক্রমণে ঠিকই সুযোগ পেয়েছিল বায়ার্ন।
৬১ মিনিটে গ্ন্যাব্রির ক্রসে ডিবক্সে পা-ই ছোঁয়াতে পারেননি লেভানডফস্কি। সুযোগ হাতছাড়া করার চড়া মাশুলই দিতে হল কোভাচের দলকে। ৬৯ মিনিটে জেমস মিলনারের কর্নার থেকে হেডে লিভারপুলের লিড পুনরোদ্ধার করেন ভ্যান ডাইক। শেষ ২০ মিনিটে বায়ার্নের দরকার ছিল ৩ গোল।
৩ গোল তো দূরে থাক, লিভারপুল গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকারকে আর পরীক্ষায়ই ফেলতে পারেনি বায়ার্নের নির্বিষ আক্রমণভাগ। উল্টো ৭৫ মিনিটেই বায়ার্নের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিতে পারত লিভারপুল। বায়ার্নের দুজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ডিবক্সে ঢুকে পড়েছিলেন সালাহ। ফাঁকায় দাঁড়ানো মানেকে পাস না বাড়িয়ে শট নিতে গিয়েছিলেন, কিন্তু দারুণ ট্যাকেলে সালাহকে গোলবঞ্চিত করেছেন নিকোলাস সুলে। অবশ্য স্বার্থপরতার শাপমোচনটা ঠিকই করেছেন সালাহ।
৮৫ মিনিটে সালাহর দুর্দান্ত ক্রসে হেড করে ব্যবধান ৩-১ করেছেন মানে। জার্মান চ্যাম্পিয়ন বধের দিনের শেষটা অবশ্য ঠিক সুখকর হয়নি লিভারপুলের। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে হলুদ কার্ড দেখায় কোয়ার্টারের প্রথম লেগ মিস করবেন রবার্টসন। তবে সে চিন্তা হয়ত আপাতত গ্রাস করবে না লিভারপুলকে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, টটেনহাম হটস্পার, ম্যানচেস্টার সিটির সাথে আগামীকাল শুক্রবার শেষ আটের ড্রয়ে থাকবে লিভারপুলের নামটাও। ইংলিশ ফুটবলের সুদিন যেন ফিরতে শুরু করেছে ইউরোপে। ২০০৮-০৯ মৌসুমের পর এবারই প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ আটে থাকছে ইংল্যান্ডের চার দল।