২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৯:০২

দুই গোল, দুই অ্যাসিস্টে বার্সাকে নিয়ে ছুটলেন মেসি

খেলা ডেস্ক

দুই গোলে এগিয়ে থাকা ম্যাচেও একটা সময় ন্যু ক্যাম্পে অস্বস্তি ভর করেছিল। এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগ যেমন অনিশ্চয়তার খেলায় পরিণত হয়েছে তাতে সেটাও যৌক্তিকও ছিল। লিঁও এক গোল শোধ করে চাপে ফেলে দিয়েছিল বার্সেলোনাকে। গতরাতে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর হ্যাটট্রিকের পর নজর ছিল আরেক সেরার ওপর। সেই লিওনেল মেসিকেই পরে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে হয়েছিল ন্যু ক্যাম্পে, যেমনটা তিনি এনেছিলেন প্রথমার্ধেও। বার্সা অধিনায়ক করেছেন জোড়া গোল, আরও দুই গোল করিয়েছেন সতীর্থদের দিয়ে। প্রথম লেগের গোলশূন্য থাকার ঝালটা বার্সা মিটিয়েছে ঘরের মাঠে। ৫-১ গোলে লিঁওকে উড়িয়ে দিয়ে টানা ১২ বারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে এর্নেস্তো ভালভার্দের দল।

ন্যু ক্যাম্পে বার্সাকে শুরুতে এগিয়ে নেওয়ার কাজটা করেছিলেন মেসিই। ১৮ মিনিটে পাওয়া পেনাল্টি থেকে পানেনকা শটে গোল করে দলকে এগিয়ে দিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। যদিও পেনাল্টির সিদ্ধান্তটা আরও একবার বিতর্ক উস্কে দিয়েছে ভিএআর নিয়ে। লুইস সুয়ারেজের কাছ থেকে বল দখলের চেষ্টা করছিলেন লিঁও ডিফেন্ডার জেসন ডেনায়ের। সুয়ারেজ এরপর পেনাল্টি আদায়ের কাজটা ভালোমতোই করেছেন, লুটিয়ে পড়েছেন মাটিতে। রেফারিও পরে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন। কিন্তু ভিএআরও সেই সিদ্ধান্তটাই বহাল রাখে ন্যু ক্যাম্পে।

পেনাল্টি আদায়ের পর সুয়ারেজই ছিলেন প্রথমার্ধে বার্সার সেরা খেলোয়াড়। লিঁওর রক্ষণকে একাই তটস্থ করে রেখেছিলেন সুয়ারেজ। ৩১ মিনিটে তিনি হয়ে গেলেন আরও নিঃস্বার্থ, ডিবক্সের বাইরে থেকে লিঁওর দুই ফুটবলারকে ফাঁকি দিয়ে একাই গোল করতে পারতেন। কিন্তু সেটা না করে স্কয়ার করলেন ফিলিপ কৌতিনহোর কাছে। ফাঁকা বারে গোল করে এরপর সুয়ারেজের দিকেই ছুটেছেন কৌতিনহো। দুঃসময়ে গোলটা দরকারই ছিল তার, সুয়ারেজের উপহার পেয়ে তাই কৃতজ্ঞতাও স্বীকার করলেন। প্রথমার্ধে পরে একবার নিজেও গোলে শট করেছিলেন সুয়ারেজ, কিন্তু গোলরক্ষককে হারাতে পারলেও লক্ষ্যে আর রাখতে পারেননি শট। বার্সার আক্রমণভাগের সবাই গোল পেলেও তাই সুয়ারেজের আর স্কোরশিটে নাম লেখানো হয়নি।

লিঁও অবশ্য তারও আগেই ঝামেলায় পড়ে গিয়েছিল। নিয়মিত গোলরক্ষক অ্যান্থনি লোপেজ আঘাত পেয়েছিলেন মাথায়। সেটা নিয়েই খেলছিলেন। দুই গোলে পিছিয়ে পড়ার পর আর ম্যানেজার ব্রুনো জেনেসিও ঝুঁকি নেননি। লোপেজের অনিচ্ছার বিরুদ্ধেই তাকে বদলি করে ম্যাথু জর্জিলিনকে নামান তিনি।

দ্বিতীয়ার্ধেও হেসে খেলেই জয়ের পথে এগুচ্ছিল বার্সা। মিডফিল্ডে আর্তুর ছিলেন নিখুঁত, ৯৮ শতাংশ পাসই দিয়েছেন নির্ভুল। সাধারণত মিডফিল্ড ছেড়ে আক্রমণে ওঠেন না তিনি। দ্বিতীয়ার্ধে তিনিই চলে গিয়েছিলেন গোলের সামনে। সেখান থেকেও মেসিকে পাস বাড়িয়েছিলেন ডানদিকে, মেসির চিপ পরে গোললাইন থেকে ক্লিয়ার হলে আর অ্যাসিস্টটাও পাওয়া হয়নি ব্রাজিলিয়ানের।

ভালভার্দের দলের সবকিছু যখন ঠিকঠাক চলছিল তখনই বাগড়া বাঁধিয়ে বসে একটি কর্নার। প্রথমবারে বল ক্লিয়ার করতে পারেনি বার্সার ডিফেন্ডাররা, দ্বিতীয় সুযোগে এরপর সিক্স ইয়ার্ড বক্সের ভেতর বল পেয়ে যান লুকাস তোসার্ত। প্রথমে মাথা দিয়ে বল নিয়ন্ত্রণ করে এরপর সোজাসুজি শটে মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগানকে পরাস্ত করে লিঁওকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন তিনি। এরপর আর একটি গোল দরকার ছিল লিঁওর কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে।

নাবিল ফেকির, মেম্ফিস ডিপাইরা সুযোগ বুঝে এরপরই খোলস ছেড়ে বের হন। পুরো ম্যাচে তেমন একটা সুবিধা করতে না পারলেও তখন লিঁওর আক্রমণেই ধার বাড়ছিল। বেশ কয়েকবার বিপদেও পড়ে বার্সার রক্ষণ তাতে। সময়মতো এরপর সঠিক সিদ্ধান্তটাই নিয়েছেন ভালভার্দে। উসমান ডেম্বেলেকে নামিয়ে উল্টো লিঁওকেই নিজেদের অর্ধে ফেরত পাঠিয়েছেন তিনি।

লিঁওর ম্যাচে ফেরার আশা শেষ হয় অবশ্য ‘লিওর’ গোলেই। দ্বিতীয়ার্ধে এর আগেও দুইবার ভালো জায়গা থেকে সুযোগ হাতছাড়া করেছিলেন মেসি। ৭৮ মিনিটে আর করলেন না। ডিবক্সের ভেতর ঢুকে দুইজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে, গোলরক্ষককেও হার মানান মেসি। মেসির দুর্দান্ত ওই গোলে বিশ্বাসটাও ফিরে আসে ন্যু ক্যাম্পে।

এরপর গোলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠা লিঁওকে কাউন্টার অ্যাটাকে আরও দুইবার শাস্তি দেয় বার্সা। দুইবারই মেসি করেন অ্যাসিস্ট। প্রথমবার জেরার্ড পিকেকে ফারপোস্টে ক্রস করেছিলেন ডানদিক থেকে। পিকে স্লাইড মেরে করেছেন চতুর্থ গোল। ৮৬ মিনিটে ডেম্বেলেও পরে যোগ দিয়েছেন তার সঙ্গে। ফ্রেঞ্চ ফরোয়ার্ডকে অবশ্য আরও খাটতে হয়েছে। ডান পায়ের নিখুঁত ফিনিশে গোল করেছেন তিনি।

ন্যু ক্যাম্পে এই নিয়ে টানা ৩০ ম্যাচ অপরাজিতও থাকল বার্সা। তাতে চ্যাম্পিয়নস লিগে ঘরের মাঠে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ডটাও হয়ে গেছে তাদের।

প্রকাশ :মার্চ ১৪, ২০১৯ ১০:০৮ অপরাহ্ণ