ধর্ম ডেস্ক:
আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। আর এ নামাজ নির্ধারিত সময়ে আদায় করাও ফরজ। প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাজের জন্যই নির্ধারণ করা আছে। ওয়াক্ত বা সময় চলে গেলে সে নামাজের কাজা আদায় করা যায়। নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
‘নিশ্চয় নামাজকে ঈমানদারের জন্য নির্ধারিত সময়ে (আদায় করা) আবশ্যক কর্তব্য করা হয়েছে।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১০৩)
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানুষকে ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নামাজ আদায়ের তাগিদ দিয়েছেন। তাই কোনো শরয়ি প্রয়োজন ছাড়া এক ওয়াক্তের নামাজ অন্য ওয়াক্তে পড়া শুদ্ধ নয়।
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায়কে সবচেয়ে বেশি ফজিলতময়। হাদিসে এসেছে-
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম; কোন আমলটি সবচেয়ে বেশি ফজিলতময়? তিনি বলেন, ‘নামাজকে তার সময় মতো (নির্ধারিত সময়ে) আদায় করা।’ (বুখারি ও মুসলিম)
যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নির্ধারিত ওয়াক্তে নামাজ ছেড়ে দেয় তথা আদায় না করে তবে সে কুফরি করলো। ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ছেড়ে দেয়া কবিরা গোনাহ। নামাজ ছেড়ে দেয়া সম্পর্কে অনেক সতর্কতা এসেছে। যার কয়েকটি তুলে ধরা হলো-
– হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি- মানুষের এবং শিরক ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হলো নামাজ পরিহার করা।’ (মুসলিম)
– হজরত বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেছেন, আমাদের এবং মুনাফিকদের মধ্যে পার্থক্য হলো নামাজের অঙ্গীকার। যে নামাজ ছেড়ে দিল সে কাফের হয়ে গেল।’ (তিরমিজি)
বিখ্যাত তাবেয়ি হজরত শফিক বিন আব্দুল্লাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাদের নামাজ ছাড়া অন্য কোনো আমল পরিহারকে কুফরি মনে করতেন না।’ (তিরমিজি)
সুতরাং কোনো কারণে কেউ নির্ধারিত সময়ে নামাজ পড়তে না পারলে পরবর্তী সময়ে তা আদায় করার হুকুম হলো-
> ফরজ নামাজের কাজা আদায় করা ফরজ।
> ওয়াজিব নামাজের (বিতরসহ) কাজা আদায় করা ওয়াজিব।
> কোনো কারণে কেউ নির্ধারিত সময়ে কোনো নামাজ আদায় করার মানত করলে তা যদি যথাসময়ে আদায় করতে না পারে তবে তা পরে আদায় করা ওয়াজিব।
> কোনো ব্যক্তি নফল নামাজ পড়া শুরু করলে সে নামাজ যদি কোনো কারণে বাতিল হয়ে যায় কিংবা ছেড়ে দেয় তবে সে নফল নামাজ পুনরায় আদায় করা ওয়াজিব। যদি ওই সময় এ নফল নামাজ আদায় করতে না পারে তবে তা পরে কাজা আদায় করাও ওয়াজিব।
> সুন্নাতে মুয়াক্কাদা (ফজর ও জোহরের আগে যথাক্রমে দুই ও চার রাকাআত নামাজ) এবং নফল নামাজের কাজা নেই। তবে ফজর নামাজের সুন্নাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হাদিসে ফজরের সুন্নাত আদায়ের ব্যাপারে বেশি জোর দেয়া হয়েছে। তাই ফজরের সুন্নাত কাজা হলে জোহরের নামাজের আগেই তা কাজা আদায় করা উত্তম। যদি জোহরের সময় অতিবাহিত হয়ে যায় তাহলে ফজরের সুন্নাত কাজা পড়তে হবে না।
> জোহরের ফরজের আগের চার রাকাআত সুন্নাত কোনো কারণবশতঃ ফরজ নামাজ পড়ার আগে আদায় করা না হয় তবে ফরজের পর পড়ে নিতে হবে। আর জোহরের ওয়াক্ত শেষ হয়ে গেলে তা আর পড়ার দরকার নেই।
সুতরাং কেউ যদি নির্ধারিত সময়ে নির্ধারিত ফরজ এবং ওয়াজিব কিংবা মান্নতের নামাজ আদায় করতে না পারে তবে দেরি না করে তা পরবর্তীতে আদায় করে নেয়া জরুরি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নির্ধারিত সময়ে ফরজ, ওয়াজিব ও মান্নতের নামাজগুলো যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। নামাজ না পড়ার কুফরি থেকে হেফাজত করুন। আমিন।