২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৮:২২

জিসিসি নির্বাচন: আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ বিএনপির

নিজস্ব প্রতিবেদক:

গাজীপুর সিটি নির্বাচনের (জিসিসি) আনুষ্ঠানিক প্রচার প্রচারণা আরও এক মাস পর (১৮ জুন)থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও প্রার্থীরা বসে নেই। প্রার্থীদের পক্ষে স্থানীয় সংসদ সদস্যরাসহ উভয় দলের বেশ কয়েক জন কেন্দ্রীয় নেতা প্রায় প্রতিদিনই নানা কৌশলে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিচ্ছেন। তারা ভোটারদের সঙ্গে কথা বলছেন এবং ভোট ও দোয়া প্রার্থনা করছেন।

তবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী (ধানের শীষ) হাসান উদ্দিন সরকার আবারও মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন। ইফতার মাহফিলের নামে তারা নির্বাচনী সভা করে নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে বেড়ান বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মূল লড়াই হবে হেভিওয়েট দুই প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট সমর্থিত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম (নৌকা) ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের (ধানের শীষ) মধ্যে। সবার দৃষ্টিই এখন দুই প্রার্থী ও তাদের নির্বাচনী কার্যক্রমের দিকে।

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিজয়ের পর এবার গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও বিজয়ী হতে চায় আওয়ামী লীগ। হাই কমান্ডের নির্দেশে গাজীপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা মেয়র পদে দলের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচার চালাতে মাঠে নেমেছেন। প্রতি দিনই তারা দলীয় প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় সভা ও গণসংযোগ করছেন।

সিটি করপোরেশনের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ভোটারদের বাড়ি,অফিস ও কল কারখানায় ছুটে যাচ্ছেন। নানা কৌশলে তারা নির্বাচনী প্রচারণায় পুরো এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। গত ২০মে টঙ্গীতে স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেলের বাসায় আওয়ামী লীগের প্রায় ডজন খানেক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে গাজীপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বৈঠকের পর আওয়ামী লীগ পূর্ণউদ্দামে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে।

আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদের প্রার্থী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম বৃহস্পতিবার মহানগরের ১৮, ২৬ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত পৃথক তিনটি আলোচনা সভায় অংশ নেন। ইফতার পূর্ব এসব আলোচনা সভায় তিনি উপস্থিত মুসল্লিদের কাছে দোয়া ও সমর্থন প্রার্থণা করেন। বিকেলে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের নগরপাড়ায় এলাকার সাগর সৈকত কনভেনশন সেন্টার হলে আয়োজিত আলোচনা সভা, ইফতার ও দোয়া মাহফিলে অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম মোজাম্মেল হক।

মাহফিলে আলোচনাকালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন,‘তরুণ বয়সেই ইবাদত ও সেবা করার উত্তম সময়। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমকে একজন যোগ্য এবং কর্মঠ নগর সেবক হিসেবে নগরবাসী সব সময় কাছে পাবেন। তাই নির্বাচনে আপনাদের সেবক হিসাবে জাহাঙ্গীরকে নির্বাচিত করার আহ্বান জানাচ্ছি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর সোসাইটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ।

একইদিন গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল মহানগরের ২৬ এবং ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের উনিশে পার্ক সেন্টার ও লক্ষীপুরা কমিশনার কার্যালয়ের পাশে পৃথক দুটি আলোচনাসভা এবং দোয়া ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন। এসময় তিনি বলেন, মাননীয় নেতৃত্বে গাজীপুর ও টঙ্গীর প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে।

ঢাকা-গাজীপুর বিআরটিএ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এখন প্রয়োজন পরিকল্পিত নগরায়ণ। আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমই পারবেন কেন্দ্রীয় সরকারের সহযোগীতায় গাজীপুরকে একটি পরিকল্পিত আধুনিক নগর হিসেবে গড়ে তুলতে। এজন্য আগামী ২৬ জুন নির্বাচনে সকলের স্বতঃস্ফুর্ত ও শান্তিপূর্ণ অংশগ্রহণের মাধ্যমে জাহাঙ্গীরকে জয়যুক্ত করার আহ্বান জানাচ্ছি। এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কাজী আলিম উদ্দিন বুদ্দিন প্রমুখ।

অপরদিকে, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট সমর্থিত মেয়র প্রার্থী (ধানের শীষ) হাসান উদ্দিন সরকার বৃহস্পতিবার টঙ্গীতে নিজের বাসায় দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নির্বাচনী কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন। এসময় বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের আচরণবিধি লঙ্ঘন করে নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে ইফতার মাহফিলের নামে নির্বাচনী সভা করার অভিযোগ করে বলেন,‘নির্বাচন কমিশনে একের পর এক অভিযোগ করেও কোনও কাজ হচ্ছে না।

গাজীপুর সিটিতে নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তাদের কোনও কার্যক্রমও চোখে পড়ছে না। আমরা আচরণবিধি মেনে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করছি। অপরদিকে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী আচরণবিধির কোনও তোয়াক্কা করছে না। সরকারি সুযোগ সুবিধা নিয়ে মন্ত্রী-এমপিরা প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে রয়েছেন। অথচ আমাদের সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।

হাসান উদ্দিন সরকার আরও বলেন,‘নির্বাচনে ধানের শীষের পক্ষে ব্যাপক গণজোয়ার দেখে একটি মহল শুরু থেকেই নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চালিয়ে আসছে। উচ্চ আদালতের মাধ্যমে আমি জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার পর আমার বিরুদ্ধেই নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। স্বার্থান্বেষী মহল জনমতকে আমার বিপক্ষে প্রভাবিত করতে পরিকল্পিতভাবে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপপ্রচারের মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে।

তিনি আরও বলেন, আমাকে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে ও চরিত্র হননের জন্য এবং নির্বাচনে জনমতকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে ওই মহলটি এখন উঠে পড়ে লেগেছে। তারা তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন লিংকের মাধ্যমে আমার ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিষয়ে বিভিন্ন ধরণের অপপ্রচার ও গুজব ছড়াচ্ছে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন, কদর্য ও অত্যন্ত মানহানিকর।’ এ ব্যাপারে তিনি সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণসহ আবারও আইনের আশ্রয় নিবেন বলে জানান।

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য অপপ্রচার সেল চালু করেছে। ওই সেল থেকে বিভিন্ন ভুয়া আইডি ব্যবহার করে ‘হাসান সরকার ভণ্ড দেওয়ান বাগীর মুরিদ, ‘জাহাঙ্গীরকে হারাতে মহাসচিবের কাছে ১০ কোটি টাকা চেয়েছেন হাসান সরকার’,‘হাসান সরকার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন’,  ‘হাসানকে হারাতে মান্নান-সানাউল্লাহ ঐক্যমত’সহ নানাভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

তিনি শুক্রবার বিকেল ৪টায় টঙ্গীর মুদাফায় নিজের শিক্ষাগুরু বাংলাদেশের প্রথম সংসদ সদস্য মরহুম আব্দুল হাকিম মাস্টারের সহধর্মিনী নূরের নেছার (১০০) জানাজায় শরীক হন। পরে বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার টঙ্গীর বড় দেওড়া এলাকায় আহসান উল্লাহ সরকার ইসলামিক ফাউন্ডেশন কমপ্লেক্সে এতিমখানায় এতিমছাত্রদের সঙ্গে ইফতার করেন।

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি

প্রকাশ :মে ২৬, ২০১৮ ১২:৫৪ অপরাহ্ণ