আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
সৌদি আরবে কট্টর মতাদর্শের দিন শেষ হচ্ছে। এবার সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হল- আধুনিক সমাজ গঠনের লক্ষ্যে নারী-পুরুষের মেলামেশায় বদল আনতে। এ ব্যাপারে একগুচ্ছ প্রস্তাব আনা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, দীর্ঘ ৩৫ বছরের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে বৈধ ঘোষণা করা হয়েছিল সিনেমাকে। ফুটবল মাঠে দেখা মিলছে মেয়েদের। গাড়ি চালানোয় নারীদের ওপরে নিষেধাজ্ঞা তুলে দেয়া হয়েছে। খবর আনন্দবাজার।
সম্প্রতি সাংবাদিক বৈঠক ডেকে ২৩৬ পাতার একটি বিবৃতি ঘোষণা করেছে সৌদি সরকার। তাতে বলা হয়েছে, সামাজিক উন্নয়নের স্বার্থে বেশ কিছু কট্টর নিয়মকানুন লঘু করার কথা ভাবছে সৌদি সরকার। কারণ হিসেবে বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, দ্রুত এই বদলের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, দুটি কট্টর ধর্মাচারেও পরিবর্তনের কথা উঠেছিল। আর তাতে যে ধর্মপুলিশদের কোপে পড়তে হতে পারে প্রশাসনকে, সেই আশঙ্কায় বৈঠকে ওই বদলের সম্পর্কে কিছু ঘোষণা করা হয়নি। শুধু জানানো হয়েছিল, তা ১৫৬ নম্বর পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে।
তবে পরে যখন বিবৃতিটি অনলাইনেও পোস্ট করা হয়, তাতে ওই দুটি অংশ রাখা হয়নি। কোনো সরকারি কর্তা অবশ্য এ নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম থেকে জানা যায়, মূলত সামাজিক উন্নয়নে নারী-পুরুষের মেলামেশার বিষয়ে জোর দেয়া হয়েছে বিবৃতিতে। দিনে পাঁচবার নামাজ পড়ার সময়ে দোকানপাট, ক্যাফে, রেস্তোরাঁ- এমনকি ওষুধের দোকানও বন্ধ থাকে সৌদিতে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এবার থেকে কেউ ওই সময়ে দোকান খোলা রাখলে তা আর ‘অবৈধ’ হিসেবে গণ্য করা হবে না। এতদিন মেয়েরা কোনো খেলায় অংশ নিলেও তা লোকচক্ষুর আড়ালে আলাদা করে আয়োজন করা হতো। এবার থেকে প্রকাশ্যে মেয়েদের খেলার আয়োজন করার কথা বলা হচ্ছে।
সৌদি আরবে পরিবর্তনের জোয়ার এসেছে ২০১৫ সাল থেকেই। ওই বছরে ক্ষমতায় আসেন রাজা সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ। নতুন যুগের সূচনা হয় দেশের রাজনীতিতে। এর পর যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের হাত ধরেই আরও বদলাতে শুরু করেছে সৌদি আরব। সম্প্রতি একটি বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ৩২ বছরের সালমান মনে করিয়ে দিয়েছেন, ১৯৭৯ সালের আগে সৌদি আরব এ রকম ছিল না। ওর পরেই দেশটি জঙ্গিদের হাতে পড়ে আমূল বদলে যায়। সৌদির পুরনো মূলগত ভিত্তিতেই ফিরতে চান সালমান।
ধর্মপুলিশদের ক্ষমতা নাশ করতে ওঠেপড়ে নেমেছেন তিনি। একটা সময়ে চাইলেই কাউকে গ্রেফতার করতে পারতেন ধর্মগুরুরা। প্রথমেই সে ক্ষমতা কেড়ে নেন এ দুই রাজা। রীতি ভেঙে প্রথম সংগীত সম্মেলন হয় সৌদি আরবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কট্টর মতাদর্শ ছড়ানোর বিষয়টিও নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলেন সালমান। নারী অধিকারের দিকেও নজর দেয়া হয়।