নিজস্ব প্রতিবেদক:
ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গণপরিবহনে চালানোর অভিযোগে হাতেনাতে আটক ১০ জনকে এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আটকদের মধ্যে সাতজন বাস চালক, দুইজন লেগুনা চালাচ্ছিলেন আর একজন অটোরিকশায় যাত্রী বহন করছিলেন।
ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া চালক ধরতে আর ফিটনেসহীন বাসের বিরুদ্ধে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে এই সাজা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপি এবং সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ।
মিরপুর ১ ও ২ নম্বর, কল্যাণপুর, শ্যামলী, মানিকমিয়া এভিউনিউয়ে নিয়মিত এই অভিযান চালায় বিআরটিএ এবং ডিএমপির ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগ। এর মধ্যে লাইসেন্সহীন সব চালকই ধরা পড়েন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে।
আটক চালকদের মধ্যে অটোরিকশাচালক ছাড়া সবাই অপ্রাপ্তবয়স্ক বা তাদের বয়স ১৮ এর নীচে বলে ধারণা করছে পুলিশ। তবে আদালতের সামনে আনার পর সবাই তাদের বয়স দাবি করেছ ২০। এটি পরিবহন মালিকরা শিখিয়ে দিয়েছে বলেই ধারণা পুলিশের।
আটক চালকদেরকে সেখানকার পুলিশ বক্সে নেয়া হলে একজন পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তবে পুলিশ ধাওয়া করে তাকে ধরে ফেলে।
বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। বিশেষ করে ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া যেসব যানবাহন রাস্তায় চলবে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।’
অভিযানে বাস, ট্রাক ও লেগুনার ছাড়াও বিভিন্ন যানবাহনে ২৪ টি মামলা দেয়া হয়। এছাড়া নগদ ৫৩ হাজার টাকা জরিমানা, দুইটি গাড়ি আটকও করা হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগের সহকারী উপকমিশনার আবু তোরাব মো. শামসুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আজ সকাল থেকে আমাদের এই যৌথ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে, চলবে বিকাল পর্যন্ত। বিশেষ করে ভাঙাচোরা যানবাহনগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
ছুটির দিন কেন বেছে নেয়া হলো?- এমন প্রশ্নে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘এই দিনগুলোতে চালকরা ছুটিতে থাকে। ফলে মালিকরা সব সময় হেলপারদের দিয়ে রাস্তায় যানবাহন মানায়। এই কারণে আজকের অভিযান।’
‘এছাড়া কম বয়স্ক কেউ গাড়ি নিয়ে কেউ যেন রাস্তায় না নামতে পারে সে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে।’
নগর পরিবহনে নৈরাজ্য বরাবর রাজধানীবাসীর বিরক্তির নাম। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা আইনের তোয়াক্কা না করে তাদের ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করছেন। এছাড়াও মাত্রাতিরিক্ত যাত্রী বহন বা সিটিং এর নামে যাত্রী ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এর বাইরে অদক্ষ চালক দিয়ে গাড়ি চালানো বা ট্রাফিক আইনের প্রতি অশ্রদ্ধার কারণে নানা দুর্ঘটনাও ঘটছে। সম্প্রতি বেশ কিছু ঘটনায় নগর পরিবহনে বিশৃঙ্খলার বিষয়টি আবার আলোচনায় এসেছে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কখনও সফল হয়নি। তবে এর বাইরে আর কোনো কৌশল তারা বের করতে পারেনি।
এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে উন্নত বিশ্বের মতো কোম্পানির আদলে বাস চালানোর একটি উদ্যোগ নিয়েছিলেন। যাত্রীবান্ধব নতুন বাস আমদানি করে রুটগুলো ঢেলে সাজানোসহ নানা পরিকল্পনা নিয়ে মালিকদের সঙ্গে আলোচনাও করেছিলেন তিনি। কিন্তু গত ৩০ নভেম্বর তার মৃত্যুর পর এই বিষয়টি আটকে গেছে।
পুলিশ কর্মকর্তা আবু তোরাব মো. শামসুর রহমানও স্বীকার করছেন, এভাবে অভিযান চালিয়ে সুফল মেলেনি। তিনি বলেন, ‘আমরা এমন অভিযোগে কাউকে আটক করলে প্রথমে একটি মামলা দেই পরে আবারও আটক হলে তার জরিমানা বাড়ানো হয়। কিন্তু তারপরও বন্ধ হচ্ছে না দৌরাত্ম।’
দৈনিক দেশজনতা/ টি এইচ