২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | দুপুর ১২:০৩

পবিত্র লাইলাতুল বরাত

 

আজ পবিত্র শবে বরাত। আরবীতে লাইলাতুল বারাআত। আর বাংলায় ভাগ্যরজনী। শব ফার্সি শব্দ, এর অর্থ রাত। আর বরাত অর্থ নিষ্কৃতি, মুক্তি বা নাজাত। সূর্যাস্তের পর থেকেই শুরু হয় রাতটি। ইসলামের যে ক’টি রাতকে বিশেষ মর্যাদা দেয়া হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম শবে বরাত। হাদীস শরীফে আছে, শাবান মাসের পঞ্চদশ রজনীতে নামাজ আদায় করো এবং দিনে রোজা রাখো। আল্লাহপাক এ রাতে বান্দার সমস্ত প্রার্থনা কবুল করেন। আল্লাহতায়ালা এ রাতে প্রথম আসমানে নেমে এসে তাঁর বান্দাদের উদ্দেশে বলেন, কোনো ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে ক্ষমা করবো। কোনো বিপন্ন ব্যক্তি আছো কি? আমি তাকে বিপদমুক্ত করবো। কোনো রিজিক প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে রিজিক দান করবো। রাসূলে পাক হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইয়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, লাইলাতুল বারাআতকে সম্মান করো। কেননা মানুষের জন্ম-মৃত্যু, ইহলৌকিক ও পারলৌকিক মঙ্গলামঙ্গল, রিজিক তথা ধন-দৌলত ও ভালো-মন্দ সবকিছুই এ রাতে নির্ধারণ করা হয় এবং প্রত্যেক বান্দার আমলনামা আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি দোযখের শাস্তি থেকে রেহাই পেতে চায়, সে যেন এইরাত ইবাদতে অতিবাহিত করে।
বহু আলেমের মতে, পবিত্র কুরআনের সূরা দুখানে যে লাইলাতুল মোবারকের উল্লেখ রয়েছে তা হচ্ছে শবে বরাতের রাত। এ রাতে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি বিষয় স্থির হয়। হাদীস শরীফে এসেছে, যে ব্যক্তি এই রাতপ্রাপ্ত হলো সে বড়ই ভাগ্যবান। আল্লাহর হাবীব হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ১৫ শাবান রোজা রাখবে, দোযখের আগুন তাকে স্পর্শ করবে না। তবে তিনি ওইসব ব্যক্তি সম্পর্কেও সতর্ক করেছেন, যাদের ইবাদত এ রাতে আল্লাহতায়ালা কবুল করবেন না। তারা হচ্ছে, অন্যের হক নষ্টকারী, হিংসুক, নেশাখোর ও পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান। বস্তুত পবিত্র শবে বরাত শুধু মানুষকে শুদ্ধ ও পবিত্রই করে না, সুযোগ সৃষ্টি করে দেয় জীবন সাধনার এক নবতর পথের। এই রাত রমজানের আগমনী বার্তা ঘোষণা করে মানুষকে সতর্ক করে তোলে। কাজেই সকলের উচিত এ রাতের মহিমা উপলব্ধি করা।
খুশির সওগাত নিয়ে রাতটি আসে। এর অর্থ এই নয় যে, বাজি পুড়িয়ে কিংবা ইহ-হুল্লোড় করে রাতটি অতিক্রম করতে হবে। বরং এটা গর্হিত অপরাধ। আত্মীয় প্রতিবেশী এ গরিবের মধ্যে খাদ্য বা হালুয়া-রুটি বিতরণ বা বিনিময় ভালো কাজ। তবে ইবাদতকে এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে এ রাতের মহিমা উপলব্ধি করা যায় না। প্রকৃতপক্ষে রাতটি হচ্ছে আল্লাহকে স্মরণ করার রাত, আত্মবিশ্লেষণের রাত, সব পাপ থেকে মুক্তি প্রার্থনার রাত। তাই মুসলমানরা এই রাত জেগে ইবাদত বন্দেগী করেন, দান-খয়রাত করেন এবং আত্মীয়-স্বজনের কবর জিয়ারত করেন। শবে বরাতে সকলেরই উচিত ব্যক্তিগত, পারিবারিক সুখ-শান্তি ও নাজাত কামনার পাশাপাশি দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গল কামনা করা। আমাদের দেশ ও জাতি আজ নানা দিক থেকেই সংকটে পড়েছে। জিনিসপত্রের অগ্নিমূল্যের কারণে মানুষের দুর্গতির সীমা-পরিসীমা নেই। আইন-শৃঙ্খলার ভয়ঙ্কর অবনতিতে সমাজ জীবনে সৃষ্টি হয়েছে আতংক। দেশের শিল্প-কারখানা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে বিরাজ করছে স্থবিরতা। জাতীয় অর্থনীতি দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম। সমাজে দুর্বত্তদের উত্থান ঘটেছে। অনাচার-অবিচারে দেশের ধর্মপ্রাণ জনগণ খুব অসহায় বোধ করছে। এ অবস্থ’ায় আল্লাহর সাহায্যের কোনো বিকল্প নেই। এজন্য এ রাতে নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, সমাজের জন্য দেশের জন্য সমগ্র দুনিয়ার জন্য আল্লাহর কাছে শান্তি ও মঙ্গল চাইতে হবে। সবাই এই রাতের ফজিলত ও বরকত লাভে আন্তরিক হোক এটাই আমাদের কাম্য।

প্রকাশ :মে ১, ২০১৮ ১১:৫৬ পূর্বাহ্ণ