২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | দুপুর ২:২৪

বেসামাল চবি ছাত্রলীগ

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগ নিজেদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ায় গত বছরের ৪ মে শাখা ছাত্রলীগের সকল কার্যক্রম স্থগিত করে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ। কিন্তু কার্যক্রম স্থগিত করার পরও সংঘর্ষ চলতে থাকায় গত বছরের ৬ ডিসেম্বর শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। এতেও থেমে নেই দেশের ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীন ছাত্র সংগঠনের এই ইউনিটটি।

কমিটি বিলুপ্ত করার পর তিন মাসের মাথায় অন্তত ছয়টি বড় ধরনের সংঘর্ষে জড়িয়েছে শাখা ছাত্রলীগ। এর মধ্যে সর্বশেষ গত ২৭ মার্চ (মঙ্গলবার) চশমা নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে কথা কাটাকাটির জেরে সিক্সটি নাইন গ্রুপ ও ভিএক্স গ্রুপের মধ্যে বড় ধরনের সংঘর্ষ হয়। এতে উভয়পক্ষের কমপক্ষে পাঁচজন আহত হন। এদের মধ্যে চারজনকে গুরুতর আহতবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) ভর্তি করা হয়।

হাসপাতালে ভর্তি করার পর সেখানেও তারা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই ফের পরদিন গত ২৮ মার্চ (বুধবার) দুই গ্রুপে উত্তেজনা দেখা দেয়। ফলে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি, হলের প্রভোস্ট, আবাসিক শিক্ষকদের উপস্থিতিতে পুলিশ শাহ জালাল ও সোহরাওয়ার্দী হলে অভিযান পরিচালনা করে। এসময় কয়েক বস্তা অস্ত্রসহ ২০ জন ছাত্রলীগ কর্মী আটক করা হয়।

এর আগে গত ২২ ফেব্রুয়ারি প্রক্টরের অপসারণ চেয়ে প্রধান ফটকে তালা, প্রক্টর কার্যলয় ভাংচুরস ১৪টি বাস ভাংচুর, বেশ কয়েকটি শ্রেণী কক্ষসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা চালায় শাখা ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা। এ সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকদের উপরও হামলা করা হয়। এর আগে নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও প্রয়াত নগর আওয়ামী সভাপতি এবি এম মহিউদ্দীন চৌধুরীর অনুসারীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের ১৫ জন আহত হয়।

একটি অনুষ্ঠানের আলোচনাকে কেন্দ্র করে গত ১২ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ১২ জন আহত হয়। এ সময় আলাওল হলের দুটি কক্ষ ভাঙচুরসহ দেশীয় অস্ত্রের মহড়া দিতেও দেখা যায় দু’গ্রুপের নেতাকর্মীদের। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মিছিলে দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে গত ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক সংগঠন ভিএক্স ও সিক্সটি নাইন গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপের পাশাপাশি উভয় পক্ষই সোহরাওয়ার্দী হলের প্রায় ২০টি কক্ষ ভাঙচুর করে। এতে দুজন গুরুতরসহ ৬ জন আহত হন। দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না থাকায় শাখা ছাত্রলীগ নেতৃত্ব শূন্যতা তৈরি হওয়ায় তৃণমূল কর্মীরা বেসামাল হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

ছাত্রলীগের গৌরব ও ঐতিহ্য, ইউনিটকে গতিশীল, সুসংহত করার লক্ষ্যে নতুন কমিটি ঘোষণা করার লক্ষে গতবছর ১২ ও ১৩ নভেম্বর চবিতে সাংগঠনিক সফরে আসেন পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রের প্রতিনিধি দল। তখন প্রতিনিধি দল পদ প্রত্যাশী ৯৬০ জনের জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করে। কিন্তু জীবন বৃত্তান্ত সংগ্রহের দীর্ঘ চার মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত কমিটি ঘোষণা করা হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ২ গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায় এড়াতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি আরেকটু সচেতন হয়ে দুই একটা কঠোর সিদ্ধান্ত নেন তবে এ ধরনের সংঘর্ঘের ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিৎ এদের দায়-দায়িত্ব নেয়া। সংঘর্ষে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, যেহেতু বর্তমানে চবিতে আমাদের কমিটি নেই, তাই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া আমাদের সংগঠনের সিস্টেমের মধ্যে নেই। চবি শাখা কমিটি কবে নাগাদ ঘোষণা হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা যে সিভিগুলো এনেছি, সেগুলো যাছাই-বাছাই চলছে। যত দ্রুত সম্ভব আমরা কমিটি দিয়ে দিব।

দৈনিকদেশজনতা/ আই সি 

প্রকাশ :এপ্রিল ১, ২০১৮ ১২:৩৩ অপরাহ্ণ