২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১০:৩৫

দর সর্বনিম্ন অবস্থানে পুঁজিবাজারের ১৩০ কোম্পানি

 

নিজস্ব প্রতিবেদক :

২০১০ সালের ধস পরবর্তী ৭ বছর অতিক্রান্ত হলেও এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি পুঁজিবাজার। ২০১৭ সালের শুরু থেকে বাজারের লেনদেনের গতি ফিরলেও এক বছরের ব্যবধানে বাজারের সার্বিক মূল্য সূচক ও লেনদেন আবারো তলানিতে ফিরেছে।

অব্যাহত দর পতনে বুধবার দিনশেষে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত ৩০৩টি কোম্পানির মধ্যে ১৩০টির শেয়ার দর সর্বনিম্ন অবস্থানে স্থিতি পেয়েছে। অর্থাৎ বিগত এক বছরের ব্যবধানে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ৪২.৯০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে। তালিকভুক্ত কোম্পানিগুলোর অব্যাহত দর পতনে ডিএসইর বাজার মূলধন ৩ মাসের ব্যবধানে ৩৫ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা কমেছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপর্যাপ্ত জোগান ও কারসাজি চক্রের সক্রিয়তায় ২০১০ সালে বাজারের শতভাগ শেয়ার অতিমূল্যায়িত্ব হয়ে ছিল। যার ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে বাজারে বড় ধরনের ধস হয়েছে। ধস পরবর্তী সময়ে বাজারের শতাধিক নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হওয়ায় বাজারে শেয়ার সরবরাহ বেড়েছে। কিন্তু বর্তমানে তারল্য সংকটে বাজারের সিংহভাগ শেয়ার অবমূল্যায়িত্ব হচ্ছে।

এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের এক্সপ্লোজর লিমিট নির্ধারণে ত্রুটি, এডিআর রেশিও, ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে আস্থা সংকট সৃষ্টি করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় অব্যাহত দর পতনে ভুগছে পুঁজিবাজার।

 

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তাক আহমেদ সাদেক বলেন, বাজারে ব্যাপক তারল্য সংকট রয়েছে। ব্যাংক, মার্চেন্ট ব্যাংক ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা চেষ্টা করলেও বাজারে ইতিবাচক ধারা ট্রেন ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিষ্ক্রিয়তা ও অসহযোগিতার কারণে পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরছে না। ব্যাংকের ঋণ ও আমানতের সুদ অনুপাতের (এডিআর রেশিও) জটিলতায় পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট রয়েছে। যার ফলে নিয়মিত দর পতনে ভুগছে বাজার। নতুন করে বিনিয়োগ করার মত আস্থা পাচ্ছে না সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। ফলে, একটি পর্যায়ে এসে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর কথা থাকলেও নতুন করে পতনের গতি বেড়েছে।

তিনি বলেন, বেশির ভাগ ব্যাংকের এডি রেশিও ৮৩.৫ অনুপাতের উপর রয়েছে। কিছু কিছু ব্যাংকের ক্ষেত্রে তা ৯০ অতিক্রম করেছে। যার কারণে বাজারে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। এতে করে পুঁজিবাজারের অব্যাহত পতন হচ্ছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, পুঁজিবাজারে বর্তমানে ‘এ’, ‘বি’, ‘এন’ ও ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে ৩০৩ কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে বুধবার দিনশেষে ১৩০টি কোম্পানির শেয়ার বিগত ১ বছরের মধ্যে বা গত ৫২ সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে স্থিতি পেয়েছে।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, আমরা নেটওর্য়াক, এবি ব্যাংক, একমি ল্যাব, একটিভ ফাইন, এএফসি এগ্রো, আফতাব অটোস, অগ্নি সিস্টেমস, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং, এ্যাপলো ইস্পাত, আরগন ডেনিমস, এশিয়ান ইন্স্যুরেন্স, বিএসআরএম স্টিল, বিএসআরএম লিমিটেড, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স, বেক্সিমকো, বেঙ্গল উইন্ডর্স, বিকন ফার্মা, বিবিএস ক্যাবলস, বেলিজিং, বাটা সুজ, সেন্ট্রাল ফার্মা, সিএনএ টেক্সটাইল, ডেফোডিল কম্পিউটার, ডেল্টা স্পিনার্স, ডেসকো, ঢাকা ব্যাংক, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স, এমারেন্ড অয়েল, এনভয় টেক্সটাইল, ইভেন্স টেক্সটাইল, ফ্যামিলি টেক্স, ফার কেমিক্যাল, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স, ফার ইস্ট নিটিং অ্যান্ড ডাইং, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ফরচুন সুজ, ফু-ওয়াং সিরামিক, জিবিবি পাওয়ার, জেনারেশন নেক্সট, গোল্ডেন হার্ভেস্ট এগ্রো, গ্লোবাল হেভি কেমিক্যাল, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, জিপিএইচ ইস্পাত, জিএপি ফাইন্যান্স, গোল্ডেন সন, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, আইসিবি, আইএফআইসি ব্যাংক, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, ইসলামী ব্যাংক, ইসলামিক ফাইন্যান্স, আইটিসি, যমুনা অয়েল, কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স, খান বার্দাস পিপি ওভেন, কেডিএস এক্সেসরিজ, কেয়া কসমেটিকস, কহিনুর কেমিক্যাল, খুলনা পাওয়ার কোম্পানি, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, ম্যাকসন স্পিনিং, মতিন স্পিনিং, মেঘনা সিমেন্ট, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, মুজাফ্ফর হোসেন স্পিনিং, এমআই সিমেন্ট, মিরাকেল ইন্ডাস্ট্রিজ, মিথুন নিটিং, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, অলেম্পিক এক্সেসরিজ, ওয়াই ম্যাক্স, ওয়ান ব্যাংক, অরিয়ন ইনফিউশন, ওরিয়ন ফার্মা, পদ্মা অয়েল, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স, প্যাসিফিক ডেনিমস, পেনিনসুলা চিটাগং, ফনিক্স ইন্স্যুরেন্স, পাইনিয়র ইন্স্যুরেন্স, পাওয়ার গ্রিড, প্রগতি ইন্স্যুরেন্স, প্রগতি লাইফ, প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, প্রাইম ব্যাংক, প্রাইম ফাইন্যান্স, প্রাইম ইন্স্যুরেন্স, প্রাইম লাইফ, প্রাইম টেক্সটাইল স্পিনিং, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স, পূবালী ব্যাংক, পূবরী ইন্স্যুরেন্স, কাশেম ড্রাইসেল, আরএকে সিরামিক, আরডি ফুড, রিজেন্ট টেক্সটাইল, রেইনউইক জজ্ঞেশ্বর, আরএন স্পিনিং, আরএসআরএম স্টিল, রূপালী ইন্স্যুরেন্স, ইউনিয়ন ক্যাপিট্যাল, ইউনাইটেড এয়ার, ইউনাইটেড ফাইন্যান্স, সাফকো স্পিনিং, সাইফ পাওয়ারটেক, সায়হাম কটন, এসআলম কোল্ড, সমরিতা হাসপাতাল, সন্ধানী ইন্স্যুরেন্স, সামিট অ্যালায়েন্স ফোর্ট, শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, স্কয়ার টেক্সটাইল, সামিট পাওয়ার, সান লাইফ ইন্স্যুরেন্স, তাল্লু স্পিনিং, তিতাস গ্যাস, তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ, তুংহাই নিটিং, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, ইয়াকিন পলিমার, জাহিন স্পিনিং ও জাহিন টেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ার দর বিগত ১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে।

দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ

প্রকাশ :মার্চ ২২, ২০১৮ ১:০৬ অপরাহ্ণ