২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | দুপুর ১২:০২

ইন্টারনেটে আপনার শিশু কতটা নিরাপদ?

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক:

ঢাকার অভিজাত একটি স্কুলের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী নাহিন। বাবা-মা দু’জনে চাকুরিজীবী। বাবা শাহিন আলম একজন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। মা চায়না খাতুন শিক্ষিকা। একমাত্র সন্তানকে নিয়ে তাদের সংসার। নাহিন পড়াশোনাতে ভালো মেধাবী, শান্ত ও ভদ্র স্বভাবের সে। বাবা-মায়ের শত ব্যস্ততার মাঝে ছেলেকে দেখাশোনার কোন কমতি নেই। স্কুল, কোচিং ও বাসায় পড়াশোনা সবই ঠিক মতো চলে। পরীক্ষার ফলাফলও বরাবর প্রত্যাশা পূরণ করে। তারপরও ছেলেকে নিয়ে তাদের উদ্বিগ্নতার শেষ নেই।

স্ব স্ব জায়গায় প্রতিষ্ঠিত সচেতন বাবা-মা সব সময় সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় মগ্ন। তাদের প্রত্যাশা অবসর সময়ে ছেলে একটু খেলতে যাক, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিক, বাসায় রাখা বই পড়াশোনা করে চিন্তার জগৎ বৃদ্ধি করুক; কিন্তু না! সব সময় ব্যস্ত থাকে হাতে থাকা মোবাইল ফোন আর কম্পিউটারে। তার সব জগৎ ডিজিটাল প্রযুক্তির নানা গ্যাজেটকে ঘিরে। কিন্তু সে ইন্টারনেটের তথ্যবহুল ভান্ডারের মধ্য থেকে কোন অপ্রয়োজনীয় বা অনাকাঙ্খিত সাইটে বিভোর নয় তো?

এমন আশঙ্কা আর দিনের পর দিন কৃত্রিমতার জগতে মুখ গুজে পড়ে থাকার কারণেই তাদের এই উদ্বিগ্নতা।

বর্তমানে ডিজিটালাইজেশনের যুগে সন্তানের জন্য বাবা-মায়ের এই উদ্বিগ্নতা অমুলক নয়। কেননা সম্প্রতি শিশুরা যে ডিজিটাল ঝুঁকিতে রয়েছে সে বিষয়ে ব্যাপক উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউনিসেফ।

তারা জানিয়েছে, বিশ্বে প্রতি তিনজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর মধ্যে একজন শিশু। স্কুল পড়ুয়া এসব ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ডিজিটাল ঝুঁকি থেকে রক্ষায় পর্যাপ্ত কাজ হচ্ছে না। পরিবর্তনশীল ব্যবস্থার সাথে সুরক্ষার দিক থেকে তেমন খাপ খাওয়াতে পারছে না সরকারি ও বেসরকারি কর্তৃপক্ষ। যার ফলে লাখ লাখ শিশু ঝুঁকির মধ্যে রয়ে যাচ্ছে।

এছাড়া ইউনিসেফের প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোনের কারণে সারা বিশ্বের লাখ লাখ শিশু উপকৃত হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু একই সাথে তারা সহিংসতা, শোষণ ও নির্যাতনের মুখে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

বিশ্বে প্রতিদিন ১ লাখ ৭০ হাজার শিশু অনলাইনে যুক্ত হচ্ছে। তবে কোনো দেশেই এসব শিশুদের ইন্টারনেটে সুরক্ষা দেয়ার মতো পর্যাপ্ত কোনো ব্যবস্থা এখনও নেয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশু সুরক্ষা নিয়ে কাজ করা সংস্থা ইউনিসেফ।

সংস্থাটি পরামর্শ দিয়ে বলেছে, একজন শিশু যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকাউন্ট খোলে তখন সেসব সাইটে তার সর্বোচ্চ প্রাইভেসি সেটিংসের ব্যবস্থা থাকা উচিত।

বাংলাদেশে এখন ইন্টারনেটে যুক্ত আছে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি মানুষ আর এখানে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়েসী শিশুদের মধ্যে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ অনলাইনে যুক্ত বলে রিপোর্টে দেখানো হয়েছে।

অন্যদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বা বিটিআরসির হিসেবে, ৮০ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহাকারী যুক্ত আছেন ফেসবুকে। অনলাইনে শিশুদের নিরাপদ রাখতে বাংলাদেশেও সরকারি ও বেসরকারিভাবে নানা উদ্যোগের কথা শোনা গেছে বিভিন্ন সময়। কিন্তু তার বাস্তবায়ন আসলে সম্ভব হয়ে উঠে নি।

চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশসহ ভারত, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশে এক জরিপ দেখা গিয়েছে, বর্তমানে বিভিন্ন দেশে সাইবার বুলিংয়ের ঝুঁকি মারাত্মক পর্যায়ে রয়েছে। তাদের মধ্যে যারা অনলাইনে গেইম খেলে তাদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি আরও বেশি যার মধ্যে ১৮ থেকে ৬৪ পর্যন্ত অনকেই রয়েছে। কিন্তু কমবয়স্ক শিশুরা সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে বেশি। এছাড়া শিশুরা অনলাইনে গালাগালি, বর্ণবাদী ও যৌনতা বিষয়ক নানা আপত্তিকর মন্তব্যের শিকার হচ্ছে।

ইন্টারনেটের শিশু ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে, সে কারণে তাদের অনলাইন পরিচয় ও তথ্য উপাত্ত নিরাপদ রাখার আরও ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ।

আর এসব কারণেই অভিভাবকদের উদ্বিগ্নতা বাড়ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। আর এ কারণে সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে অনাকাঙ্খিত কোন কন্টেন্টে যাতে তারা মোহগ্রস্থ না হতে পারে সেজন্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার প্রতি জোর দিয়েছেন তারা।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পাশাপাশি আমাদেরও সময় এসেছে ইন্টারনেটে শিশু সুরক্ষার বিষয়টি ভেবে দেখার যেন নাহিনের বাবা-মা’র মতো অসংখ্য অভিভাবককে এ নিয়ে আর উদ্বিগ্ন না হতে হয়।

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :জানুয়ারি ১৬, ২০১৮ ১:৩০ অপরাহ্ণ