নিজস্ব প্রতিবেদক:
৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে আজ দেশব্যাপী কর্মসূচি চলাকালে বিভিন্ন স্থানে পুলিশ বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ‘একতরফা’ নির্বাচন করে ফের ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। সে সময় নির্বাচন বর্জন করা দেশের অন্যতম বিরোধী দল বিএনপি দিনটিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে। তবে আওয়ামী লীগ দিনটিকে ‘গণতন্ত্রের বিজয়’ দিবস হিসেবে পালন করে থাকে।
ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহের গৌরীপুরে ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত কালো পতাকা মিছিলে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। এতে উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ১০ জন আহত হয়েছেন।
আজ শুক্রবার সকালে ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরণের নেতৃত্বে ঝলমল সিনেমা হল সড়ক থেকে কালো পতাকা মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের স্টেশন রোড মোড়ে যেতেই পুলিশ তাদের গতিরোধ করে ব্যানার ছিনিয়ে নেয়। একপর্যায়ে পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ করে। এতে ১০ জন আহত হন।
উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াদুজ্জামান রিয়াদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তবে এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বান্দরবান: বান্দরবানে বিএনপির কালো পতাকা মিছিলে লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। এতে পাঁচ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এ ছাড়া মিছিল থেকে আটক করা হয়েছে আরো ৪ জনকে।
জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আলী হায়দার বাবলু গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালন করতে বান্দরবান শহরে মিছিল বের করা হয়। এ সময় মিছিলে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে ছাত্রদলের ৫ জন আহত হন।
এ ছাড়া ঘটনাস্থল থেকে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সাদিকুর রজমান জুয়েল ও বান্দরবান সরকারি কলেজ শাখার সভাপতি ওমর বিন মোরশেদসহ চারজনকে আটক করেছে পুলিশ।
খুলনা : আজ শুক্রবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে খুলনা মহানগর বিএনপির কালো পতাকা সমাবেশে যোগ দেয়ার জন্য নেতাকর্মীরা একটি মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলের দিকে আসতে থাকেন। এ সময় পুলিশ মিছিলে লাঠিচার্জ করে নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ ঘটনায় এক ফটো সাংবাদিক আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে বিএনপির ৩ কর্মীকে আটক করে পুলিশ।
তবে আটক বিএনপির ৩ কর্মীর নাম-পরিচয় জানা যায়নি। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) মুখপাত্র এডিসি মনিরা সুলতানা জানান, ঘটনাস্থল থেকে ৩ জনকে আটক করা হয়েছে।
মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু দাবি করেন, মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জে ১২ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তাঁদের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ : গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে আজ সকালে কালো পতাকা সমাবেশ করে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি। সমাবেশ শেষে নেতাকর্মীরা মিছিল বের করতে চাইলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জে বিএনপির পাঁচ কর্মী আহত হন।
নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব চত্বরে জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন সাবেক সংসদ সদস্য আতাউর রহমান আঙ্গুর, জেলা বিএনপির সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামাল প্রমুখ।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবসে আমরা কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে কালো পতাকা সমাবেশ শেষে মিছিল বের করি। এ সময় পুলিশ মিছিলের ওপর হামলা চালায়। পুলিশের লাঠিচার্জে ছাত্রদল নেতাসহ অন্তত পাঁচজন আহত হন।’
বক্তারা বলেন, বিএনপিকে বাদ দিয়ে ৫ জানুয়ারি নির্বাচন ছিল অগণতান্ত্রিক, অবৈধ। আওয়ামী লীগ অবৈধ নির্বাচন করে, অবৈধ সরকার গঠন করেছে।
ঝালকাঠি : আজ সকাল ১০টায় শহরের ফায়ার সার্ভিস সড়কে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে নেতাকর্মীরা জড়ো হলে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় পুলিশ বিএনপি কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
পরে জেলা বিএনপির সভাপতি মোস্তফা কামাল মন্টু, সহসভাপতি মিঞা আহমেদ কিবরিয়া, সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম নূপুর ও যুগ্ম সম্পাদক ব্যারিস্টার সরদার মিজানুর রহমান কার্যালয়ের তালা খুলে ভেতরে যেতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশের বাধার মুখে বিএনপির ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবসের’ কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায়।
এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি মিঞা আহমেদ কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম নুপুর।
এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ঝালকাঠি শহরে বিএনপি নেতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ