নিজস্ব প্রতিবেদক:
অতিবৃষ্টি ও পাড়াহী ঢলে জেলার একমাত্র ফসল বোরো হারানোর পর আমনের ভাল ফলনে আশায় বুক বাধছেন সুনামগঞ্জের কৃষকরা। আমনের সাফল্যে বোরো আবাদের স্বপ্ন দেখছেন তারা। এ জেলার প্রধান ফসল হচ্ছে বোরো। বোরোর আবাদের ৩২ ভাগ চাষাবাদ হয় আমন ধান।
সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এবার জেলার ১১টি উপজেলায় আমন ধান চাষাবাদ হয়েছে ৭৪ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ হাজার ২৭৬ হেক্টর বেশি। উপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার ২৫৬ মেট্রিক টন ধান। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় আমন চাষাবাদ করা হয়েছে ২ হাজার ৭ শত হেক্টর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ৪ শত হেক্টর, দোয়ারাবাজারে ৫ হাজার ১৭০ হেক্টর, বিশ্বম্ভরপুরে ১ হাজার ২৮০ হেক্টর, জগন্নাথপুরে ৬৫০ হেক্টর, জামালগঞ্জ ১ হাজার ২৫০ হেক্টর, তাহিরপুরে ১ হাজার ৯ শত হেক্টর, ধর্মপাশায় ২ হাজার ৩শত হেক্টর, ছাতকে ৩ হাজার ৫০ হেক্টর, দিরাইয়ে ৮ শত হেক্টর ও শাল্লা উপজেলায় ৬০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষাবাদ করার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও সারা জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ হাজার ২৭৬ হেক্টর বেশি জমিতে আমন চাষাবাদ হয়েছে।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আরো জানায়, সারা জেলায় এবার ২ লাখ ২২ হাজার ৫৫২ হেক্টর জমিতে বারো আবাদের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে ।
এর মধ্যে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় বোরো চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ হাজার ৬৯ হেক্টর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ২২ হাজার ৩২৯ হেক্টর, দোয়ারাবাজার ১৩ হাজার ৬৩৯ হেক্টর, বিশ্বম্ভরপুরে ১১ হাজার ৩৩৫ হেক্টর, জগন্নাথপুরে ২০ হাজার ২৬৯ হেক্টর, জামালগঞ্জ ২৪ হাজার ৬০৯ হেক্টর, তাহিরপুরে ১৮ হাজার ৩৫৪ হেক্টর, ধর্মপাশায় ৩১ হাজার ৭৯৬ হেক্টর, ছাতকে ১৪ হাজার ১৯৯ হেক্টর, দিরাইয়ে ২৭ হাজার ৯৫৪ শত হেক্টর ও শাল্লা উপজেলায় ২১ হাজার ৯৯৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ লাখ ৩০ হাজার ৮৩৯ মেট্রিক টন ধান।
সরেজমিন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের উমেদশ্রী গ্রামের আমনের মাঠে গিয়ে দেখা গেছে কৃষক আমান উল্লাহ তার আমন ক্ষেতের পরিচর্যা করছেন। তিনি পরিবর্তন ডটকমকে জানান, এবার তিনি আমন ধান চাষাবাদ করেছেন ৩ কেদার (২৩ শতাংশে ১ কেদার) জমিতে। কিন্তু একদফা পাহাড়ী ঢল ও অতিবৃষ্টিতে আমন ধান তলিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরও আবার আমনের চাষাবাদ করেন। এরপর এখন আমনের ফলন ভাল হয়েছে। খুশিতে বুক ভরে গেছে। তবুও খুশিতে গদগদ হতে পারেননি। বোরো ফসল হারিয়ে গত ৭ থেকে ৮ মাস পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করে আসছেন। এবার আমনের ভাল ফসল হলেও খুশি হয়েও খুশি হতে পারছেন না। কারণ আমন উৎপাদনে তার বছরের খোরাকী হয়না। এখন চিন্তায় আচেন কিভাবে বোরো ধান আবাদ করবেন। সরকার ৫ কেজি বীজ ও ৩০ কেজি সার সহায়তা দিয়েছে। কিন্তু তার বোরো চাষাবাদে প্রয়োজন ৪০ কেজি বীজ এবং ৩০ থেকে ৩৫ মণ সারের।
একই গ্রামের কৃষক উসমান গনি জানান, তার পরিবারে ৫ জন সদস্য। আমনের ভাল ফসল হলেও বোরো ফসল গোলায় উঠা পর্যন্ত পরিবারের খাবার হবে না। সরকারিভাবে ৫ কেজি বীজ ও ৩০ কেজি সার পেয়েছেন। কিন্তু তার ৯ কেদার বোরো জমি চাষ করতে কমপক্ষে ৪০ থেকে ৪৫ কেজি বোরো বীজের প্রয়োজন। আর তাতে সার প্রয়োজন হবে ৩০ মণ। আমন ধান কাটতে আরো একসপ্তাহ লাগবে। তিনি আরো জানান, আমন ধান পেয়ে পরিবারের খাবার যোগাবেন নাকি বোরো উৎপাদনের জন্য বীজ ও সার কিনবেন এখন সেটাই চিন্তার বিষয়। একই কথা জানালেন ওই গ্রামের কৃষক মো. ইসরাইল।
জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পলাশ ইউনিয়নের শহর আলী জানান, এবার তিনি ১০ কেদার রোপা আমন রোপন করেছেন। ভাল ফলন হয়েছে। ১০ দিনপর আমন ধান কাটতে পারবেন। কিন্তু বোরে উৎপাদন নিয়ে পড়েছেন মহা সমস্যায়। গত বোরো মৌসুমে তিনি ২০ কেদার বোরো জমি চাষাবাদ করেছিলেন। কিন্তু অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ায় ৭ ছেলে মেয়েসহ পরিবারে ১৪ জন সদস্য নিয়ে পড়েছিলেন বড় সমস্যায়। কোনরকম ৭/৮ মাস পার করেছেন। তিনি আরো জানান, বোরো উৎপাদনে সরকার ৫ কেজি বীজ ও ৩০ কেজি সার সহায়তা দিয়েছে। কিন্তু এক কেদার জমির জন্য অন্তত ১০ কেজি বীজ প্রয়োজন। এ হিসেবে ২০ কেদার জমির জন্য ২০০ কেজি বীজ দরকার। এখন আমন ধান দিয়ে পরিবারের খরচ ও বিক্রি করে বোরো উৎপাদনের খরচ যোগাতে হবে। একই ইউনিয়নের আধুখালি গ্রামের কৃষক কৃপেশ দেব নাথও তাই জানালেন।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. ফিরোজ খান জানান, সুনামগঞ্জ হচ্ছে বোরো প্রধান জেলা। এ জেলায় বোরো আবাদের মাত্র ৩২ ভাগ চাষাবাদ হয় আমন ধান। ইতোমধ্যে জেলায় আমন ধানের ৪ ভাগ কাটা হয়েছে।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ