নিজস্ব প্রতিবেদক:(ঢাকা, ১৬ মে)
আগাম বন্যা আর ভারী বর্ষণে কিশোরগঞ্জে হাওর এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের মাঝে ত্রাণ বিতরণ উপলক্ষে মঙ্গলবার বিকেলে ইটনা উপজেলা কলেজ মাঠ প্রাঙ্গণে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে এবং কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির উদ্যোগে এই ত্রাণ বিতরণ করা হয়।
বিএনপির আন্দোলন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়। জাতীয় স্বার্থে আমরা আন্দোলন করছি। আন্দোলন সংগ্রাম করতে বেগম জিয়া তার ছেলে হারিয়েছেন। আজকে জীবন সায়াহ্নে এসে তিনি সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। এই সরকার সহায়ক সরকার দিতে বাধ্য হবে। আগামী দিনে সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে এবং জনগণ স্বচ্ছ ব্যালটে ভোট দিয়ে গণতান্ত্রিক সরকারকে ক্ষমতায় বসাবে। বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে কারাগারের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই বলে নোমান মন্তব্য করেন।
ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান। আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাৎ, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি শরিফুল আলম, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম শরিফ, করিমগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম সুমন, ইটনা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম রতন, খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল, প্রমুখ। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন- মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমদ খান, জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি লায়লা বেগম, ইটনা উপজেলা বিএনপি সভাপতি এস এম কামাল, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সাহাব উদ্দিন মুন্না, ইশতিয়াক আহমেদ নাসির, কেন্দ্রীয় সদস্য কবিরসহ অন্য নেতৃবৃন্দ।
আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, ভারত আমাদেরকে পানির ন্যায্য হিস্যা দেয় না। আজকে তিস্তা ও ফারাক্কা বাধ আমাদের মরণ ফাঁদ। এরফলে আমাদের একটি বিশাল অঞ্চল মরুভুমিতে পরিণত হয়েছে। এ সব ব্যাপারে বিএনপি যখন কথা বলে তখন নানা কথা বলা হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ কোনো কথা বলে না।
হাওরের ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যাপারে তিনি বলেন, হাওরের বন্যার কারণে কৃষকের ফসল শুধু নয়, মাছ এবং বহু প্রাণীও নষ্ট হয়েছে। ছোট বড় বলে কোনো কথা নেই সব কৃষকই ক্ষতিগ্রস্ত। আজকে আগামী ফসল তারা কিভাবে লাগাবে তারা কোনো ঠিক নেই। কারণ তাদের হাতে টাকা নেই। আগামীতে ধান রোপনের জন্য বিনা সুদে কমপক্ষে ছয় মাসের জন্য ঋণ বিতরণ করতে হবে।
তিনি বলেন, এই সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে কোনো ত্রাণ দিচ্ছেনা। তারা বলেছে খোলা বাজারে পণ্য বিক্রি করবে। কিন্তু তা করছে না। ত্রাণ যা দিচ্ছে তা আওয়ামী লীগ আর ছাত্রলীগের লোকজন দিয়ে।
হাওর রক্ষা বাধ নির্মাণে ঠিকাদাররা চুরি করেছে। তারা কাজ করেনি। ফলে আজ ফসলও গেছে, মাছও গেছে। অথচ আমাদের যে বাজেট হয় তার ষাট ভাগ কিন্তু এই কৃষি থেকে আসে। আজকে বিশাল হাওরাঞ্চলে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। এ জন্যই আমরা নিয়ম করেছিলাম জাল যার জলা তার। এই ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।
অনুষ্ঠানে শেষে প্রায় এক হাজার বন্যাকবলিত লোকের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। প্রায় ১২ কেজি ওজনের প্যাকেটে চাল, ডাল, আলু, লবন, আটা, তেল সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রয়েছে। দুই দিনব্যাপী ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে আগামীকাল বুধবার শেষ দিনে প্রায় দুই হাজার ক্ষতিগ্রস্ত লোকের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি শরিফুল আলম।
অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান বলেন, অবিলম্বে ক্ষতিগ্রস্ত হাওর অঞ্চলকে দুর্গত অঞ্চল ঘোষণা করতে হবে। কৃষকের সব কৃষি ঋণ মওকুফ করতে হবে। জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ীভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে।
শরিফুল আলম ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন, আমাদের সামান্য ত্রাণে হয়তো আপনাদের সমস্যা মিটবেনা, কিন্তু এরপরও আমাদের ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচীতে বাধা দেয়া ও বন্ধ করার ষড়যন্ত্র হয়েছে। তবে আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন আমরা আপনাদের পাশে থাকবো। হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা না করায় তিনি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। একইসাথে আগামী দিনের আন্দোলন ও নির্বাচনের জন্য কিশোরগঞ্জবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রস্তুতি নেয়ার কথা বলেন।
দৈনিক দেশজনতা/এমএম
সময়: ২১:২৭