নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীর বনানীতে জন্মদিনের দাওয়াত করে তরুণীকে ধর্ষণ মামলার আসামি বাহাউদ্দিন ইভানের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ১৪ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত। মঙ্গলবার মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু, তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রতিবেদন দাখিল না করা করায় মহানগর হাকিম ফাহাদ বিন আমিন চৌধুরী নতুন করে এই দিন ধার্য করেন।
গত ৪ জুলাই রাতে জন্মদিনের কথা বলে নিজ বাসায় ডেকে নিয়ে তরুণীকে (২১) ধর্ষণ করেন বাহাউদ্দিন ইভান (২৮)। ওইদিন রাতে বনানী ২ নম্বর রোডের ন্যাম ভিলেজের ৫/১ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলার বি-১ নম্বর ফ্ল্যাটে এই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে বলে পরের দিন মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন ওই তরুণী। ইভানের বাবার নাম বোরহান উদ্দিন বেলাল। তিনি বনানীর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর মতলব উত্তরের মোহনপুর গ্রামে।
বর্তমানে ইভানের স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। এই স্ত্রীকে ঘরে আনার আগে আরও একটি বিয়ে করেছিলেন তিনি। পরে ৫ জুলাই ধর্ষণের অভিযোগ এনে বনানী থানায় বাহাউদ্দিন ইভানকে একমাত্র আসামি করে মামলা দায়ের করেন ওই তরুণী। ৬ জুলাই বিকেলে নারায়ণগঞ্জ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন ৭ জুলাই ইভানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ১৩ জুলাই ইভান ধর্ষণের কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের মামলার এজাহারে ওই তরুণী উল্লেখ করেছেন, ১১ মাস আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ইভানের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়। এরই সূত্র ধরে তাদের দেখা-সাক্ষাৎ হতো এবং এক সঙ্গে তারা ঘোরাঘুরি করতেন। চার মাস আগে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ঘটনার দিন রাত নয়টায় ইভান ফোন করে ওই তরুণীকে জন্মদিনের কথা বলে তার বাসায় যেতে বলে। একই সঙ্গে তার মায়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে বলে জানান ইভান।
এজাহারে তরুণী উল্লেখ করেন, ‘আমাদের সম্পর্কের বিষয়টি তার (ইভান) মাকে জানাবে মর্মে জানায় এবং টেলিফোনে তার মায়ের পরিচয় দিয়ে একজন মহিলা আমার সঙ্গে কথা বলেন। আমি তাকে তার মা মনে করি। এরপর আমি আমার আপুর সঙ্গে কথা বলে রাত সাড়ে ১০টায় রিকশা নিয়ে ইভানের বাসার সামনে পৌঁছলে সে আমাকে রিসিভ করে বাসায় নিয়ে যায়।’ ওই তরুণী বাসায় গিয়ে আর কাউকে দেখেননি। জানতে চাইলে ইভান জানায়, তার বাবা-মা অসুস্থ। তাই ঘুমিয়ে আছেন। জোরে কথা বলা যাবে না।
এজাহারে তরুণী উল্লেখ করেন, বাসায় জন্মদিনের অনুষ্ঠানের কোনো আলামত দেখি না। আমি ভয় পাই এবং বাসায় আসতে চাই। কিন্তু, সে বাসায় আসতে দেয় না। সে আমাকে রাতের খাবার ও নেশাজাতীয় দ্রব্য খাওয়ায়। আমি তাকে নিষেধ করলে সে একদিন খেলে কিছু হবে না মর্মে জানায়। এরপর রাত দেড়টায় ইভান তাকে ধর্ষণ করে বলে তরুণী এজাহারে উল্লেখ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি চিৎকার করতে থাকলে সে রাত সাড়ে তিনটায় আমার ব্যাগ রেখে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।’ তরুণীর ভাষ্যে, ‘ব্যাগে তিনটা ড্রেস (২টা জিনস, একটা কুর্তা), ৩টি মোবাইল, চার্জার, সিম কার্ড, মেমোরি কার্ড ও নগদ ১৫ হাজার টাকা ছিল।’ বাসা থেকে রাতে বের করে দেওয়ার পর পথচারী ভদ্রলোকের সহায়তায় তিনি থানায় আসেন বলেও উল্লেখ করেন।
এজাহারে তরুণী আরও বলেন, ‘আসামি আমাকে এর আগেও বিবাহের প্রতিশ্রুতিতে ধর্ষণ করেছে। আমাকে ভয় দেখায়, মুখ খুললে তার নিকট আছে এমন খারাপ ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিবে।’ কিছুটা সুস্থ হয়ে এবং আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কথা বলে এজাহার দিতে দেরি হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন কুড়িগ্রামের ওই তরুণী।
দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ