২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১১:৫৭

প্রযুক্তি-নির্ভরশীলতা : আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ?

আমাদের সমাজের তথা বাংলাদেশের প্রতিটি জনগোষ্টির কিছু রেসম রেওয়াজ বা কৃষ্টি কালচার দিন দিন চলে আসছে দিনের পর দিন। সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে সেগুলো আজ বিলীন প্রায়। মনের অজান্তে আমাদের সমাজ ধার করা সভ্যতার দিকে ঝুকে যাচ্ছে। আধুনিকতার নাম দিয়ে তাদের মাঝে দেখা দিচ্ছে নোংরা সংস্কৃতির চর্চা। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর আবিষ্কার প্রযুক্তির ব্যবহারে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের স্বাচ্ছন্দ্য অর্জন। ইন্টারনেটের অবদানে আমাদের জীবন যেমন সহজ হয়েছে তেমনি বেড়েছে আমাদের কাজের পরিসীমা। আমাদের সময়কে কার্যকর করে জীবনের সফলতা বয়ে আনতে অসামান্য সাহয্য করেছে এই তথ্য প্রযুক্তি।

মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে প্রয়োজন নৈতিক শিক্ষা। যার উপর মানুষ তার বেঁচে থাকার মৌলিক উপাদান খুঁজে পায়। এটাকে আমরা ধর্মীয় শিক্ষাও বলে থাকি। এটা কোণ নির্ধারিত ধর্মকে বুঝায় না। বরং আমাদের পরিবেশের মাঝে সব জিনিসের মাঝেই এটা বিদ্যমান। একবিংশ শতাব্দির শুরুর দিকে আমাদের দেশে এমন এক সামাজিক ব্যাধির প্রাদুর্ভাব দেখা দিল যে, মানুষের মাঝে এই মৌলিক বিষয়টা নিয়ে বিতর্ক দেখা দিচ্ছে।

স্বাভাবিকভাবেই কোন জীব কিংবা জড়ের ধর্ম নেই একথা বলার কোন যৌক্তিকতা নেই। সবার মাঝে এই বিষয়ে জ্ঞান থাকা অত্যাবশ্যক। বিশেষ করে বর্তমান সমাজে আমাদের কোমলমতি শিশু কিশোরদের মাঝে এই বিষয়ের খুব একটা অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। পারিবারিক ভাবে আমরা যখন এমন শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হচ্ছি তখন তারা হয়ে যাচ্ছে সমাজচ্যুত। নীতি নৈতিকতার এই জায়গাটা তারা পূরণ করছে বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে, অন্য দেশের স্যাটেলাইট থেকে, অথবা ইন্টারনেটের মাঝে পাওয়া যাওয়া বিভিন্ন সূত্র থেকেও তারা শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে।

বিজ্ঞানের ছোঁয়া যেমন আমাদের জীবনের ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে নেতিবাচক দিক ও তার থেকে একেবারেই কম না। সমাজের দুষ্টু ব্যক্তিরাও বসে নেই। তারাও তাদের হীন বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ক্ষতি সাধনের চেষ্টায় লিপ্ত আছে। সম্প্রতি এমন একটি বিষয় আমরা লক্ষ্য করেছি ব্লু হোয়েল নামের একটি গেম। আমাদের দেশের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এই গেমে ঝুকে যাচ্ছে। আমরা খুব সম্প্রতি অপূর্বার (হলিক্রস স্কুল এন্ড কলেজ এর ছাত্রী) কথা শুনেছি। যে এই গেমটি খেলে আত্মহত্যার পথ বেঁচে নিয়েছে। এর পর আমরা যে ঘটনাটি দেখে বা শুনে অবাক হলাম তা হল একটি স্বনামধন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়) পড়ুয়া একটি ছেলে এই পথে পা বাড়িয়েছে।

এত কিছুর মাঝেও একটি খবর আশার বানী দিতে পারে যেটি তা হল আমাদের দেশে এখনও বিষয়টি খুব মারাত্মক আকার ধারণ করে নাই। আমাদের প্বার্শবর্তী দেশ ভারতেও এর প্রাদুর্ভাব আমাদের চেয়ে অনেক বেশী। ইউরোপে এ পর্যন্ত ১৫০ এর বেশি এই মরণ খেলার বলিদান হয়েছে।তাই আমাদের উচিত আর কোন অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটার আগেই এর জন্য আমাদের কোমলমতিদের মাঝে এই নৈতিক শিক্ষার জায়গাটা পূরণ করে তাদের মাঝে ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথ সুপ্রসারিত করা।

মো: তরিকুল ইসলাম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

প্রকাশ :অক্টোবর ১২, ২০১৭ ৭:২২ অপরাহ্ণ