নিজস্ব প্রতিবেদক:
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন একাডেমিক নিয়ম অনুযায়ী কোনো শিক্ষার্থী মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিয়ে বি প্লাস অর্থাৎ ৩.২৫ এর বেশি পাবেন না। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৭ আগস্ট বিশ্ববদ্যালয়ের ৪১তম একাডেমিক কাউন্সেলের মিটিংয়ে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নতুন এ নিয়ম অনুযায়ী কোনো শিক্ষার্থী যদি কোনো কারণে আবারো পরীক্ষা দেয় বা মান উন্নয়নের জন্য পরীক্ষা দিয়ে বি প্লাস এর বেশিও পায় তবে তাকে সর্বোচ্চ বি প্লাস দেয়ার নীতি গত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে একজন শিক্ষার্থী পুনঃপরীক্ষা দিয়ে বা মানউন্নয়নের জন্য পরীক্ষা দিয়ে ৩.২৫ এর বেশি পাওয়ার কোনো সুযোগ থাকল না। এ বিষয়ে শিক্ষার্থী সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বাংলা বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে একজন শিক্ষার্থীর শারীরিক, মানসিক, পারিবারিক, আর্থিক অথবা অন্য যেকোন সমস্যা থাকতেই পারে। শিক্ষার্থীরা মানুষ, যন্ত্র নয়। তাছাড়া, যে প্রশ্নে নিয়মিত ব্যাচের সবাই পরীক্ষা দিবে সেই প্রশ্নে মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিলে মানোন্নয়নে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীকে জিপিএ ৩.২৫ এর বেশি না দেয়ার সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। চলমান সেমিস্টারের সাথে তাল মিলিয়ে মানোন্নয়নের জন্য পড়াশোনা করে কোন শিক্ষার্থী ভালো করতে পারলে কেন তাকে সর্বোচ্চ জিপিএ দেয়া হবে না? মেধা ধ্বংসকারী এমন সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানাই।’
জবি শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমীন বলেন, ‘একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী যে রাতদিন কেবল পুঁথিগত বিদ্যা অর্জন করবে তা অবশ্যই নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন জন বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষ হয়ে উঠে। এই সকল শিক্ষার্থীই একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্ণতা দান করে। আর এ সকল সৃজনশীল কর্মকান্ডেরত শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময় ভালো মত পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারেনা। তাছাড়া কেউ শারীরিক অসুস্থতা, কেউবা পারিবারিক সমস্যার কারণে অনেক সময় সামর্থ্য অনুযায়ী ফল করতে পারেনা। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইম্প্রভমেন্ট বা পুনঃপরীক্ষার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু, সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ম করা হয়েছে যে, পুনঃ পরীক্ষা যত ভালই হোক না কেন, ৩.২৫ এর বেশি নম্বর দেওয়া হবে না। আমরা এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা মনে করি এই সিদ্ধান্ত সৃজনশীলতার পথে অন্তরায় এবং স্বৈরাচারী মূলক। এধরনে সিদ্ধান্ত বাতিল না করলে শিক্ষার্থীরা এই অন্যায় সিদ্ধান্ত বাতিলে আন্দোলেনে নামতে বাধ্য হবে। এ সময় শিক্ষার্থীদের রাজপথে নামতে বাধ্য না করার আহ্বান জানান তিনি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জবি একাডেমিক কাউন্সেল কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক জাকারিয়া মিয়া বলেন, ‘আমার এ নিয়মটি করেছি যাতে কোনো অনিয়মিত শিক্ষার্থী ভালো ফলাফল করতে না পারে। এ নিয়মের আগে যে কেউ পরীক্ষা না দিয়ে পরবর্তী বছরের জন্য রেখে দেয়। এতে সে অনেক বেশি সময় নিয়ে ভালো ফলাফল করতে পারে কিন্তু যে শিক্ষার্থীটি নিয়মিত পড়াশুনা করে পরীক্ষা দিল সে খারাপ ফলাফল করছে এতে এক ধরনের বৈষম্য তৈরী হচ্ছে।
এ নিয়মটি কবে থেকে চালু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০১৭-১৮ সাল থেকে কার্যকর হওয়ার কথা আমরা বলেছি। এটা এখন একাডেমিক কাউন্সিলে পাশ হয়েছে, তবে সিন্ডিকেটে পাশ হয়নি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সদস্য সচিব একেএম আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘এরকম একটি নিয়ম আমরা গত একাডেমিক মিটিং এ পাশ করেছি। সেখানে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার্স থেকে কার্যকর হবে তবে অনার্স এ কোন ব্যাচ থেকে বা কোন শিক্ষাবর্ষ থেকে কার্যকর হবে তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। পরবর্তী মিটিং এ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তার কাছে রসায়ন বিভাগের সাম্প্রতিক একটি ফলাফল নিয়ে কথা বললে তিনি বলেন, রসায়ন বিভাগের একটি ফলাফলে এটি কার্যকর করা হয়েছে তবে এটা সংশোধন যোগ্য। যেহেতু এটা এখনো কার্যকর হয়নি তাই এরকম হয়ে থাকলে তা সংশোধন করা হবে।’
জবি রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী ওহিদুজ্জামান বলেন, ‘একাডেমিক এ নিয়মটি গত ৪১তম একাডেমিক কাউন্সিলে অনুমোদন হয়েছে। তবে আমি এখনো কোনো বিভাগে নোটিশ পাঠাইনি। রসায়ন বিভাগের রেজাল্ট নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমি বলতে পারছি না। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। এরপর পরবর্তী একাডেমিক কাউন্সিলে এটা পাশ হয়ে সিনেট এ পাশ হবে এরপর এটি কার্যকর হবে। কবে থেকে এটা কার্যকর হবে জানতে চাইলে তিনি জানান, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে কার্যকর হতে পারে।’
দৈনিকদেশজনতা/এন এইচ