২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৭:৩৭

স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর বধ্যভূমির সন্ধান

নিজস্ব প্রতিবেদক:

মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের ৪৬ বছর পর বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার পূর্বখড়মখালী-খলিশাখালী গ্রামে একটি বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া গেছে। চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ বধ্যভূমি পরিদর্শন করে স্থানটি স্থানীয়দের ঘিরে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। একাত্তরে পাকবাহিনী ও রাজাকাররা এখানে যাদের হত্যা করে তাদের অনেকের পরিচয়ও পাওয়া গেছে। নিহতরা হলেন, খড়মখালী গ্রামের বিমল কান্তি হীরা, রাজদেব হীরা, যোগেন্দ্রনাথ মজুমদার, মহেন্দনাথ মন্ডল, আদিত্য মজুমদার, নীলকমল মন্ডল, জিতেন মজুমদার, খগেন মন্ডল (খোকা), অমীয় চৌকিদারের ভাই সহ আশেপাশের এলাকার নাম না জানা অনেকে।

একাত্তরের সেই বর্বরতার প্রত্যক্ষদর্শী চরবানিয়ারী ইউনিয়নের পূর্ব খড়মখালী গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা গৌর চন্দ্র মজুমদার এবং খলিশাখালী গ্রামের বৃদ্ধা প্রমীলা রানী সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৭১ সালের বাংলা ৫ আঘাঢ় রোববার সকাল ১১টার দিকে বাগেরহাটের রাজাকার রজব আলী ফকিরের নেতৃত্বে পাকবাহিনী এলাকায় গণহত্যা চালায়। তারা বলেশ্বর নদ এবং স্থলপথে চিতলমারী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে হামলা চালায়। গুলির আওয়াজে লোকজন প্রাণভয়ে চরবানিয়ারী ইউনিয়নের খলিশাখালী, পূর্বখড়মখালী গ্রামের মাঠের মধ্যে হোগলা ও নলবনে লুকাতে যায়। এ সময় পাক-মিলিটারিরা এলোমেলোভাবে গুলি চালাতে থাকে।

তারা আরো বলেন, পূর্বখড়মখালী ও খলিশাখালী গ্রামের সীমান্তমধ্যবর্তী মাঠের জমিতে চাষাবাদ করতে গেলে আগে অনেক হাড়গোড় পাওয়া যেত, কিন্তু গ্রামের মানুষ সেটাকে গুরুত্ব দিত না। এখনো মাটির নিচেয় সেই হাড় পাওয়া যায়।

চিতলমারী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ মজিবুর রহমান জানান, ‘বাগেরহাটের কুখ্যাত রাজাকার রজ্জব আলী ফকিরের নেতৃত্বে একাত্তরের ওই দিনে যে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ হয় তার স্মৃতিস্থানটি আজো সংরক্ষণ করতে না পারার ব্যর্থতা আমাদের। স্থানীয় প্রশাসন, রাজনীতিক ও মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ সমন্বয় ও সদিচ্ছা না থাকায় বধ্যভূমিটি এতদিন ধরে অবহেলায় অগোচরে ছিল।’

চরবানিয়ারী ইউপি চেয়ারম্যান অশোক কুমার বড়াল বলেন, ‘শুনেছি একাত্তরে হানাদারদের ভয়ে এই হোগলা ও নলখাগড়া বনে যারা লুকাতে এসেছিল, তাদের অধিকাংশের বাড়ি পার্শ্ববর্তী পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার বানিয়ারীসহ আশোপাশের অন্যান্য গ্রামে। তাই এতো বছর পর নিহতদের সঠিক নাম পরিচয় পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু ওই স্থানে একাত্তরে যে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ হয় এটা সঠিক।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবু সাঈদ বলেন, ‘বধ্যভূমিটি সংরক্ষণসহ অচিরেই নিহতদের তালিকা তৈরীর উদ্যোগ নেয়া হবে। রোজার পরেই এ কাজ শুরু হবে বলে আশা করছি।’

দৈনিক দেশজনতা /এমএইচ

প্রকাশ :জুন ২১, ২০১৭ ১:০৫ অপরাহ্ণ