নিজস্ব প্রতিবেদক:
তীব্র সমালোচনার মুখে আবগারি শুল্কের নাম পাল্টে দেয়াসহ বেশ কিছু পরিবর্তন করার কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অর্থাৎ একই সঙ্গে শুল্কের হারও পাল্টানো হবে। তিনি বলেন, আবগারি শুল্ক নিয়ে নানা ধরনের কথা হচ্ছে। এটা নিয়ে যখন এত কথা হচ্ছে তখন বাজেট পাস করার সময় শুল্কের হার পরিবর্তন করা হবে। আজ রোববার সচিবালয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ২০১৭-২০১৮ সালের বর্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি সই অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। জানা যায়, অর্থমন্ত্রীর আবগারী শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাবের সমালোচনা হয়েছে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকেও। এমনকি কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী অর্থমন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করেছেন। বলেছেন এই শুল্ক বাজেটের তুলনায় বাদামের মত।
মুহিত বলেন, আমাদের আর্থিক খাত নিয়ে বাজারে অনেক সমালোচনা রয়েছে। বিশেষ করে বাজেট দেয়ার পরে সমালোচনা উচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। অনেক সময় হয় কি, যখন আর কোনোকিছু খুঁজে পাওয়া যায় না তখন একটা কিছু বের করতে হয়। সেটা এবার সবচেয়ে বেশি হয়েছে। যেমন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের উপর শো কল্ড আবগারি শুল্ক আদায় করা হয়। নাম ঠিক নয় মনে হয়, নামটা আমরা পরিবর্তন করবো। ইনকাম ট্যাক্সের আদলে কিছু একটা নাম দেয়া হবে।
আবগারি শুল্ক নিয়ে নতুন প্রস্তাবে নিম্ন আয়ের মানুষকের সুবিধা করে দেয়া হয়েছিল বলেও জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, বহুদিন থেকেই যাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে তারা এ শুল্ক দিয়ে থাকে। এবার রেট একটু বেড়েছে কিন্তু সুযোগও বেড়েছে। আগে ২০ হাজার টাকা থাকলেই দিতে হতো। এবার আমরা একেবারে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ফ্রি করে দিয়েছি। তারপরও এটা নিয়ে বাজারে খুবই সমালোচনা হচ্ছে। আমি ইতোমধ্যেই বলেছি যে বাজেটতো প্রস্তাব করা হয়েছে। এটা যখন পাস হবে তখন অনেক কিছুতে পরিবর্তন হয়। বিশেষ করে এ ধরনের রেট ৮০০ হলো না ৫০০ হলো এসব ক্ষেত্রে পরিবর্তন হবে। তবে শুল্ক প্রস্তাব কতটা কমবে সেটা জানতে চলতি মাসের ২৮ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলেও জানান তিনি।
টাকা পাচারের বন্ধে কি ধরনের উদ্যেগ গ্রহণ করছেন এক প্রশ্নে উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, কালো টাকা বাড়ছে বেশ কিছু আইন বা বিধির কারনে। তাই টাকা পাচার বন্ধে অর্থাৎ উৎস বন্ধে আইন বা বিধির সংস্কারসহ বেশকিছু উদোগ গ্রহণ করেছে সরকার। এর মধ্যে অনত্যম হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় জমি দাম সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু সরকারের নির্ধরীত দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে জমি কেনাবেচা হয়। কিন্তু রেজিস্ট্রি করা হয় সরকারের নির্ধারিত মুল্যে। তাই এলাকাভিত্তিক নির্ধারিত মূল্য তুলে দিয়ে তা বাজারভিত্তিক করে দেয়া হবে।
প্রসঙ্গত গত ১ জুন প্রস্তাবিত বাজেটে ১ লাখ টাকার ঊর্ধ্ব থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্ক ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০০ টাকা করার প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। একইভাবে ১০ লাখের ঊর্ধ্ব থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত এক হাজার ৫০০ টাকার বদলে ২ হাজার ৫০০ টাকা, ১ কোটি ঊর্ধ্ব থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ৭ হাজার ৫০০ টাকার বদলে ১২ হাজার টাকা এবং ৫ কোটি টাকার ঊর্ধ্বের হিসাবে ১৫ হাজার টাকার বদলে ২৫ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
সংজ্ঞা অনুযায়ী আবগারি কর আরোপ করা হয় মানুষের জন্য ক্ষতিকর পণ্যে। প্রথম দিকে মদজাতীয় পণ্য, সিগারেটের ওপর এই কর আরোপ করা হয়েছিল। পরে ব্যাংক হিসাবসহ বহু পণ্যেই এটি আরোপ করা হয়। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকারের আমলে ভ্যাট আরোপের আগ পর্যন্ত আবগারি শুল্কই ছিল সরকারের রাজস্ব আয়ের প্রধান উৎস।
দৈনিক দেশজনতা/ এমএইচ