দৈনিক দেশজনতা ডেস্ক:
পাপুয়া নিউগিনির মাউন্ট কার্সটেন্জ পিরামিড অভিযানে বেস ক্যাম্পে আটকা পড়া এভারেস্টজয়ী প্রথম বাংলাদেশি মুসা ইব্রাহীমকে উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার ইন্দোনেশিয়ায় অবস্থিত দূতাবাসের মাধ্যমে হেলিকপ্টার পাঠিয়ে তাকে উদ্ধার করা হয়। সেভেন সামিট অভিযানের অংশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়া ও ওশেনিয়া মহাদেশের সর্বোচ্চ ৭ পর্বত জয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের তিন সদস্যের টিমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মুসা ইব্রাহীম। মুসার উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে তার পরিবার।
এর আগে শনিবার মুসা স্যাটেলাইট ফোন থেকে তাদের খাবার শেষ হওয়ার খবর পাঠান। মুসার স্ত্রী উম্মে সরাবন তহুরা সংবাদ মাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মুসার সঙ্গে সত্যরূপ ও নন্দিতা নামের আরো দুই পর্বতারোহী রয়েছেন।
উম্মে সরাবন তহুরা জানান, মুসা বেজ ক্যাম্পে আটকে পড়েছেন। তাদের খাবারও ফুরিয়ে গেছে। আবহাওয়া এতটাই প্রতিকূল যে তাদের উদ্ধার করতে হেলিকপ্টারও যেতে পারছে না। মুসার এ বিপদের খবর আরো আগে জানা যায় তার বোন নূর আয়েশার ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে।
গত ১৬ জুন মুসা ইব্রাহীম নীলসাগর গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান হাবিব লেলিনকে বেস ক্যাম্পে খাদ্য সঙ্কটের কথা জানিয়ে এসএমএস এর মাধ্যমে সাহায্য চান। ওই ক্ষুদে বার্তায় মুসা লিখেছেন, ‘আমরা বেস ক্যাম্পে খাবার সঙ্কটে আছি, আমাদের মালামাল বহনকারীরা খাবার সঙ্কটের কারণে চলে গেছেন। তাই জরুরি ভিত্তিতে আমাদের হেলিকপ্টার দরকার। যার ভাড়া ৬৫০০ ডলার। আমি এখন কি করব? উত্তরে তাকে ‘যত টাকা প্রয়োজন হয় খরচ করতে বলেন নীলসাগর গ্রুপের চেয়ারম্যান। সেই সঙ্গে তাকে সব রকমের সহযোগিতা অব্যাহত ভাবে দেওয়ারও আশ্বাস দেন লেলিন। কিন্তু এরপর থেকে মুসা ইব্রাহীমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ প্রতিস্থাপন করা যায়নি।
এদিকে মুসা ইব্রাহীমের বোন নূর আয়েশা জানিয়েছেন, মুসা ভালো আছেন। আবহাওয়া প্রতিকূল হওয়ায় সেখানে হেলিকপ্টার পৌঁছাতে পারেনি। বেস ক্যাম্পে তাদের জন্য যথেষ্ট খাবার এখনও আছে। তারা ধারণা করেছিলেন হয়তো তাদের খাবার ফুরিয়ে যাবে। সে কারণে তারা যথেষ্ট খাবার নেই বলে জানিয়েছেন।
এদিকে ‘মুসার জীবন সঙ্কটাপন্ন’ শিরোনামে তার বড়বোন নূর আয়েশার বক্তব্য টুইস্ট করে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আয়েশা তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন আমি মুসার অভিযান সম্পর্কে কারো সঙ্গে কোনো কথা বলিনি। তারা টুইস্ট করে আমার বক্তব্য প্রকাশ করেছেন। তিনি এটাকে পিকুলিয়ার বলেও মন্তব্য করেন।
সেভেন সামিট অভিযানের অংশ হিসেবে ওশেনিয়া (পাপুয়া নিউগিনি, ইন্দোনেশিয়া) মহাদেশের সর্বোচ্চ ৭ পর্বত মাউন্ট কার্সটেঞ্জ পিরামিডে অভিযানে রয়েছেন মুসা ইব্রাহীম। তার এবারের অভিযানের নাম ‘নীলসাগর গ্রুপ মাউন্ট কার্সটেঞ্জ পিরামিড অভিযান।’ এর পৃষ্ঠপোষকতা করছে বাংলাদেশের কৃষিখাতের অন্যতম প্রতিষ্ঠান নীলসাগর গ্রুপ। এ অভিযানের আয়োজন করেছে এভারেস্ট একাডেমি ও নর্থ আলপাইন ক্লাব বাংলাদেশ।
গত ২৯ মে মুসা ইব্রাহীম ইন্দোনেশিয়া হয়ে পাপুয়া নিউগিনি’র নাবিরে পৌঁছান। এরপর অভিযাত্রীরা ১৬ হাজার ২৩ ফুট উঁচু মাউন্ট কার্সটেন্জ পিরামিড চূড়া জয়ের পথে বেস ক্যাম্পে অবস্থান নেন। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে সেখানে তাদের খাদ্য সঙ্কট দেখা দেয়।
এর আগে তিনি ২০১০ সালের ২৩ মে এশিয়া ও বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট এভারেস্ট (উচ্চতা ২৯,০৩৫ ফুট), ২০১১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর আফ্রিকার সর্বোচ্চ মাউন্ট কিলিমানজারো (উচ্চতা ১৯,৩৪১ ফুট), ২০১৩ সালের ২৬ জুন ইউরোপের সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট এলব্রুস (উচ্চতা ১৮,৫১০ ফুট), ২০১৪ সালের ২৩ জুন উত্তর আমেরিকার সর্বোচ্চ (২০ হাজার ৩২০ ফুট) পর্বত মাউন্ট ডেনালি জয় করেন। ২০১২ সালের ফেব্রয়ারিতে দক্ষিণ আমেরিকার সর্বোচ্চ (২২ হাজার ৮৪১ ফুট) পর্বত মাউন্ট অ্যাকঙ্কাগুয়া অভিযানে আবহাওয়া খারাপ থাকায় ২১ হাজার ফুট উচ্চতা থেকে ফিরতে বাধ্য হয়েছিলেন মুসা।
দৈনিক দেশজনতা/ এমএইচ