২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৬:১৬

ইতিহাসের সবচেয়ে বিতর্কিত বাজেট

নিজস্ব প্রতিবেদক:

২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। গত ১ জুন, বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তার জীবনের ‘বেস্ট’ এই বাজেট উত্থাপন করেন। নতুন বাজেটের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। এটি দেশের ৪৬তম বাজেট।  আওয়ামী লীগ সরকারের ১৭তম আর অর্থমন্ত্রী হিসেবে মুহিতের ১১তম বাজেট  প্রস্তাব। এরই মধ্যে  ৬ জুন, মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে সর্ব সম্মতিক্রমে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট পাস হয়েছে। এখন সংসদে চলছে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনা। অর্থমন্ত্রীর ‘বেস্ট’ বাজেটের ঘাটতি রাখা হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। যা মূল বাজেটের এক চতুর্থাংশেরও বেশি। অপরদিকে ব্যাংক অ্যাকাউন্টধারীদের কাছে থেকে ‘আবগারি শুল্ক’ হিসাবে হাজার কোটি টাকা আদায় করার চমৎকার একটা আইডিয়া দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এছাড়া অভিন্ন ১৫% ভ্যাট আগামী ১ জুলাই থেকে আদায় করবে সরকার। সব মিলিয়ে বাজেটকে অর্থমন্ত্রী তার জীবনের ‘বেস্ট’ বাজেট মনে করলেও দেশের সচেতন মানুষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটকে ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বিতর্কিত বাজেট’ হিসেবেই দেখছেন। কারণ এবারই প্রথম কোনো অর্থনীতিবিদ আওয়ামী লীগ সরকারের বাজেটের পক্ষে মতামত দেননি। বরং সব অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষই বাজেটের বিরুদ্ধে তাদের মতামত দিয়েছেন। শুধু মতামত দিয়েছেন বলা যাবে না, বরং ‘গণবিরোধী’ ও ‘জনগণের পকেট টাকার বাজেট’ উল্লেখ করে কঠোর ভাষায় এর সমালোচনা করেছেন।

জাতীয় সংসদে ১ জুন বাজেট পেশের পর পরই দেশজুড়ে শুরু হয় এর বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড়। শুধু দেশ নয়, দেশের বাইরে থাকা প্রবাসীরাও বাজেটের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন। বিশেষ করে প্রযুক্তির এ যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বাজেট নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা এ বাজেট প্রসঙ্গে বলেছেন, সরকার এখন জনগণের পকেটে হাত দিয়েছে। শেষ রক্তবিন্দু চোষার বাজেট এবং এটি সরকারের নয় বরং আওয়ামী লীগের বাজেট বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতসহ অন্যরাও প্রস্তাবিত বাজেটের ত্রুটি তুলে ধরে এটিকে জনবিরোধ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। সরকার বিরোধী হিসেবে শুধু যে বিএনপি বা ২০ দলের নেতারা বাজেটের সমালোচনা করেছেন তা কিন্তু নয়। বরং এবারই প্রথম, দেশের সব ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা এক বাক্যে বাজেট ব্যবসাবান্ধব ও কর্মসংস্থানমুখী নয় এবং বিদেশে অর্থপাচার বাড়বে বলে বাজেটের বিরুদ্ধে কড়া বক্তব্য দিয়েছেন। যা দেশে ইতিহাসে বিরল। সেই সাথে প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য নয় এবং অর্থ পাচারের সহায়ক হবে বলে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও মন্তব্য করেছেন। আর আবগারি শুল্ককে তো অবৈধ এবং অসাংবিধানিক বলেও মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদরা। আওয়ামী লীগ পন্থি কিংবা বাম-ডান অর্থনীতিবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি-সবাই বাজেটের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। এ বাজেট সরকারের টাকা আয় ও ভোগের বাজেটও মন্তব্য করা হয়েছে। এতে মূল্যস্ফীতি বাড়বে, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে না, অর্থ পাচারের সুযোগ তৈরি হয়েছে ইত্যাদি।

এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন ১৪ দলও অবশেষে প্রস্তাবিত বাজেটকে সংশোধন করার প্রস্তাব করেছে। ১৪ দলের মুখপাত্র, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, বাজেটের কিছু বিষয় জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে ব্যর্থ হবে। আর প্রধানমন্ত্রীও শেষ পর্যন্ত বলেছেন, বাজেটে সমস্যা থাকলে সমাধান হবে। তারপরও থামেনি সমালোচনা। সংসদেও আবগারী শুল্ক নিয়ে কাঠোর বিতর্কের মুখে পড়তে হয় অর্থমন্ত্রীকে। বাধ্য হয়ে অর্থমন্ত্রীও তার মতামত বদলেছেন। তার ‘বেস্ট’ বাজেটে সরকারের জনসমর্থন কমেছে এমপিদের এমন মন্তব্যেও পর অর্থমন্ত্রী সংসদকে বলেছেন, বাজেট আলোচনার শেষের দিকে আবগারি শুল্ক সংশোধনের বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।

বাজেট বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের এ বাজেট উত্থাপনের পর সমালোচনার মুখে মন্ত্রীদের ‘ইউটান’ নেয়া তাদের দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ বৈকি? তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফসহ দলের বেশ ক’জন নেতা প্রস্তাবিত বাজেটকে সরকারের ভিশন ২০২১ এবং উন্নয়নমুখী বলে দাবি করেছেন। এই দলে আছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও।

এবার এক নজরে দেখে নেয়া যাক-২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের উল্লেখযোগ্য দিকগুলো ‘উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ: সময় এখন আমাদের’ শিরোনাম দেয়া হয়েছে নতুন বাজেট। প্রস্তাবিত বাজেট চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট থেকে ২৬ শতাংশ বেশি। চলতি বাজেট হচ্ছে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট ৩ লাখ ১৭ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা থেকে আগামী বাজেটের আকার বেশি প্রায় ৮৪ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে ব্যয় মেটাতে সরকারি ও বিদেশি অনুদানসহ আয়ের পরিমাণ ধরা হয়েছে ২ লাখ ৯৩ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। মোট ঘাটতি ১ লাখ ১২ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে (এডিপি) ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। সরকারের অর্থায়নে অভ্যন্তরীন ব্যবস্থা থেকে ঋণ ধরা হয়েছে ৬০ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। উন্নয়ন বাজেটের মোট আকার ধরা হয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ২৫২ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগে ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ। এরপরই বরাদ্দ পেয়েছে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাত- ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ। স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ। প্রস্তাবিত অনুন্নয়ন বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ১৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সরকারের সুদ পরিশোধে, ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ। এরপরই বরাদ্দ পেয়েছে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাত, ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ। সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। পেনশন ও অবসর ভাতায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ।

বাজেটের সবচেয়ে সমালোচিত ইস্যু

১. আবগারি শুল্ক বৃদ্ধি ২. অভিন্ন ১৫% মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট ৩. ঘাটতির বিশাল অংক ৪. ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধ

আবগারি শুল্ক আরোপ
আবগারি শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব বাজেটকে সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত করেছে। কারণ এখানে দেশের সাধারণ মানুষের ব্যাংকে রাখা টাকা সরকার নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব করেছে। এতে দেশব্যাপী কঠোর সমালোচনা শুরু হয়। আতঙ্কে অনেকেই ব্যাংকে লেনদেন না করার কথাও ভাবছেন। যাদের টাকা ব্যাংকে রাখা আছে তারা তা তুলে নিয়ে বিকল্প কিছু করার কথা ভাবছেন। কিন্তু যারা প্রবাসী তাদের ক্ষোভ সবচেয়ে বেশি। কারণ তারা ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে টাকা পাঠান। কিন্তু তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে বাড়তি টাকা নেয়ার বাজেট প্রস্তাবে ফুঁসে উঠেছেন। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী মাত্রই জেনে থাকবেন।  কী আছে আবগারি শুল্ক প্রস্তাবে?

অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব হচ্ছে- ব্যাংক হিসাবে কমপক্ষে ১ লাখ টাকা থাকলে আবগারি শুল্ক আগে যা পরিশোধ করা হতো তা থেকে বাড়বে। ব্যাংক হিসাবে ১ লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বছরের যে কোনো সময় জমা দিলে বা তুললে আবগারি শুল্ক (এক্সাইজ ডিউটি) দিতে হবে ৮০০ টাকা, যা বর্তমানে রয়েছে ৫০০ টাকা। আর ১০ লাখের ওপর থেকে এক কোটি টাকায় বর্তমানে দেড় হাজার টাকা আবগারি শুল্ক দিতে হয়। এখন তা বাড়িয়ে আড়াই হাজার টাকা করা হয়েছে। এক কোটির ওপর থেকে পাঁচ কোটি রাখার ক্ষেত্রে বর্তমানে আবগারি শুল্ক দিতে হয় বছরে সাড়ে সাত হাজার টাকা। শুল্কহার বাড়ানোয় দিতে হবে ১২ হাজার টাকা। আর পাঁচ কোটি টাকার ওপরে থাকলে এক বছরে আবগারি শুল্ক ১৫ হাজার টাকার পরিবর্তে ২৫ হাজার টাকা দিতে হবে। বছরে একবার এই হার কাটা হবে। বছরের যেকোনো সময় অ্যাকাউন্টে ডেবিট-ক্রেটিড হলেই এ শুল্ক কার্যকর হবে। এই আবগারি শুল্কের মাধ্যমে নতুন অর্থ বছরে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় করার স্বপ্ন অর্থমন্ত্রীর।

কীভাবে আদায় হচ্ছে আবগারি শুল্ক?
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সরকার বছরের পর বছর ধরে অনেকটা লুকিয়েই আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক কেটে রাখছে। ব্যাংক গ্রাহকেরা এসব জেনেও কিছু করতে পারছেন না। মাশুল কাটা নিয়ে গ্রাহকদের অভিযোগ থাকছে বছরজুড়েই। বিভিন্ন সময়ে বাজেটে আবগারি শুল্ক বাড়ানো হলেও এখন পর্যন্ত মাত্র দুবার ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক আরোপের ঘোষণা বাজেটে উল্লেখ ছিল। বাজেটের বাইরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আলাদা করেও আবগারি শুল্ক বাড়ায়। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে আমানতকারীদের জানানো হয়নি।এই অবস্থায় সাবেক ব্যাংকার ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক আরোপ অনৈতিক ও বে আইনি। এমনকি তারা ব্যাংক আমানতের ওপর সব ধরনের আবগারি শুল্ক তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। ১৯৯১ সালে ভ্যাট চালুর আগে আবগারি শুল্ক ও বিক্রয় কর ছিল রাজস্ব আয়ের একটি বড় উৎস। ১৯৯১ সালে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট আইন চালুর পর আবগারি শুল্ক ক্রমান্বয়ে প্রায় সবই বাতিল করা হয়। রেখে দেওয়া হয় ব্যাংক আমানত ও বিমানের টিকিটের ওপর। ১৯৯১-৯২ অর্থবছরের বাজেটে সাইফুর রহমান ১ লাখ টাকা পর্যন্ত আমানতের ওপর ১৫০ টাকা আবগারি শুল্ক আরোপ করেন। এরপর থেকে ছয়বার এই শুল্কের পরিমাণ বাড়ানো হলেও কখনো বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করা হয়নি। ফলে আমানতকারীরা জানতেনই না এই শুল্কের কথা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, কর পরিশোধ করার পর বৈধ টাকা রক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কিন্তু রক্ষার পরিবর্তে আবগারি শুল্কের নামে জোর করে টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে। রাষ্ট্রের এই অধিকার নেই, এটা অবৈধ, সংবিধানেরও পরিপন্থী। এটি বৈধ সম্পত্তি আত্মসাৎ করার মতো ঘটনাই। এটি অবশ্যই বে আইনি। ইব্রাহিম খালেদ আরও বলেন, এতদিন বিষয়টি নজরে আসেনি। কারণ আগে হিসাবে টাকা থাকলে কিছু সুদ পাওয়া যেত। এখন সুদের হার কম, এই টাকা কাটা হলে আসল টাকাও কমে যাবে। তাই ব্যাংকের হিসাবের ওপর কোনো ধরনের আবগারি শুল্ক কাটা বৈধ হবে না। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন অর্থবছরে আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক খাতে রাজস্ব আয় হবে মাত্র ৯২৫ কোটি ৭০ লাখ ৮২ হাজার ৭০০ টাকা। এই অর্থ মোট রাজস্ব আয়ের মাত্র দশমিক ৩১ শতাংশ। আর এই খাতের আয়ের মধ্যে ৫৮৪ কোটি টাকাই আসবে স্বল্প আমানতকারীদের কাছ থেকে। অর্থাৎ, ১ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকার মধ্যে। অন্যদিকে নতুন প্রস্তাব কার্যকর না করলে এই খাতে আদায় হবে প্রায় ৭১৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ, আবগারি শুল্ক হার বৃদ্ধি করে সরকার বাড়তি আয় করবে ৩৫৬ কোটি টাকা।

অভিন্ন ১৫% মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট
দেশের ব্যবসায়ীরা ভ্যাট দুই ডিজিট অর্থাৎ ১০ শতাংশের নীচে রাখার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। পণ্যের ক্যাটাগরি অনুযায়ী ৩%, ৬% ও ৯%-এর সø্যাব করার পক্ষে মত দিচ্ছিলেন অনেকে। কিন্তু  ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পণ্য ও সেবা বিক্রির ওপর অভিন্ন ১৫ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। যা আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে। বাজেটে ১৫% হারে ভ্যাট আদায়ের মাধ্যমে ৯১ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের আশা করছেন অর্থমন্ত্রী। যা এনবিআর’র মাধ্যমে তার ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ পরিকল্পনার ৩৬.৮ শতাংশ। প্রস্তাব অনুযায়ী মূল্য সংযোজন কর এক ও অভিন্ন হারে প্রয়োগ করা হবে এবং আগামী তিন বছর তা অপরিবর্তিত থাকবে। অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় বলেন, “১৯৯১ সাল থেকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপিত হয়েছে এবং তাতে ভোক্তারা ও ব্যবসায়ীরা অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। আমি ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশেই বহাল রাখার প্রস্তাব করছি।”

বাজেটের এক চতুর্থাংশ ঘাটতি
প্রস্তাবিত বিশাল বাজেটের এক চতুর্থাংশের বেশি ঘাটতি রাখা হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে মোট ঘাটতির পরিমাণ ১ লাখ ১২ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। এতে আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা।  অপরদিকে নতুন প্রস্তাবিত বাজেট চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা থেকে ২৬ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট ৩ লাখ ১৭ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা থেকে আগামী বাজেটের আকার বেশি প্রায় ৮৪ হাজার কোটি টাকা। এবার মূল বাজেটের যে আকার ধরা হয়েছে, তা বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১৮ শতাংশ। গতবছর প্রস্তাবিত বাজেট ছিল জিডিপির ১৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ। বাজেটে ব্যয়ের প্রায় ৭২ শতাংশ অর্থ রাজস্ব খাত থেকে আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ ৮৭ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা আদায় করা যাবে বলে আশা করছেন অর্থমন্ত্রী। এনবিআর বহির্ভূত লক্ষ্যমাত্রা- ৩৯ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা এবং কর বহির্ভূত প্রাপ্তি- ৫ হাজার ৪০৯ কোটি। অর্থমন্ত্রী সংসদের সামনে যে বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেছেন, তাতে আয় ও ব্যয়ের হিসাবে সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে ১ লাখ ১২ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। এই ঘাটতি পূরণে সহায় অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক ঋণ। ঘাটতির এই পরিমাণ মোট জিডিপির ৫ শতাংশের মতো। এছাড়া বিশাল অংকের ঋণ পরিশোধ ও নতুন বাজেটের ঘাটতি মেটাতে ঋণের তথ্য আগেই আলোচনায় এসেছে। যা বিভিন্ন মহলে বাজেটের খারাপ দিক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এদিকে প্রতিবারের ন্যায় প্রস্তাবিত বাজেটের শুল্ক বাড়ানোর কারণে স্বাভাবিকভাবেই মানুষে নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের পণ্যের দাম বাড়বে।

সেসব পণ্যের দাম বাড়বে
বাজেটের কারণে যেসব পণ্যের দাম বাড়বে তার মধ্যে রয়েছেÑ বিভিন্ন ধরনের মসলা, যেমন- গোলমরিচ, দারুচিনি, এলাচ, জিরা, লবঙ্গ, ফুড সাপি¬মেন্ট, সালফিউরিক এসিড। আমদানি করা প্রসাধনী, সাবান, লোশন, সুগন্ধি, গ¬াস, স্টিলের টেবিল, কিচেনের পণ্যের দাম কিছুটা বাড়বে। সেই সাথে অটোরিকশা, থ্রি হুইলার, চার স্ট্রোক বিশিষ্ট সিএনজি অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ১৬০০ সিসির ঊর্ধ্বে আমদানি করা গাড়ি এবং বিভিন্ন ধরনের মূলধনী যন্ত্রপাতি, আমদানি করা কৃষি যন্ত্রপাতি, তামাক ও তামাকজাত পণ্য। আমদানি করা সোলার প্যানেল। এছাড়াও শিশুখাদ্য, মিষ্টি বিস্কুট, চকলেট, ভ্যাম, জেলি, সিমকার্ড, রঙিন টেলিভিশন, টেলিভিশনের পার্টস, বিট লবন, সিলিং ফ্যান, দেয়াল ফ্যান, পটেটো চিপস, প্লাস্টিকের বক্স, পলিমার বস্তা, ওয়েফার, আমদানীকৃত শুটকি মাছ, আপেল, আগুর, ফলের রস, সিমেন্ট, টুথপেস্ট, ব্রাশ, ডিটারজেন্ট পাউডার, মশার কয়েল, দিয়াশলাই, অ্যারোসল, চামড়া ও কাপড়ের তৈরি ব্যাগ,  জুতা তৈরির উপকরণ, স্যানিটারি ন্যাপকিন, হ্যান্ড ব্যাগ, শপিং ব্যাগ, স্যুটকেস, পশমি কম্বল, ফেব্রিক্স, আসবাবপত্র, শেভিং রেজার, জুয়েলারি, অ্যামিটেশনের গহনা, হিরা ও কাচের আয়না।

ভ্রমণেও খরচ বাড়বে
দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) আওতাভুক্ত দেশগুলোর বাইরে ভ্রমণের ক্ষেত্রে দেশ ভেদে আবগারি শুল্ক দিগুণ করে দুই হাজার ও তিন হাজার টাকা করা হয়েছে। তবে অন্যদিকে কিছু পণ্যের শুল্ক ও কর কমানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। সে হিসেবে সিরামিকস, ব্যাটারি, দেশীয় কম্পিউটার-ল্যাপটপ, দেশে তৈরি মোবাইল, পাঁচ হাজার লিটারের নিচের এলপিজি সিলিন্ডার। মৎস্য, পোলট্রি ও ডেইরির খাদ্য ও উপকরণ, আমদানি করা অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, ওষুধ। ১৬০০ সিসি পর্যন্ত মোটরগাড়ি এবং হাইব্রিড গাড়ির দাম কমার আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া সার, বীজ ও কীটনাশকের দামও কমতে পারে।

বাজেট সরকারের আয় করার ও ভোগের: ড. সালেহউদ্দিন
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও অর্থনীতিবিদ ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাজেটের যে গাণিতিক হিসাব রয়েছে, তা থেকে এবারের বাজেটও ভিন্ন কিছু নয়। এই বাজেট হচ্ছে সরকারের টাকা আয়ের বাজেট। সরকার টাকা আয় করবে আর সরকারই ভোগ করবে। এ বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলেও মন্তব্য করেছেন ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। আগামী অর্থবছরের জন্য ধার্যকৃত ৭ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন এ অর্থনীতিবিদ। ড. সালেহউদ্দিন বলেন, বেসরকারি বিনিয়োগের কোনো ক্ষেত্র তৈরি হবে না। শিল্পের উন্নয়নে কোনো উদ্যোগ নেই। এক পোশাক শিল্পের উপরেই বাজেটে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এতে অন্য শিল্প গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছে। শিল্প-বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থান বাড়বে না উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর বলেন, বিশাল বাজেটের জন্য সাধারণ মানুষের পকেট কেটে টাকা আদায় করা হবে। কিন্তু সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে বাজেটে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই।

বিনিয়োগ কমবে ও অর্থ পাচার বাড়বে: এফবিসিসিআই
প্রস্তাবিত বাজেটের ফলে দেশে  বিনিয়োগ কমবে ও অর্থ পাচার বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দেশের ৯টি শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠন। প্রস্তাবিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটের ওপর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে এমন আশঙ্কার কথা জানান শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা। এফবিসিসিআইসহ দেশের ব্যবসায়ীদের ৯টি শীর্ষ সংগঠন বাজেটের প্রতিক্রিয়া জানাতে সংবাদ সম্মেলনে তাদের বক্তব্য তুলে ধরে। এসময় ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংকিং চ্যানেল থেকে সরকারের বড় অংকের ঋণ নেয়ার ঘোষণায় প্রাইভেট সেক্টরের বিনিয়োগ প্রাপ্তির সুযোগ কমে যাবে। অন্যদিকে ব্যাংকে রাখা আমানতের ওপর বাড়তি আবগারি শুল্ক আরোপের ফলে অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। মূলধন গঠন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান তথা সামগ্রিক ব্যবসায়িক কার্যক্রমের জন্য গ্রাহকরা ব্যাংক লেনদেন করে থাকেন মন্তব্য করে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বাজেটে ব্যাংকে অর্থ জমা রাখার ক্ষেত্রে আবগারি শুল্ক বিভিন্ন হারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে আমানতকারী আমানত রাখতে নিরুৎসাহিত হবেন। এছাড়া ব্যাংক চ্যানেলে না গিয়ে ইনফরমাল চ্যানেলে অর্থ চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা অর্থনীতির জন্য শুভ নয়। স্বাস্থহানিকর পণ্য ছাড়া অন্য কোনো খাতে আবগারি শুল্ক আরোপ করা সমীচীন নয় বলেও দাবি করেন তিনি। ব্যাংক খাত থেকে আবগারি শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবি জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের বার্ষিক লেনদেন বর্তমান ৩০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৪০ লাখ করার প্রস্তাবকে অপর্যাপ্ত আখ্যা দিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ক্ষুদ্র, গ্রামীণ উদ্যোগ, কুটির শিল্প, ইত্যাদি প্রান্তিক খাতের বিকাশে এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বা দোকানদারদের হিসাবরক্ষণের সক্ষমতার সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করে অব্যাহতির এ সীমা আরো বাড়ানো উচিত। লেনদেনের (টার্নওভার) ট্যাক্স এক শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাবের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, এটি পূর্বের ন্যায় রাখতে হবে। প্রস্তাব করেন টার্নওভারের সীমা পাঁচ কোটি বা যৌক্তিক করার। মূসক আইনের ৩১ ধারায় বর্ণিত তিন অংশের অগ্রিম কর সম্পর্কিত বিধান বিলুপ্ত করারও দাবি জানান এফবিসিসিআই সভাপতি। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, আমরা হ্রাসকৃত হারে বিভিন্ন স্তরে মূসক হার নির্ধারণের প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু বাজেটে ১৫ শতাংশ সিঙ্গেল রেট করা হয়েছে। এতে দেশের শিল্পখাত, বিশেষ করে এসএমই ও প্রান্তিক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যেসব ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ব্যবসায়ী হিসাবপত্র ঠিকভাবে রাখতে না পারায় রেয়াত নিতে সক্ষম নন তাদের ওপর করের বোঝা বেড়ে যাবে, যার প্রভাব পড়বে ক্রেতার ওপর। এতে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পাবে। এজন্যে ভ্যাটে হার নামিয়ে আনার দাবি জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আবুল কাশেম খান, বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিসিআই) সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, বিকেএমইএ সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান, প¬াস্টিকদ্রব্য প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির সভাপতি জসিম উদ্দিন, ঢাকা উইমেন চেম্বারের সভাপতি আনিকা আগা, চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম, এফবিসিসিআইর প্রথম সহ-সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, সহ-সভাপতি মুনতাকিম আশরাফ প্রমুখ।

বাজেট ‘পোশাক শিল্পবান্ধব নয়’: বিজিএমইএ
২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ‘পোশাক শিল্পবান্ধব নয়’ এবং বাজেটে পোশাক শিল্প মালিকদের ‘ন্যায্য দাবি রক্ষা হয়নি’ বলেও অভিযোগ করেছে পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ। কারওয়ান বাজারে বিজিএমইএর সম্মেলন কক্ষে বাজেট নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান এ অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে পোশাক শিল্পের বিভিন্ন প্রতিকূলতার তথ্য তুলে ধরে সিদ্দিকুর রহমান এ খাতের উৎসে কর দুই বছরের জন্য বাতিলের দাবি জানান। একই সাথে করপোরেট কর কমিয়ে আগামী ৫ বছরের জন্য ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব দেন তিনি। সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “এখন পর্যন্ত আমরা যা দেখছি, তাতে বলতে পারব না যে এই বাজেট তৈরি পোশাক শিল্পবান্ধব। তবে এখনও অনেক সময় আছে। এই সময়ের মধ্যে আমাদের দাবি রক্ষা করেন, তখন আমরা বলতে পারব যে এই বাজেট পোশাক শিল্পবান্ধব।” তিনি বলেন, পোশাক শিল্পকে বিভিন্ন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। ইউরোর দরপতন, ব্রেক্সিট এবং গ্যাস সঙ্কটসহ বিভিন্ন কারণে এ খাতে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ১৮ শতাংশ। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, আগামী দুই বছর তৈরি পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর প্রত্যাহার করতে হবে। এছাড়া এ শিল্পের করপোরেট ট্যাক্স হার ২০ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ করার দাবি জানাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, শিল্পে নতুন বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে শিল্প ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে রাজস্ব নীতিসহ অন্যান্য সব নীতি কৌশল ৫ বছরের জন্য স্থিতিশীল রাখতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে নতুন বাজারে প্রবেশের চেষ্টা করেও তাতে আশাব্যাঞ্জক ফল না পাওয়ার কথা জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, গত ১০ মাসে নতুন বাজারে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ১ দশমিক ২১ শতাংশ। গত বছর এ প্রবৃদ্ধি ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ছিল। এক্ষেত্রে নতুন বাজারে রপ্তানি বাড়াতে ৫ শতাংশ নগদ সহায়তার দাবি জানান সিদ্দিকুর রহমান। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএ সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নাসির, এম এ মান্নান কচি, ফারুক হাসান ও সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী।

সুশীল সমাজের প্রতিক্রিয়া

বাজেট বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বান্ধব নয়: সিপিডি
২০১৭-১৮ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বান্ধব নয় বলে মন্তব্য করেছে সেন্টার পর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। শুক্রবার সকালে রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে বাজেট পরবর্তী পর্যালোচনামূলক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘এবারের বাজেট যেসব কাঠামোর উপর নির্ভর করে তৈরি করা হয়েছে তা অত্যন্ত দুর্বল। এই বাজেট বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বান্ধব নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘রাজস্ব আদায়, বার্ষিক উন্নয়ন বরাদ্দ (এডিবি) ও বৈদেশিক সহায়তা এসবের কোনোটাই বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে পাওয়া যাবে না। ফলে এই বাজেট একটি আর্থিক ভ্রম। বাজেটের সামগ্রীক কাঠামো ভোগ, বিনিয়োগ ও মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব পড়বে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয়সহ গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যানে বিভ্রান্তি রয়েছে। এক বছরে রাজস্ব আদায় ৪০ শতাংশ বাড়ার কোনো সুযোগ নেই। বিদেশি সাহায্য ও রাষ্ট্রীয় খরচ দ্বিগুণের বেশি করাও অসম্ভব।

এ বাজেট লুটপাটের: খালেদা জিয়া
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে আওয়ামী লীগের বাজেট বলে অভিহিত করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘এ বাজেট লুটপাটের বাজেট। এই বাজেট অর্থমন্ত্রীর নয়, শেখ হাসিনার বাজেট।’ খালেদা জিয়া বলেন, ‘এটি নিজেদের পকেট ভারী করার বাজেট। এই বাজেট অর্থমন্ত্রী তৈরি করেননি, এটি শেখ হাসিনার কথামতো তৈরি করা হয়েছে ।’ বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘বাজেটের কী দরকার? প্রত্যেক বারই তো বাজেট করা হয় এবং সে বাজেট শেষ হয়।’ বাজেটের অংক নিয়ে তিনি বলেন, “এই বাজেট কি আর বাজেট থাকবে না কি? পরে দেখবেন, এটা একটা প্রকল্প, যে প্রকল্পে এখন আছে অন্তত ১০ হাজার কি ২০ হাজার কোটি টাকা। সেটা দেখবেন ৩০ হাজার কোটি টাকা করেছে। আবার বাড়াবে, ৪০ হাজার কোটি টাকা হবে। এভাবে বাড়তে থাকে।” বেগম খালেদা জিয়া এক টুইট বার্তায় বলেন, এই নিষ্ঠুর বাজেট সাধারণ মানুষের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত শুষে নেয়ার সর্বশেষ চেষ্টা। প্রতিরোধই মুক্তির একমাত্র পথ।’

বাজেটের কিছু বিষয় জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে ব্যর্থ: নাসিম
২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের কিছু বিষয় জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর সদস্য  ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। সেই বিষয়গুলো সংশোধনের আহ্বান জানিয়েছেন ১৪ দলের এই মুখপাত্র। নাসিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘একটি বিশাল অংকের উচ্চাভিলাষী বাজেট দেওয়ায় অর্থমন্ত্রীকে আমরা ধন্যবাদ জানাই। তবে আমানত, আবগারি শুল্ক, সারচার্জসহ কয়েকটি বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। এ বিষয়ে আমাদের পর্যবেক্ষণ রয়েছে।’ বাজেটের যে বিষয়গুলো জনআকাক্সক্ষা বাস্তবায়ন করতে পারেনি, সেগুলো প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী বিবেচনা করবেন বলেও আশা করেন মোহাম্মদ নাসিম। বৈঠকের সভাপতি ও জাসদের (একাংশ) সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, বাজেটের কিছু বিষয় সংশোধনের প্রয়োজন আছে। আমানতের বিষয়টি, আবগারি শুল্ক বর্ধিত করা- এসব প্রত্যাহারের দাবি জানানো হচ্ছে।

মানুষ এখন আর ব্যাংকে টাকা রাখবে না: ওয়ার্কার্স পার্টি
২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংকে টাকা গচ্ছিত রাখা ও উঠানোর ক্ষেত্রে আবগরি শুল্ক বৃদ্ধি করার কারণে মানুষ এখন আর ব্যাংকে টাকা রাখবে না বলে মন্তব্য করেছে ওয়ার্কার্স পার্টি। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো ২০১৭-১৮ সালের বাজেটের ওপর অভিমত ব্যক্ত করে এ মন্তব্য করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, রাজস্ব আদায়ে অপ্রত্যক্ষ করের হার এখনও প্রধান। ভবিষ্যতে আয়কর রাজস্ব আদায়ের ৫০ শতাংশ করা হবে বলে আশার কথা শোনানো হলেও বাজেট প্রস্তাবনায় এর কোনো প্রতিফলন নাই। বরং অর্থমন্ত্রী সম্পদের উপর করারোপে এখনও রাজী নন। ভ্যাটের ক্ষেত্রে কিছু অব্যাহতি দেয়া হলেও এর চাপ সাধারণ মানুষের ওপর পড়বে। বিশেষ করে যেভাবে করারোপ করা হয়েছে তাতে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

আব্দুল মুহিতের বক্তব্য নিম্ন আয়ের মানুষের সঙ্গে উপহাস: জামায়াত
‘ব্যাংকে যাদের এক লক্ষ টাকা জমা আছে তারা সম্পদশালী’ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের দেয়া এমন বক্তব্যে নিম্ন আয়ের মানুষের সঙ্গে উপহাস করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে জামায়াতে ইসলামী। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জামায়াতের আমির মকবুল আহমাদ এ মন্তব্য করেন। বিবৃতিতে মকবুল আহমাদ বলেন, রাজস্বখাত থেকে সরকার যে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন সে লক্ষ্যে পৌঁছানোর কোনো নিশ্চয়তা নেই। ব্যাংকে কারো ১ লক্ষ টাকা জমা থাকলে সেখান থেকে সরকারকে ৮ শত টাকা আবগারী শুল্ক দিতে হবে। সরকারের এ নীতি সঞ্চয় বিরোধী। এ নীতি বাতিল করা উচিত। মকবুল আহমাদ বলেন, “অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের জন্য জাতীয় সংসদে ৪ লক্ষ ২ শত ৬৬ কোটি টাকার যে উচ্চাকাক্সক্ষী ও ঘাটতি বাজেট পেশ করেছেন তা অবাস্তব এবং জনগণের খরচ বাড়ানোর বাজেট। ব্যাংক ঋণ ও বিদেশী সাহায্য নির্ভর এ বিশাল বাজেট নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য পেশ করা হলেও বর্তমান সরকারের পক্ষে এ বাজেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না বলে দেশবাসী মনে করে।

বাজেটে রাজস্ব বৃদ্ধির প্রস্তাব অবাস্তব: নেজামে ইসলাম
২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্যে পেশকৃত বাজেটকে উচ্চাভিলাষী হিসেবে আখ্যায়িত করে বাজেটে রাজস্ব বৃদ্ধির প্রস্তাবকে অবাস্তব বলে মনে করছে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি। দলের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বাজেট প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলা হয়। ভিশন ২০২১-কে সামনে রেখে এবারের বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে

ভিশন ২০২১-কে সামনে রেখে এবারের বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরবর্তী নির্বাচনের জন্য নয় এবারের বাজেট পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ঘূর্ণিঝড় মোরায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের জন্য ১ জুন বিকেলে কক্সবাজার বিমানবন্দর পৌঁছে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ভিশন ২০২১-কে সামনে রেখে এবারের বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। আর এ ভিশনের লক্ষ্য পরবর্তী নির্বাচনের জন্য নয় এবারের বাজেট পরবর্তী প্রজন্মের জন্য। নির্বাচনের আগে আরও একটি বাজেট আছে। আর এই বাজেট নির্বাচনের বাজেট বলার কোনো সুযোগ নেই।’

বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় এরশাদের
প্রস্তাবিত বাজেট কতটুকু বাস্তবায়ন হয় তা দেখতে চান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে এরশাদ বলেন, আমরা দেখার অপেক্ষায় আছি, সরকার এর কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পারে এবং এই বাজেট জনকল্যাণমুখী হয় কি না? বাজেটের সফলতা নির্ভর করবে সরকার কতটুকু বাস্তবায়ন করতে পারে তাও ওপর। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত সাবেক এই রাষ্ট্রপতি প্রস্তাবিত বাজেটের ভ্যাট নিয়ে বলেন, ভ্যাট সম্বন্ধে বক্তব্য আছে আমাদের। এই ভ্যাটের কারণে ইতিমধ্যে জিনিসপত্রের দাম অনেক বেড়ে গেছে।

গণবিরোধী দলিল: সিপিবি
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক কমরেড মো. শাহ আলম জাতীয় সংসদে উত্থাপিত বাজেট প্রস্তাবকে বাংলাদেশের ইতিহাসের গরীব মারার জঘন্যতম বাজেট বলে আখ্যায়িত করেছেন। এছাড়া তিনি সাম্রাজ্যবাদ ও লুটেরা ধনিক শ্রেণির স্বার্থরক্ষার একটি গণবিরোধী দলিল হিসেবে এটিকে আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাখান করেছেন। বাজেট সম্পর্কে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সিপিবি নেতৃবৃন্দ এক বিবৃতিতে বলেছেন, এই বাজেটে সমাজতন্ত্রসহ রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতির কোনো প্রতিফলন নেই। শুধু তাই নয়, এই বাজেট মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী আদর্শে প্রণীত হয়েছে। বাজেট প্রস্তাবের ভিত্তি হলো পুঁজিবাদের নয়া উদারবাদী প্রতিক্রিয়াশীল দর্শন। গত বছরের মূল বাজেটের ১৭.৫% এবং সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ২৬% শতাংশ বড় এই বাজেটের জন্য অর্থসংস্থান করতে ৩৪% শতাংশ বেশি রাজস্ব সংগ্রহের প্রস্তাব করা হয়েছে। ঢালাও ১৫% শতাংশ ভ্যাটসহ পরোক্ষ কর থেকে এই বর্ধিত রাজস্ব আদায়ের যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তা সকল পণ্য ও সেবার মূল্যবৃদ্ধি ঘটিয়ে মূল্যস্ফীতির হারকে অসহনীয় পর্যায়ে নিয়ে যাবে। আর এই দুঃসহ ভারের সবটাই বহন করতে হবে গরীব-মধ্যবিত্তসহ সাধারণ নাগরিকদেরকে।

কথামালার বাজেট: ড. আকবর আলি খান
২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘কথামালার বাজেট’ আখ্যায়িত করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের প্রফেসর ড. আকবর আলি খান বলেছেন, বাজেটে কোনো নির্দেশনা নেই। বাজেট ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো উচিত। বাংলাদেশের বাজেট অত্যন্ত অস্বচ্ছ। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের উদ্যোগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের ওপর সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মূল সমস্যা সুশাসনের সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানে বাজেটে কোনো নির্দেশনা নেই। বাজেট ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো উচিত। বাজেটে কর থেকে নতুন কর কত টাকা আহরণ হবে তার কোনো হিসাব নেই। ১৯৭২-২০০৫ পর্যন্ত হিসাব থাকলেও এরপর থেকে আর হিসাব নেই। এ বাজেট কথামালার বাজেট। আকবর আলি খান বলেন, বাংলাদেশে বাজেট একটি আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়েছে। বাজেট হলো গণতন্ত্রের মূল চালিকাশক্তি। গণতন্ত্রের ভিত্তি হলো, নো ট্যাক্সসেশন উইথ আউট রিপ্রেজেন্টেশন। জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো করারোপ করা যাবে না। বাজেটের মাত্র ২০ শতাংশ আলোচনা হয়। আমাদের দেশের সংসদ সদস্যদের বাজেট নিয়ে আলোচনার করার কোনো সুযোগই নেই। অর্থমন্ত্রী তৈরি করেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দেন। এতে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের ভূমিকা আছে বলে মনে হয় না।

দৈনিক দেশজনতা/ এমএইচ

প্রকাশ :জুন ১৫, ২০১৭ ১২:৩২ অপরাহ্ণ