নিজস্ব প্রতিবেদক:
আমাদের অন্তর ইহুদীদের মত এত কঠিন ও অভিশপ্ত হয়ে উঠল কীভাবে? আল্লাহ বলছেন এই পবিত্র কালামকে যদি তিনি মানুষের উপর নাযিল না করে কোন নিষ্প্রাণ পাহাড়ের উপরও নাযিল করতেন, তাহলে এই মহা নেয়ামতপূর্ণ কোরআনের ব্যাপারে দায়িত্বানুভূতি ও জবাবদিহিতার ভয়ে নিষ্প্রাণ পাহাড়ও কেঁদে উঠতো, আল্লাহর ভয়ে বিদীর্ণ হয়ে গলে গলে পড়তো। অথচ আকল সম্পন্ন মানুষ তথা সৃষ্টির সেরা মানুষ হওয়া সত্তেও, আল্লাহর খলিফার পরিচয় ধারণ করা সত্তেও মহাগ্রন্থ আল কোরআনের প্রতি আজ আমাদের যেন কোন দায়বদ্ধতা নেই, কোন দায়িত্বানুভূতি নেই। এর কারণ কী? কারণ, আল্লাহ নয় মুরুব্বিরাই যে আজ আমাদের কাছে বড় হয়ে উঠেছেন। খোদার আসন দখল করে নিয়েছেন আজ মুরুব্বি ও মূর্খতা! কাজেই আল্লাহর কালাম ভুলুণ্ঠিত হলে আমাদের কীই বা আসে যায়, মুরুব্বির আদেশ তো মাথায় করে রাখি! (নাউযুবিল্লাহ)।
এসবই ইহুদীদের এবং পতন যুগের জাতি সমূহের লক্ষণ। কোন জাতির অধঃপতন যখন ঘনিয়ে আসতো, তখন সে জাতির কায়েমী স্বার্থবাদী ধর্মীয় গোষ্ঠী সমূহ আল্লাহর কালাম থেকে লোকদেরকে দূরে রাখার জন্য বিভিন্ন ভাবে ফন্দি-ফিকির করত। যার কারণে সে জাতির জীবন-প্রণালীর সাথে আল্লাহর কালামের আর কোন যোগসূত্র থাকতো না এবং এক সময় আল্লাহ তাঁর কালামকে ঐ অভিশপ্ত জাতির কাছ থেকে উঠিয়ে নিতেন। সমাজ ও রাষ্ট্রে যথাযথ প্রয়োগ না থাকার কারণে আল্লাহর কালাম এক সময়ে সেসব জনগোষ্ঠীর কাছে অর্থহীন হয়ে পড়ে এবং নানামুখি বিকৃতি ও অবহেলার শিকার হয়ে অবশেষে তা বিলুপ্ত হয়ে যায়।
কিন্তু আল কোরআন আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীনের সর্বশেষ কালাম হওয়ায় এটি কখনো বিকৃত ও বিলুপ্ত হবে না। কারণ সর্বশেষ কিতাব হওয়ার কারণে রাহমানির রাহিম নিজেই একে হেফাযতের দায়িত্ব নিয়েছেন। যার কারণে আরবি ভাষা না জানা সত্তেও যে কোন অনারব এ মহাগ্রন্থটি অর্থ না বুঝে শুধু তেলাওয়াতের মাধ্যমেও অশেষ ফায়েয ও তৃপ্তি লাভ করে থাকেন, যা পৃথিবীর আর কোন গ্রন্থ পাঠে সম্ভব হয় না। অর্থ না জেনে দুনিয়ার আর কোন গ্রন্থের একটি পৃষ্ঠাও কেউ ক্লান্তিহীন ভাবে পাঠ করতে সক্ষম নয়। কারণ কাজটি অর্থহীন হওয়ার কারণে অশেষ বিরক্তি ও ক্লান্তি তাকে ঘিরে ধরবে। কিন্তু মহাগ্রন্থ আল কোরআনই এমন একটি ব্যতিক্রমধর্মী গ্রন্থ যার শাব্দিক অর্থ না জানা সত্বেও লক্ষ কোটি মানুষ পরম আবেগ, আনন্দ ও তৃপ্তির সাথে প্রতিদিন তেলাওয়াত করছে এবং আধ্যাত্মিক ভাবে অশেষ উপকৃত হচ্ছে।
এটি মূলত বরকতপূর্ণ এই ঐশীগ্রন্থের একটি মোজেজা, নতুবা শুধুমাত্র তেলাওয়াত করে সওয়াব কামাইয়ের জন্যই এ মহাগ্রন্থটি অবতীর্ণ হয়নি। বরং আল কোরআন এসেছে মানুষের জীবন ও সমাজ-সভ্যতার মধ্য থেকে সকল ধরনের কুফরিকে বাতিল করে দিয়ে তার স্থলে হককে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য, মূর্খতা ও জাহেলিয়াতের অন্ধকার ভেদ করে জ্ঞানের মশাল প্রজ্জ্বোলিত করার জন্য। অজ্ঞতা ও নৈরাজ্যের ধ্বংসস্তুপের উপর সভ্যতার প্রাসাদ নির্মাণের জন্য।
ইসলাম জীবনমুখি ও বুদ্ধিবৃত্তিক জীবন বিধান। মূর্খতা ও বৈরাগ্যবাদের সাথে ইসলামের দূরতম সম্পর্কও নেই। সুতরাং আজ সময় এসেছে আত্মজিজ্ঞাসার, সময় এসেছে চিন্তা-গবেষণা ও বিবেক-বুদ্ধিকে কাজে লাগানোর। কারণ যারা জ্ঞান-বিমুখ, যারা আল্লাহর সৃষ্টি সম্পর্কে ভাবে না, চিন্তা-গবেষণা করে না, যারা কুপমণ্ডুক, যারা তাদের বিবেক বুদ্ধিকে কাজে লাগাতে উৎসাহী নয় তাদের সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন মহাগ্রন্থ আল কোরআনে বলেছেন :
‘এ কথা একান্তই সত্য যে, বহু-সংখ্যক জ্বিন ও মানুষ এমন আছে, যাদেরকে আমরা জাহান্নামের জন্যই সৃষ্টি করেছি। তাদের অন্তর আছে কিন্তু তারা তার সাহায্যে চিন্তা-ভাবনা করে না; তাদের চোখ আছে কিন্তু তা দিয়ে তারা দেখে না; তাদের শ্রবনশক্তি আছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা শোনে না। তারা আসলে জন্তু-জানোয়ারের মত; বরং তার চেয়েও বেশি বিভ্রান্ত। এরা চরম গাফলতির মধ্যে নিমগ্ন।’ – [আল-আরাফ : ১৭৯]
‘হে ঈমানদার লোকেরা! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর এবং আদেশ শোনার পর তা অমান্য করো না। তাদের মত হয়ে যেয়ো না, যারা বলে, আমরা শুনলাম; কিন্তু আসলে তারা শোনে না। নিশ্চিত জেনো, আল্লাহর নিকট নিকৃষ্টতম পশু, বধির ও বোবা হচ্ছে সেসব মানুষ, যারা নিজেদের বিবেক ও বুদ্ধিকে কাজে লাগায় না। আল্লাহ যদি জানতেন যে, তাদের মধ্যে কোন ধরনের কল্যাণ রয়েছে, তাহলে তিনি অবশ্যই তাদেরকে শোনার তওফিক দিতেন। তিনি যদি তাদেরকে শুনতে দিতেন, তবে তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে অন্যদিকে চলে যেতো।’ -[আনফাল : ২০-২৩]
‘এদের মধ্যে বহু লোকই তোমার কথা শোনে। কিন্তু তুমি কি বধিরদের শোনাবে তারা না বুঝতে চাইলেও? তাদের মধ্যে বহু লোক তোমাকে দেখে, কিন্তু তুমি কি সেসব অন্ধদের পথ দেখাবে, তারা দেখতে না চাইলেও? আসল কথা হল, আল্লাহ লোকদের উপর জুলুম করেন না, বরং তারা নিজেরাই নিজেদের উপর জুলুম করে। -[ইউনুস : ৪২-৪৪]
‘তারা না কারো কথা শুনতে পারতো আর না তাদের নিজেদের বুদ্ধিতে কিছু আসতো। এরা সেই লোক, যারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছে আর তারা যা রচনা করেছিল, তার সব কিছুই তাদের কাছ থেকে হারিয়ে গেছে। অনিবার্যভাবে তারাই পরকালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’-[হূদ : ২০-২২]
দৈনিক দেশজনতা/ এমএইচ