দেশ জনতা ডেস্ক : বগুড়ার ধুনটের বহালগাছা গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী নাইস খাতুন এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল বাবা কোলে চড়ে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে সেই নাইস খাতুন এসএসসিতে জিপিএ-৩.৫৫ পেয়েছে। তার এই ফলাফলে পরিবারসহ গোটা বহালগাছা গ্রামেই ছড়িয়ে পড়েছে উচ্ছ্বাস।
লেখাপড়া শেষে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নিতে চায় নাইস। সে চায় ভবিষ্যতে শিক্ষক হয়ে তার মতো অসহায় ও দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেওয়ার।
বগুড়ার ধুনট উপজেলার চৌকিবাড়ি ইউনিয়নের বহালগাছা গ্রামের দরিদ্র কৃষক নজরুল ইসলামের মেয়ে দুই সন্তানের মধ্যে ছোট নাইস খাতুন। জন্ম থেকেই তার দুই পা থাকলেও হাঁটতে বা দাঁড়াতে পারে না। এছাড়া ডান হাতটিও অকেজো। তাই বাম হাত দিয়েই লিখতে হয় তাকে। হাঁটতে বা দাঁড়াতে না পারায় বাবা ও মায়ের কোলে চড়ে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে যেতে হয় নাইসকে। তারপরও দমে যায়নি তার মনোবল। বাবার কোলে চড়ে এভাবে ২০১৪ সালের জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৩.৬৭ পেয়েছিল। আর সে এভাবেই অদম্য ইচ্ছা শক্তি নিয়ে এগিয়ে চলছে। সে বিশ্বহরিগাছা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। কেন্দ্র ছিল ধুনট এনইউ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়। বাবার কোলে চড়ে কেন্দ্রে এসে মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেয়। তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক সেজাব উদ্দিন বলেন, নাইস খাতুন জিপিএ-৩.৫৫ পেয়ে এসএসসি পাশ করায় আমরা খুব গর্বিত।
ফলাফল প্রকাশের পর বৃহস্পতিবার বিকালে কথা হয় নাইস খাতুনের সঙ্গে। সে বলে, ‘ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়। তাই মনের শক্তি নিয়েই শিক্ষা জীবন শুরু করেছি। কষ্ট হলেও লেখাপড়া শেষ করে শিক্ষকতা পেশাকে বেছে নেবো।
শিক্ষক হতে পারলে আমার মতো অসহায় ও দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের দায়িত্ব নেবো।’
ফলাফল বিষয়ে নাইস বলে, ‘রেজাল্ট আরও ভালো হলে খুব খুশি হতাম। এখন স্থানীয় জালশুকা হাবিবর রহমান ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হবো।’
মেয়ের ফলাফলে সন্তুষ্ট বাবা নজরুল ইসলাম জানান, জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী মেয়ে নাইস খাতুনকে সুস্থ করার জন্য অনেক চিকিৎসা করিয়েছেন। কিন্তু অর্থের অভাবে তাকে পুরোপুরি চিকিৎসা দেওয়া যায়নি।
তিনি বলেন,গত ফেব্রুয়ারি মাসে এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় নাইসকে নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছিল। এরপর জাতীয় প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অতিরিক্ত সচিব কামরুন নাহার খানম একটি হুইল চেয়ার উপহার দিয়েছিলেন। রংপুর জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা তাপস কুমার বর্মা বাড়িতে গিয়ে নাইসকে চেয়ারটি পৌঁছে দেন। এ সময় জেলা প্রতিবন্ধী সেবা সাহায্য কনসালটেন্ট ফারজানা ইয়াসমিন উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে এ চেয়ারে বসেই নাইস পরীক্ষা দিতে যায়। বর্তমানে এ চেয়ারেই সে চলাফেরা করে থাকে। বাবা নজরুল ইসলাম তার মেয়ের স্বপ্ন পূরণে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।