গুলশান বলতেই চোখের সামনে ফুটে ওঠে রাজধানীর একটি অভিজাত এলাকা। পরিকল্পিত, নিয়ন্ত্রিত, নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা গুলশান অন্য এলাকার তুলনায় বেশ ছিমছাম আর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। কিন্তু সেই পরিচ্ছন্ন এলাকাটিতেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ঝাঁকে ঝাঁকে মশার দল। মশার পরিমাণ দেখে মনে হবে গুলশান যেন ঢাকার কোনো অনুন্নত এলাকা।
শনিবার সন্ধ্যার পর গুলশান-২ নম্বরের ইউনাইটেড হাসপাতাল, ৭৯ নম্বর সড়ক ও আশপাশের কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এলাকাটিতে মশার উপদ্রব মাত্রাতিরিক্ত। অভিজাত এলাকাটির বাসিন্দারা মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন বলে তাদের ভাষ্য।
স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে সবসময় মশা থাকে। কোথাও এক মিনিট দাঁড়ালেই বুঝবেন এখানে কি পরিমাণ মশা। সিটি করপোরেশন কি করে আমরা জানি না।’
গুলশান-২ এর কয়েকটি এলাকায় হাঁটতে গেলেও শরীরে মশা আটকে যাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে এই প্রতিবেদকের। সড়কের পাশাপাশি মশা দেখা গেছে ভবনের ভেতরেও মশার দাপুটে বিচরন। মশার যন্ত্রণা থেকে রেহাই পেতে বিকালের পর ঘরের জানালাও বন্ধ করতে রাখতে হচ্ছে বাসিন্দাদের।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক জরিপে নগরের মশক ঝুকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলোর নাম উঠে আসে। জরিপ অনুযায়ী, দুই সিটির মোট ১১টি ওয়ার্ডকে মশক ঝুঁকিতে রয়েছে। এরমধ্যে উত্তর সিটির ৫টি এবং দক্ষিণ সিটিতে ৬টি ওয়ার্ডের নাম উঠে এসেছে। উত্তর সিটির ১, ১২, ১৬, ২০ ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ড মশক ঝুঁকিতে রয়েছে। এই তালিকায় দক্ষিণের ৫, ৬, ১১, ১৭, ৩৭ এবং ৪২ নম্বর ওয়ার্ড।
গুলশান-১, ২ ও বনানীর কিছু অংশ পড়েছে উত্তর সিটির ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঝুকিপূর্ণ ওয়ার্ডের তালিকায় এই ওয়ার্ড নেই। তারপরও ওয়ার্ডটিতে মশার উপদ্রব অসহনীয় মাত্রায় বেড়েছে। গুলশানের মতো জায়গায় এমন দশা হলে, রাজধানীর অন্য এলাকার অবস্থা কি হতে পারে সেই প্রশ্নটি উঠেছে।
ঢাকা উত্তর সিটির ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বলছেন, মশক নিধনে তার এলাকায় মেশিন ও জনবলের ঘাটতি রয়েছে। যে কারণে চাইলেও মশক নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে আগামী সাতদিনের মধ্যে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের চেষ্টা চলছে।
ডিএনসিসির ওয়ার্ড কাউন্সিলর মফিজুর রহমান বলেন, ‘গতবছর ডেঙ্গুর উপদ্রব ছিল। তখন স্থানীয় সরোকার মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশনের মেয়রের উদ্যোগে ডেঙ্গুকে নিয়ন্ত্রণ করতে আমরা সক্ষম হয়েছিলাম।’
‘বর্তমানে মশার বর্তমান উপদ্রব মানুষকে সচেতন করে যেন কাজ করতে পারি, সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা কাজ করছি। কিন্তু আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। কারণ আমাদের লোকবল সংকট, যন্ত্রপাতির অভাব। আমাদের মেয়রের প্রচেষ্টায় মশার ওষুধের যে সিন্ডিকেট, সে সিন্ডিকেট আমরা ভাঙতে পেরেছি। কিন্তু যে পরিমাণ ওষুধ, জনবল, মেশিন তা পর্যপ্ত পরিমাণ পাচ্ছি না।’
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে মশকমুক্ত এলাকা গড়ার বিষয়ে এই কাউন্সিলর বলেন, ‘আজ (রবিবার) আমাদের সিটি করপোরেশনের বোর্ড মিটিং ছিল। মিটিংয়ে মশা নিয়ে কথা হয়েছে। আমরা বলেছি, আমাদেরকে লোকবল দিতে হবে। মেশিন দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাকে অস্ত্র না দিলে আমি শিকার করব কি দিয়ে? আমরা জনগনকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগনের ভোট নিয়ে নির্বাচিত হয়েছি। আমার দায়বদ্ধতা আছে। আমরা জনগনের চাহিদা পূরণ করতে চাই।’