প্রযুক্তির উৎকর্ষতা সমাজের সবখানে এনেছে বহুল পরিবর্তন। মানুষের জীবন থেকে জীবিকা সবই হয়ে উঠেছে সহজ। বিশেষ করে ইলেকট্রনিক প্রযুক্তির ফলে মানুষের জীবনে গতি এসেছে বহুগুণে। একদিকে মানুষ যেমন ঘরে বসেই যাবতীয় কাজ করার সুযোগ পেয়েছে, তেমনি এটি ব্যস্ততা বাড়িয়েছে মানুষের জীবনে। মোবাইল-কম্পিউটার হয়ে উঠেছে আমাদের নিত্যসঙ্গী। প্রাত্যহিক জীবনে এ দুটির ব্যবহার ছাড়া আমরা একটি দিনও কল্পনা করতে পারি না।
ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার অন্ধদের জন্য বেশ কঠিন। কারণ, মোবাইল কিংবা পিসিতে আমরা কমান্ড ইনপুট করতে যেমন দেখার প্রয়োজন হয়, তেমনি তা আউটপুটেও ভিজ্যুয়ালি প্রদর্শন করে। ফলে সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য তা দেখে ব্যবহার করা সহজ হলেও অন্ধদের জন্য ইনপুট কিংবা আউটপুট কোনোটিই দেখা সম্ভব নয়। তবে দেখা সম্ভব না হলেও তারা এই প্রযুক্তির ব্যবহার থেকে বঞ্চিত নয়। চলুন দেখে নেওয়া যাক অন্ধরা কীভাবে মোবাইল ও কম্পিউটার ব্যবহার করে।
মোবাইল ব্যবহার করার সময় অন্ধদেরকে দেখা যায় মোবাইলের স্পিকারটি কানের কাছাকাছি ধরতে। এর মাধ্যমে তারা স্ক্রিনে প্রদর্শিত টেক্সটগুলোকে শুনতে পায়। অন্ধদের কম্পিউটার কিংবা মোবাইল ব্যবহারে সাহায্য করে মূলত স্ক্রিন রিডার সফটওয়্যারগুলো। স্ক্রিন রিডার সফটওয়্যারগুলো মোবাইল কিংবা পিসির স্ক্রিনে প্রদর্শিত টেক্সটগুলোকে শব্দ করে পড়ে দেয়। স্ক্রিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কী আছে তা পড়ে দেয় এটি। কিছু কিছু স্ক্রিন রিডার ব্রেইল এর সুবিধা দেয়, তবে এগুলোর জন্য ব্যবহারোপযোগী হার্ডওয়্যার বেশ দামি। এরপর ব্যবহারকারী তার প্রয়োজনমতো কমান্ড করতে পারেন। এজন্য কম্পিউটার এবং মোবাইলের ব্যবহারোপযোগী আলাদা আলাদা সফটওয়্যার রয়েছে।
কম্পিউটার
বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে ব্যবহৃত কম্পিউটার স্ক্রিন রিডার ‘জব অ্যাক্সেস উইথ স্পিস’। সফটওয়্যারটি স্পিস এবং ব্রেইল আউটপুট প্রদান করে। ফলে অন্ধরা সহজেই কম্পিউটারের যেকোনো কাজ করতে পারে। বাংলাদেশে বহুল ব্যবহৃত সফটওয়্যার এটি। তবে বাংলার জন্য এটি ব্যবহার করা হয় না। স্ক্রিনের বাংলা টেক্সটগুলো রিড করার জন্য ব্যবহার করা হয় ‘এনভিডিএ’ সফটওয়্যার। এ সফটওয়্যারটি সিনথেটিক ভয়েস এবং ব্রেইল উভয় সুবিধা প্রদান করে থাকে। স্ক্রিনের যেখানে মাউসের কার্সরটি রাখা হয় সেখানকার টেক্সটকেই এটি সিনথেটিক ভয়েস এর মাধ্যমে বলে দেয়। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে ব্যবহারযোগ্য এ সফটওয়্যারটি ৩৫টি ভাষাকে রিড করতে পারে। এ সফটওয়্যার দুটি বিনামূল্যে ইনস্টল করা যায়।
এছাড়াও উইন্ডোজ এর জন্য রয়েছে সেরোটেক, ম্যাক ওপারেটিং সিস্টেমের জন্য অ্যাপল ভয়েস ওভার, লিনাক্স এর জন্য ওরকা, লিনাক্স এ ব্রেইল সুবিধার জন্য বিআরএলটিটিই, যেকোনো ওয়েবসাইট এর জন্য ওয়েব এনিহোয়্যার, ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার এর জন্য স্পোকেন ওয়েব এবং গুগল ক্রোম এর জন্য রয়েছে ক্রোম ভক্স।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমরা সাধারণত জব অ্যাক্সেস উইথ স্পিচ এবং এনভিডিএ ব্যবহার করি। তবে এভাবে কম্পিউটার ব্যবহারে সময় মাউস ব্যবহার করাটা বেশ অসুবিধাজনক, এজন্য শুধু কিবোর্ড ব্যবহার করতে হয়।’
মোবাইল
অন্ধদের মোবাইল ব্যবহার করার জন্য অ্যান্ড্রয়েড এর সাথেই স্ক্রিন রিডার এর সুবিধা দেওয়া আছে। এটি চালু করার জন্য মোবাইলের সেটিংস এ গিয়ে সেখান থেকে অ্যাডিশনাল সেটিংস সিলেক্ট করতে হবে। এরপর অ্যাক্সেসসিবিলিটিতে প্রবেশ করে সেখান থেকে ‘অ্যান্ড্রয়েড টকব্যাক’ সক্রিয় করতে হবে। এটি সক্রিয় করার পর স্ক্রিনের টেক্সট এবং স্ক্রিনে কী হচ্ছে তা বলে দেবে। তবে এটি বাংলা ভাষার সুবিধা দেয় না। স্ক্রিনের বাংলা পড়ার জন্য রয়েছে ‘গুগল টেক্সট টু স্পিচ’। বাংলা এবং ইংরেজি একসাথে পড়ার জন্য প্রয়োজন হয় ‘অটো টিটিএস’। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইংরেজি এবং বাংলা টেক্সট পড়ে নেয়। তবে অটো টিটিএস ফ্রি নয়। নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করে এটি ব্যবহার করা যায়।
এসব সফটওয়্যার এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলো অন্ধদের জন্য প্রযুক্তির ব্যবহারকে সহজ করে দিয়েছে। এ প্রযুক্তিগুলো না থাকলে কী হতো? শুধু একবার চোখ বন্ধ করে আপনার মোবাইলের স্ক্রিনে হাত দিন এবং বোঝার চেষ্টা করুন।