নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশে সাড়া জাগানো অনেক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন সালমান শাহ। অর্জন করেন আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা। সালমান শাহর সিনেমা মানেই প্রেক্ষাগৃহে উপচেপড়া ভিড়। তখন তিনি জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছিলেন। তার অকাল মৃত্যুর পর নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান আবিষ্কার করেন শাকিব খানকে।
এর মধ্যে ‘অশ্লীলতার ভূত’ এসে ভর করে দেশের চলচ্চিত্রে। তখন চিত্রনায়ক মান্না একের পর এক জননন্দিত সিনেমা উপহার দিয়ে মোহিত করেন দর্শকদের। তার জনপ্রিয়তাও ছিল শীর্ষে। নায়ক মান্নার মৃত্যুর পর স্বল্প সময়ের জন্য কয়েকজন নায়ক জনপ্রিয়তা লাভ করেও বেশি দিন তা ধরে রাখতে পারেননি।
এই সময়ে নিজেকে তৈরি করে নেন শাকিব খান। নায়ক মান্নার পর দীর্ঘদিন জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন চিত্রনায়ক শাকিব। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছেন। সালমান শাহ, মান্নার পর একমাত্র শাকিব খানের দর্শকপ্রিয়তা এখনো রয়েছে। তিনি-ই একমাত্র নায়ক, যার নামেই প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা বুকিং হয়। এ জন্য তার পারিশ্রমিকটাও সবার থেকে বেশি। মন্দার বাজারে দর্শক প্রায় হল বিমুখ। কিন্তু শাকিব খানের সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেলে শাকিব ভক্তরা হলে ফিরেন। কিন্তু এবার এই নায়কের জন্যেও রয়েছে অশনি সংকেত!
চলচ্চিত্র বাণিজ্যের একমাত্র তারকা শাকিব খানও এখন প্রদর্শকদের ভরসার বাইরে চলে যাচ্ছেন। সবচেয়ে নির্ভরশীল তারকাও ঠেকাতে পারছেন না বাণিজ্যিক বিপর্যয়। শাকিব খান অভিনীত ‘শাহেনশাহ’ সিনেমাটি গত ৫ মার্চ সারা দেশে মুক্তি পায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মুখ থুবড়ে পড়েছে সিনেমাটি। প্রথমদিন কিছু দর্শকের দেখা পেলেও শনিবার (৭ মার্চ) থেকেই ভাটা নেমেছে দর্শকের। এর আগে শাকিব অভিনীত ‘বীর’ সিনেমাটিও দর্শক টানতে ব্যর্থ হয় বলে জানান হলমালিকরা।
মধুমিতা হলের মালিক নওশাদ বলেন, ‘‘শাহেনশাহ’ সিনেমার গল্প ভালো। কিন্তু দুই বছর আগের সিনেমা হওয়ায় দর্শক ভালো টানতে পারেনি। অনেকদিন হলো ট্রেইলার চালানো হয়েছে। আসবে আসবে বলে আসেনি। যে কারণে দর্শক কম হয়েছে বলে আমি মনে করি। তবে করোনার আতঙ্ক এখনো আমাদের সিনেমার দর্শকদের উপর পড়েনি।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘শাকিব অভিনীত ‘বীর’ সিনেমাও ভালো যায়নি। ‘বীর’র তুলনায় ‘শাহেনশাহ’ অনেক ভালো সিনেমা। শাকিবের সিনেমাও এখন দর্শক টানতে পারছে না। একটা সময় শাকিবের সিনেমা মুক্তি পেলে সপ্তাহের শুরুতে দর্শক পাওয়া যেত।’’
এছাড়া ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অন্যান্য হলগুলোতেও দর্শকচিত্র নেতিবাচক। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস বলেন, ‘ঢাকার বাইরে দুটি সিনেমা হলে একটি সিনেমা চার লাখ টাকা দিয়ে নেয় কিন্তু পুরো সপ্তাহে দুটি সিনেমা হল মিলেও দেড় লাখ টাকা উঠাতে পারেনি। তাতে দুই সিনেমা হলের আড়াই লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। মাত্র দুই সপ্তাহ আগে আরেকটি সিনেমা এসব হল মালিকদের আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।’হল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ প্রদর্শক সমিতির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, ‘শাকিব খানের সিনেমা যে রকম ওপেনিং হয় প্রথম দুই দিনে এবারে তা দেখা যায়নি কিছু বড় সিনেমা হল ছাড়া। এছাড়া প্রচারণার অভাব ছিল সিনেমাটির। দেখা যাক, আগামী সপ্তাহে কী হয়।’
ঢাকাই চলচ্চিত্রের ভরসা শাকিব খান। সেই শাকিব খানের সিনেমা একের পর এক ফ্লপের তালিকায় যোগ হচ্ছে। দিনে দিনে তার এ তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। ঢালিউডে নতুন নেতৃত্ব তৈরি হওয়ার আগেই এই নাম্বার ওয়ান তারকার পতন হলে শুধু শাকিব খানের জন্য অশনি সংকেত নয়, বরং পুরো ইন্ডাস্ট্রির জন্য অশনি সংকেত বলে মনে করেন চলচ্চিত্র বোদ্ধারা।