২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৪:০৫

সাত জেলায় ‘হোম কোয়ারেন্টাইনে’ ১৩২ জন

দেশের বিভিন্ন জেলায় বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের দেহে করোনা ভাইরাস আছে কিনা তা যাচাইয়ের জন্য ‘হোম কোয়ারেন্টাইন’ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত শতাধিক লোককে এই ব্যবস্থায় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তবে তাদের মধ্যে কেউ এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত নন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

মানিকগঞ্জে ৭৯ জন  

মানিকগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় বিদেশ ফেরত ৭৯ জনকে ‘হোম কোয়ারেন্টাইনে’ রাখা হয়েছে। শরীরে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ না থাকলেও সম্প্রতি বিদেশ থেকে আসার কারণে তাদের নিজ নিজ বাড়িতে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। সিভিল সার্জন আনোয়ারুল আমিন আখন্দ এই তথ্য জানান।

তিনি জানান, ‘করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের পুরাতন ভবনের দ্বিতীয় তলায় ১২ বেডের আইসোলেশন ইউনিট এবং সদর উপজেলার কেওয়ারজানি এলাকায় আঞ্চলিক জনসংখ্যা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ১০০ শয্যার কোয়ারেন্টাইন ইউনিট প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’

সিভিল সার্জন আরও জানান, জেলায় প্রায় ১২০০ বিদেশ ফেরত ব্যক্তি রয়েছেন। তারা সম্প্রতি ইতালি, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, সৌদি আরব ও সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরেছেন।

কিশোরগঞ্জে ৩৭ জন

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বিদেশ ফেরত ৩৭ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই ইতালি থেকে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন। এছাড়াও সৌদি আরব, জর্ডান ও সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে আসা কয়েকজন রয়েছেন। এই ৩৭ জন গত এক সপ্তাহে বিভিন্ন সময়ে দেশে এসেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন কিশোরগঞের সিভিল সার্জন ডা. মুজিবর রহমান।

তিনি জানান, ‘ইতোমধ্যে ৩৭ জনের তথ্য জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়েছে। তবে ৩৭ জনের মধ্যে কারোরই করোনা ভাইরাসের কোনও উপসর্গ নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী বিদেশ ফেরত সবাইকে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। তাদের সবাইকে নিজ নিজ বাসায় একটি কক্ষে সম্পুর্ণ আলাদা থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের বাসায় গিয়ে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে আসছেন। আতঙ্কিত হওয়ার মত কোন কিছু নেই। এর আগেও আমরা কিশোরগঞ্জের কয়েকটি উপজেলায় বিদেশ ফেরত আরও কয়েকজনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রেখেছিলাম। এখন পর্যন্ত একজনেরও কোভিড-১৯ এর লক্ষণ বা আক্রান্তের মতো কোনও ঘটনা ঘটেনি।’

যশোরে ছয় জন

যশোরের চৌগাছায় ইতালি ফেরত এক দম্পতিসহ মোট ছয় জনকে একজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ‘হোম কোয়ারেন্টাইনে’ রাখা হয়েছে। তবে ওই দম্পতি বা তাদের পরিবারের কোনও সদস্যের শরীরে করোনার কোনও লক্ষণ পাওয়া যায়নি বলে নিশ্চিত করেছেন চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. লুৎফুন্নাহার।

তিনি জানান, ‘ইতালি ফেরত ওই ব্যক্তির বাবাসহ ছয়জনকে আমাদের তত্ত্বাবধানে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিষয়টিতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কীভাবে থাকতে হবে সে বিষয়ে আমি নিজে গিয়ে তাদের বুঝিয়ে এসেছি। তারা নিজেরদের ঘরেই থাকবেন।’ তিনি আরও জানান, ৫০ শয্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট ১২টি বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। হাসপাতালে সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম, ব্যবস্থাপনা কমিটি ও র‍্যাপিড রেসপন্স কমিটি করা হয়েছে।

যশোরের সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন বলেন, ‘কোয়ারেন্টাইন বলা যাবে না। যেহেতু শুধু আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসলে  তাকেই কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হয়। উনারা যাদের সংস্পর্শে ছিলেন, তারাতো রোগী নন। আমরা একে পর্যবেক্ষণে রাখা বলছি।’

নারায়ণগঞ্জে পাঁচ জন

নারায়ণগঞ্জে করোনা ভাইরাস পজিটিভ রোগীর সংস্পর্শে আসা এক চীনা নাগরিকসহ মোট পাঁচ জনকে  ‘হোম কোয়ারেন্টাইন’ করে রাখা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইমতিয়াজ আহমেদজানান, ‘করোনা পজিটিভ রোগীর সংর্স্পশে আসার কারণে তাদের মধ্যে যদি জ্বর, সর্দি, কাশি, বুকে ব্যাথা, শ্বাসকষ্ট, পাতলা পায়খানাসহ শরীরে কোনও সমস্যা দেখা দেয় তবে টেলিফোনে সংশ্লিষ্ট ডাক্তার বা সিভিল সার্জন কিংবা ভিক্টোরিয়া  হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসককে (আরএমও) জানাবেন তারা। কোয়ারেন্টাইনে থাকা প্রত্যেককে সিভিল সার্জন, আরএমও এবং সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের মোবাইল নম্বর দেওয়া আছে। যদি এমন কোনও সমস্যা হয় সিভিল সার্জন অফিসের ডাক্তারা তাদের কার্যকর ড্রেস পরে  ওই রোগীর  রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে তা ঢাকা আইইডিসিআরে পাঠাবেন। পরীক্ষায় যদি কিছু ধরা পড়ে তবে পরবতী নির্দেশনা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
তিনি জানান, নগরীর একটি ফ্ল্যাটে ইতালী ফেরত করোনা ভাইরাস পজেটিভ এক রোগীর সংর্স্পশে আসার কারণে একই পরিবারের চার জনকে একটি ফ্লাটে রাখা হয়েছে। আর সন্দেহভাজন হিসেবে এক চীনা নাগরিককে ফতুল্লায় একটি ফ্ল্যাটে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়েছে।
সিভিল সার্জন জানান, ‘ইতালিসহ যে কোনও দেশ থেকে কেউ ফেরত এলে তাদের সম্পর্কে আমরা খোঁজ খবর রাখছি। যারাই বিদেশ থেকে দেশে ফেরত আসছে, তাদের ১৪ দিন নিজের ঘরে কোয়ারেন্টাইন থাকার পরামর্শ দিচ্ছি।’

বগুড়ায় দুই জন

বগুড়ায় বিদেশ ফেরত দুই জনকে ‘হোম কোয়ারেন্টাইনে’ রাখা হয়েছে। তাদের আগামী দুই সপ্তাহ বাইরে বের না হতে অনুরোধ করা হয়েছে। বগুড়ার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

সদর উপজেলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সামির হোসেন মিশু জানান, বগুড়া সদরের ইতালি প্রবাসী ওই ব্যক্তি গত ৭ মার্চ বাড়িতে ফিরেছেন। এছাড়া সোনাতলা উপজেলায় একজন কুয়েত থেকে ফিরেছেন গত ৮ মার্চ। তারা দুই জন সুস্থ হলেও তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। আগামী দুই সপ্তাহ তাদের বাড়ি থেকে বের হতে নিষেধ করা হয়।

বগুড়ার সিভিল সার্জন ডা. গাউসুল আজিম চৌধুরী বলেন, ‘করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বিদেশ ফেরত ব্যক্তিরা সুস্থ আছেন। কিন্তু অধিকতর সতর্কতা এবং জনমনের শঙ্কা দূর করতেই তারা এখন স্বাস্থ্য বিভাগের নজরদারিতে রয়েছেন।’

নরসিংদীতে দুই জন

নরসিংদীর সদর ও রায়পুরা উপজেলায় বিদেশ ফেরত দুই ব্যক্তিকে যার যার বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তারা এক সপ্তাহ আগে ইতালি থেকে দেশে ফিরেছেন। সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম টিটন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

খুলনায় একজন

খুলনায় করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সম্প্রতি ইতালি থেকে আসা একজনকে বয়রার তার বাড়িতে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। তাকে আরও চার দিন বাড়িতেই থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বিদেশ থেকে আসা নাগরিকদের তদারকির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সার্বিক বিষয় পর্যবেক্ষণে টাস্কফোর্স কমিটি গঠিত হয়েছে।

খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ জানান, ‘নগরীর বয়রায় ইতালি থেকে একজন আসার খবর পেয়ে গত মঙ্গলবার জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের একটি সমন্বিত টিম ওই বাড়িতে যায়। সেখানে তারা সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। খুলনায় আসার পর তার ১৪ দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। তার করোনার কোনও লক্ষণ নেই। তারপরও অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে তাকে আরও চার দিন বাড়ি থেকে বের না হতে অনুরোধ করা হয়েছে। আর সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং এ জেলা ও উপজেলায় টাস্কফোর্স গঠিত হয়েছে। এ কমিটির মাধ্যমে বিদেশ থেকে আসা নাগরিকদের ব্যাপারে তথ্য জানা, সচেনতা সৃষ্টিসহ নানা কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে।’

সিলেটে সৌদি ফেরত নারী হাসপাতালে

সিলেটে ৭০ বছর বয়সী এক নারীকে তার বাড়ি থেকে বুঝিয়ে এনে সিলেটের শহীদ ডা.শামসুদ্দিন হাসপাতালের কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে। অনেক খোঁজাখুজির পর বুধবার (১১ মার্চ) দুপুরে সিলেটের সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কর্মীরা দক্ষিণ সুরমায় ওই নারীর বাড়িতে গিয়ে তাকে বুঝিয়ে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মন্ডল বলেন, ‘আমাদের অফিসের কর্মীরা ওই নারীর বাড়িতে গিয়ে তাকে সার্বিক বিষয় বুঝিয়ে বলার পর তিনি হাসপাতালে ভর্তি হতে রাজি হন।’ ওই নারী ১২ দিন আগে সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরেন। গত কয়েকদিন থেকে তিনি জ্বর অনুভব করলে চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সিলেটের দক্ষিণসুরমা এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে যান। এসময় চিকিৎসকরা সার্বিক বিষয় শুনে তিনি করোনা আক্রান্ত হতে পারেন ধারণা করে তাকে কিছু পরীক্ষা করিয়ে আনতে বলেন। এরপর ওই নারী পরীক্ষা না করিয়ে বাড়িতে চলে যান।

প্রকাশ :মার্চ ১১, ২০২০ ৬:৪৬ অপরাহ্ণ