বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই যে যার যার মতো করে করোনাসংক্রান্ত তথ্য ছড়াচ্ছে। ফলে সঠিক পরামর্শগুলি অনেকটাই হারিয়ে যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া যাচ্ছেতাই খবরের আড়ালে। কোন কোন জিনিস খেলে সুস্থ হয়ে যাবে করোনা আক্রান্ত রোগী তাও বাতলে দিচ্ছেন কেউ কেউ। ফলে সাধারণ মানুষ অনেকটা গুলিয়ে ফেলছেন আসলে কি করণীয় আর কি বর্জনীয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলছেন, ‘আমরা অনেক ধরনের পরামর্শের কথা শুনছি। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রতিনিয়ত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। সেগুলো সবাইকে মেনে চলার অনুরোধ করছি।’
এতদিন বিশ্বের অন্য দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবরেই উত্তপ্ত ছিল বাংলাদেশ। গত রবিবার দেশে তিনজন রোগী শনাক্তের পর সেই উত্তাপ আরও বেড়ে গেছে। আগের থেকেও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার।
ভোক্তাদের আতঙ্ক এসব পণ্য আর পাওয়া যাবে না। এই আতঙ্কে অনেকটা পাল্লা দিয়ে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার। আর বিক্রেতারা বলছেন, চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তাদের বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে মাস্ক। তাই বেশি দামে বিক্রি করতে তারা বাধ্য হচ্ছেন। যদিও ইতোমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত মাস্ক, হ্যাক্সসলসহ এসব জিনিস নিয়ে কারসাজি ঠেকাতে মাঠে নেমেছে। বেশ কয়েকজনকে জরিমানা করা হয়েছে। সিলগালা করা হয়েছে অনেক ফার্মেসি।
রাজধানীর লক্ষীবাজারের মা ফার্মেসির উত্তম বলেন, ‘গত রবিবার সন্ধ্যায় দশটা হ্যাক্সসল ছিল সব বিক্রি হয়ে গেছে। তিন বক্স মাস্ক ছিল সব শেষ। সবাই আতঙ্কে কিনতেছে দেখলাম।’
করোনাভাইরাস গত ডিসেম্বর চীনের উহান প্রদেশে সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১০৫ দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যে ৩৮৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত তিনজন আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে পাঁচটি পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পরামর্শগুলো হলো- ভালোভাবে সাবান পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে, হাত না ধুয়ে চোখ, মুখ ও নাক স্পর্শ না করা, হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় মুখ ঢেকে রাখা, অসুস্থ পশু বা পাখির সংস্পর্শে না আসা, মাছ, মাংস ভালোভাবে রান্না করে খাওয়া।
এ ছাড়াও গণপরিবহন ও গণজমায়েত এড়িয়ে চলার জন্যও বলা হয়েছে। সবাইকে মাস্ক পড়তে হবে এমনটা কোনো সংস্থার তরফে বলা হয়নি। তবে এসব পরামর্শের বাইরেও অনেকে নানা ধরনের তথ্য ছড়িয়ে আতঙ্কিত করছেন সাধারণ মানুষকে।
এ অবস্থায় বিদেশ ফেরত ও লক্ষণ ধরা পড়লে সেসব মানুষকে সুচিকিৎসা দেয়ার সব ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি সবাইকে সচেতন করতে বেশি গুরুত্ব¡ দিচ্ছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। গণজমায়েত এড়িয়ে চলার জন্য বলেছেন।
এছাড়াও খেলাধুলা, ধর্মীয় বা সামাজিক প্রোগ্রাম সীমিত আকারে করার অনুরোধ জানিয়েছেন জাহেদ মালেক স্বপন। সোমবার তিনি বলেছেন, ‘সচেতনতামূলক কার্যক্রম আমরা আগে থেকেই নিয়েছিলাম। এখন নতুন করে পোস্টার ও ব্যানার তৈরি করা হচ্ছে। আগামী দুই দিনের মধ্যে তা সারা দেশে পৌঁছে দেয়া হবে। ক্যাবল টিভিতে স্থানীয়ভাবে প্রচারণা চালানোরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’
ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান সীমিত করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘জনগণকে বলব, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এটা হবে, আমরা আগেই বুঝতে পেরেছিলাম। আমরা যদি সকলে মিলে কাজ করি, প্রটেকটিভ মেজারগুলো মেনে চলি, পাবলিক গ্যাদারিং পরিহার করি- যেগুলো আমরা বলে আসছি, আশা করি করোনাভাইরাস আমরা প্রতিরোধ করতে পারব।’
এদিকে করোনার হাত থেকে মুক্তির জন্য সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সরকারের আইইডিসিআর মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরাও। তিনি বলেছেন, ‘এখন সবাইকে নিয়ে এটা প্রতিরোধ করতে হবে। আর এটি কেবল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একার কাজ নয়। সব মন্ত্রণালয়, সব বিভাগ, সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এমনকি ব্যক্তি পর্যায়েও এগিয়ে আসতে হবে।’
অন্যদিকে বিদেশ ফেরতদের অনেকে বিরূপ আচরণের শিকার হচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘এর ফলে রোগটি আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। খবর পাচ্ছি, শঙ্কিত হয়ে প্রতিবেশী এবং বাড়িওয়ালারা তাদের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করছেন। তাদের সহযোগিতা না করলে তারা হয়তো হোটেলে থাকবেন। এতে এটি আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেড়ে যাবে।’