গ্রাম্য রাজনীতির নির্মমতার শিকার হয়েছে ১১ বছরের শিশু ইলমা বেগম। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ৩০ লাখ টাকা পেয়ে নিজের মেয়েকে হত্যায় সায় দেন বাবা আবদুল মোতালেব। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর নরসিংদীর চাঞ্চল্যকর ইলমা বেগম হত্যার রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির সদরদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ জানান এসব তথ্য।
ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ২০১৫ সালের ২৮ মার্চ নরসিংদী সদর থানার বাহেরচর গ্রামের একটি ধানক্ষেত থেকে ইলমা বেগমের লাশ উদ্ধার করা হয়। ইলমা বাহেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ৩০ লাখ টাকার বিনিময়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটাতে সম্মত ও সহায়তা করেন ইলমার বাবা আবদুল মোতালেব।
সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, ইলমা হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের সিরিয়াস ক্রাইম ইউনিট। নিহত ইলমার ফুফাতো ভাই মাসুমকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত হয়। ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রকৃত আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করতে থানা পুলিশ ব্যর্থ হয়।
ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, সিআইডির সিরিয়াস ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার সৈয়দা জান্নাত আরার তত্ত্বাবধানে একটি টিম নরসিংদী সদর থানা এলাকা থেকে আসামিদের গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন ইলমার বাবা আবদুল মোতালেব, মঙ্গলী বেগম, মাসুম মিয়া, মো. বাতেন এবং মো. শাহজাহান ভূঁইয়া। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে মাসুম মিয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
সিআইডির ডিআইজি বলেন, মামলার তদন্ত গিয়ে জানা যায়, নরসিংদীর বাহেরচর নামক একটি দুর্গম এলাকায় শাহজাহান ভূঁইয়া ও সাবেক মেম্বার বাচ্চুর নেতৃত্বে দুটি দলের মধ্যে এলাকায় প্রভাব বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছি। শাহজাহান গ্রুপের সদস্য নিহত ইলমার ফুফাতো ভাই মাসুমের সাথে বাচ্চু পক্ষের সদস্য তোফাজ্জলের মেয়ে তানিয়ার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিয়ে করার উদ্দেশ্যে মাসুম তানিয়াকে তার ভাইয়ের শ্বশুরবড়িতে নিয়ে আসেন। পরে তানিয়ার বাবা দলবল সহকারে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করে তানিয়াকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। ওই ঘটনায় তানিয়ার বাবা বাদী হয়ে মাসুম, মাসুমের ভাই খসরু ও ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে নরসিংদী সদর মডেল থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন।
ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, বাচ্চু গ্রুপের সদস্যদের ক্ষতি করার জন্য শাহজাহানের বাড়িতে ২০১৫ সালে এক রাতে মাসুমসহ ১৩ জন বৈঠক করেন। প্রতিশোধ নিতে একটি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে বাচ্চু গ্রুপের বিরুদ্ধে মামলা করার বিষয়ে বৈঠকে সিন্ধান্ত হয়। ওই সিন্ধান্ত অনুযায়ী শাহজাহান মোতালিবকে তার মেয়ে ইলমাকে টাকার বিনিময়ে হত্যার প্রস্তাব করেন। মোতালেব মাত্র ৩০ লাখ টাকার বিনিময়ে মেয়েকে হত্যায় রাজি হন।
সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, আগের দিন ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় ইলমার দুলাভাই ও অন্যরা মিলে তাকে টাকা দেন বাজার-সদাই করার জন্য। টাকা পেয়ে ইলমা বাড়ির পাশে নুরার দোকান থেকে জিনিসপত্র কিনে বাড়ি ফেরার পথে তার দুলাভাই বাবুল ও ফুফাতো ভাই মাসুমের নেতৃত্বে সাত আটজন মিলে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী পাশের একটি ধানক্ষেতে ইট দিয়ে মাথা থেতলে ইলমাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেন। এই সময় ইলমার বাবা পাশেই ছিলেন।
জিজ্ঞাসাবাদে মাসুম সিআইডিকে জানান, ইলমার বাবা বলেছিলেন, ‘আগে টাকা দাও পরে কাম সারো’। প্রকৃতপক্ষে হত্যাকাণ্ডের জন্য চুক্তিকৃত ৩০ লাখ টাকা ইলমার বাবা পাননি বলে জানা যায়।
ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, এ ঘটনায় প্রকৃত আসামিদের বাদ দিয়ে ইলমার বাবা মোতালিব বাদী হয়ে বাচ্চু গ্রুপের বিলকিস, খোরশেদ, নাসুসহ অজ্ঞাতনামা চার থেকে পাঁচজনের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ৩১ মার্চ নরসিংদী সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রকৃত আসামিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করতে নরসিংদী সদর মডেল থানা পুলিশ ব্যর্থ হয়। সিআইডি এই হত্যা মামলা তদন্তের দায়িত্ব গ্রহণের পর পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করে।