২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | দুপুর ২:৫৯

তেলিদের খোঁজ নেয় না কেউ

লালমনিরহাট সংবাদদাতা : হারিয়ে যেতে বসেছে ‘ঘানি ভাঙা সরিষার তেল’। বিজ্ঞাপনে-বইপত্রে ঘানির তেলের প্রশংসা থাকলেও ঘানি চালক অর্থাৎ তেলিদের খোঁজ নেয়না কেউ।

লালমনিরহাট জেলা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে ধরলার চরে জহুরুল হক তেলির বাড়ি। তার ৮২ বছরের জীবন অতিবাহিত হয়েছে ঘানির তেল উৎপাদনে। তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় দুটি ঘানিতে দুটি বলদ সমান তালে তেল উৎপাদনের কাজ করছে।

জহুরুল হক বলেন, ‘সকাল ৯টা থেকে দুইটি বলদ তেল মাড়াইয়ের কাজ শুরু করে। প্রতিদিন ২১ কেজি সরিষা থেকে ৫/৬ লিটার তেল উৎপাদন হয়। ৭ কেজি সরিষায় তেল হয় দুই লিটারের কিছু কম। প্রতি লিটার ৩০০ টাকায় বেচতে হয়। বর্তমানে নতুন সরিষার তেল কম হয়। কালো রঙের কাজলী সরিষার তেল কম হয়। কিন্তু কাজলী সরিষার তেল গুণেমানে সেরা। অন্যান্য যে জাতগুলো আছে,সেগুলোর তেল বেশি হয় কিন্তু তেলে রসুনের একটা গন্ধ থাকে।’

জহুরুল হক জানান, তার উৎপাদিত সমস্ত তেল বাড়ি থেকেই বিক্রি হয়ে যায়। সুদূর রংপুর থেকে এসেও তার তেল নিয়ে যায় মানুষ।

ঘানিতে তেল উৎপাদন অনেকটা আদিম ও জটিল। বলদের চোখে কাপড় বা ক্যাপ দিয়ে বন্ধ করে দিতে হয়, যাতে গরু ঘুরতে ঘুরতে মাথা না ঘোরে।

জহুরুল হক জানান, ঘানি তৈরিতে কাঁঠাল গাছ ভাল। একটি আস্ত কাঁঠাল গাছের গুড়ির দাম ২০ হাজার টাকার বেশি। একটি বলদের দাম ৭০ থেকে ৯০ হাজার টাকা।

লালমনিরহাটে অনেক জায়গার নাম তেলিপাড়া,তেলির মোড়, তেলিটারী হলেও সেখানে নেই কোন ঘানি  অনেকেই তাদের পূর্বপুরুষের ব্যবসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। হয়তো কেউ কেউ টিকে থাকার জন্য অতি আধুনিকতায় গা ভাসিয়েছেন।

জাহিদ হাসান,মোকলেসুর রহমান, শরীফ, রাশাসহ স্থানীয় অনেকের সাথেই ঘানি নিয়ে কথা হয়- তারা বলছেন, ‘আদি ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে এ শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখা উচিত। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা করা উচিত।’

প্রকাশ :মার্চ ৭, ২০২০ ১:১২ অপরাহ্ণ