৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং | ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১১:২৮

চার শর্তে ৩০০ কোটি টাকা ঋণ পেতে পারে বিএসএফআইসি

নিজেদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা থাকা সত্ত্বেও সিসি লোন নেওয়ার জন্য একটি ব্যাংকের গ্যারান্টি চেয়েছে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থা (বিএসএফআইসি)।  এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রণালয় বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।  তবে চার শর্তে গ্যারান্টি দেওয়া যেতে পারে বলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক চিঠির জবাবে জানিয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়।

সূত্র জানায়, ব্যাংকে ১৪২ কোটি টাকা গচ্ছিত রেখেও ঋণ পরিশোধ করছে না বিএসএফআইসি।  এ নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।  বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী বিএসএফআইসির ব্যাংক হিসাবে ১৪২ কোটি দুই লাখ টাকা জমা আছে।  বিপুল পরিমাণ ব্যাংক ঋণ অনাদায়ী রেখে ব্যাংক হিসাবে কোন উদ্দেশে এ অর্থ জমা রাখা হয়েছে তার কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।

উপরন্তু নতুন করে প্রতিষ্ঠানটি জনতা ব্যাংক থেকে সিসি লোনের ৩০০ কোটি টাকা গ্যারান্টি চেয়েছে।  শিল্প মন্ত্রণালয়ের বিশেষ অনুরোধে অর্থমন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আসন্ন রমজান মাসে বাজারে যাতে চিনির কোনো ঘাটতি না হয় সে জন্য চারটি শর্তে বিএসএফআইসিকে এই পরিমাণ টাকার গ্যারান্টি দেওয়ার জন্য একটি চিঠিও ইস্যু করা হয়েছে।  পাশাপাশি শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ঋণখেলাপি এ প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডের ওপর তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির অপরিশোধিত ব্যাংক ঋণের পরিমাণ দুই হাজার ৬১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।  শুধু তাই নয়, শীর্ষ ৩০০ ঋণ খেলাপি তালিকার মধ্যে এ প্রতিষ্ঠানটি অবস্থান ৩০তম।  বছরের পর বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি আবার লোকসানও দিচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিএসএফআইসি-কর্তৃক গৃহীত বিপুল পরিমাণ ঋণের বিপরীতে প্রদত্ত রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টির মেয়াদ বারবার নবায়ন করা হয়েছে এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালের ১৬ মে নবায়ন করা হয়।  যার মেয়াদও ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়ে গেছে।  বিএসএফআইসি ২০০৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত চলতি মূলধনের জন্য ৪১৫ কোটি টাকার গ্যারান্টির বিপরীতে সমুদয় ৪১৫ কোটি ঋণ গ্রহণ করে ৩৩৫ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে।  তারপরও বর্তমানে সুদের ৭০৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা অপরিশোধিত রয়েছে।

একই ভাবে প্রতিষ্ঠানটি ২০০৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত চিনি আমদানি-ক্রয়ের জন্য ৯৬৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকার গ্যারান্টির বিপরীতে ৭৯১ কোটি ১৯ লাখ টাকা এলটিআর ঋণ গ্রহণ করে।  এ ঋণের ৩৪৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে এবং সুদসহ বর্তমানে এক হাজার ৩৫১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা অপরিশোধিত রয়েছে।  সে হিসেবে বিএসএফআইসির ২০০৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি গ্যারন্টির বিপরীতে গৃহীত ঋণের মধ্যে এখনো মোট দুই হাজার ৬১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা অপরিশোধিত রয়েছে।

অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশন চলাকালে বাংলাদেশ ব্যাংক-কর্তৃক প্রকাশিত শীর্ষ ৩০০ ঋণখলাপির তালিকায় বিএসএফআইসি অবস্থান ৩০তম।

এ পরিস্থিতি উল্লেখ করে অর্থবিভাগের পক্ষ থেকে চারটি শর্তে বিএসএফআইসির অনুকূলে জনতা ব্যাংক থেকে সিসি ঋণ হিসেবে মঞ্জুরকরা ৩০০ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি/কাউন্টার গ্যারান্টি ইস্যুর নীতিগত সম্মতি দেওয়া হয়েছে।

শর্তগুলো হলো- প্রথমত, বাংলাদেশ ব্যাংক-কর্তৃক প্রকাশিত শীর্ষ ৩০০ ঋণ খেলাপির তালিকা থেকে বের হয়ে আসার লক্ষ্যে বিএসএফআইসিকে কার্যকর ও বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে।  ব্যাংক হিসাবে অলস অর্থ জমা না রেখে খেলাপি-মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণের ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণসমূহ পুনঃতফসিল করাতে হবে এবং নিয়মিত ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা নিতে হবে।  চূড়ান্ত রাষ্ট্রীয় গ্যারন্টি দেওয়ার প্রস্তাবের সঙ্গে সব খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল হয়েছে বলে প্রমাণ দাখিল করতে হবে।  একই সঙ্গে চূড়ান্ত রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি দেওয়ার ক্ষেত্রে বিএসএফআইসির খেলাপি ঋণের পুনঃতফসিলের বিষয়ে সবার আগে বিবেচনা করা হবে।

দ্বিতীয়ত, সংস্থাটিকে সচল করে তোলার লক্ষ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়-কর্তৃক বিএসএফআইসি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থবিভাগের মনিটরিং সেল, শিল্প মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করতে হবে।  শিল্প মন্ত্রণালয় ওই কমিটির মাধ্যমে বিএসএফআইসি এবং সংস্থাটির আওতাধীন চিনিকলগুলোর সার্বিক বিষয়াদি পরীক্ষা করে একটি সুনির্দিষ্ট রূপরেখা প্রণয়ন করবে।  চূড়ান্ত গ্যারান্টি প্রস্তাব পাঠানোর আগেই শিল্প মন্ত্রণালয় ওই কমিটি গঠন ও রূপরেখা প্রণয়নে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করবে।

তৃতীয়ত, নতুন নেওয়া ঋণের জন্য পৃথক ‘ঋণ পরিশোধ তহবিল’ গঠন করা এবং চতুর্থত, আসন্ন রমজানের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ চিনি মজুদ রাখা।

অর্থবিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন সময়ে সরকারের নীতি ও কর্মসূচি বাস্তবায়নের স্বার্থে সরকারি মালিকানাধীন আর্থিক এবং অ-আর্থিক প্রতিষ্ঠান-কর্তৃক গৃহীত ঋণের জন্য গ্যারান্টি ও কাউন্টার গ্যারান্টি দিয়ে থাকে সরকার।  কোনো কারণে ঋণ গ্রহীতা প্রতিষ্ঠানগুলো এসব ঋণ যথাসময়ে পরিশোধে ব্যর্থ হলে এসব পরিশোধের দায়-দায়িত্ব তখন সরকারের ওপর বর্তায়।  এই ঋণ সরকারকেই পরিশোধ করতে হয় এবং যা কি না সামগ্রিক অর্থ ব্যবস্থায় চাপ সৃষ্টি করে।

প্রকাশ :মার্চ ২, ২০২০ ৩:০১ অপরাহ্ণ