বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জোবাইদা রহমান ঠান্ডা, কাশি আর চোখের ব্যথায় ভুগছেন গত ১৫ দিন ধরে। সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য ঘরের বাইরে বের হওয়ার পর থেকেই কাশি শুরু হয়, চোখের ভেতরে চুলকাতে শুরু করে, রাতে শুরু হয় মাথা ব্যথা।
সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাবরিনা সুলতানা (ছদ্মনাম)। শীতজনিত রোগ শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে ভুগছেন বহুদিন ধরে। কোনোভাবেই ঠান্ডা কমছে না। একদিন ভালো থাকেন তো পরেরদিন থেকে আবার শুরু হয়। তার ছয় বছরের ছেলে মোহাইমেনও একইভাবে ঠান্ডা-জ্বর আর সর্দিতে আক্রান্ত।
গণমাধ্যমকর্মী সোহানা পারভীন ভুগছেন অ্যালার্জিতে। ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খাচ্ছেন। তাতে করে একদিন কিছুটা কম থাকলেও পরের দিন থেকে আবার ভুগতে থাকেন। চিকিৎসক তাকে বেশকিছু পরীক্ষা দিয়েছেন।
ওপরের তিনটা উদাহরণ একেবারে সাম্প্রতিক সময়ের। এমন দৃষ্টান্ত এখন ঘরে ঘরে। পরিবেশের দূষণ আর শীতজনিত রোগের সংক্রমণে প্রায় প্রতিটি পরিবারে কেউ না কেউ আক্রান্ত। কারও সর্দি-কাশি, কারও অ্যালার্জিজনিত সমস্যা কারওবা ঠান্ডা থেকে ডায়রিয়ার মতো রোগ।
মগবাজারের ডাক্তার গলিতে অবস্থিত নোয়াখালী ফার্মেসির ওষুধ বিক্রেতা মাহবুবুল হক বলেন, চলতি শীত মৌসুমে দোকান থেকে মানুষ যে পরিমাণে শীতজনিত রোগের ওষুধ কিনেছেন তিনি গত কয়েক বছরে এমনটা দেখেননি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আবহাওয়ার ধরনে পরিবর্তনের কারণে এবারে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। একইসঙ্গে রয়েছে ঢাকার ধুলাবালি। রাজধানীতে উন্নয়নমূলক কাজ বাড়ছে, কিন্তু যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নেওয়ায় উন্নয়নের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে শহরময় ছড়িয়ে পড়েছে ধুলার দূষণ। আর এতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক বছরের মধ্যে চলতি শীত মৌসুমে কয়েকগুণ বেশি মানুষ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি। গত বছরের ১ নভেম্বর থেকে সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচ লাখ ৪৯ হাজার ১১৩ জন আর মারা গেছেন ৩১ জন। এর মধ্যে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন ৯৩ হাজার ৮২৮ জন আর মারা গেছেন ২২ জন; ডায়রিয়াতে আক্রান্ত হয়েছেন দুই লাখ ১৮ হাজার ৮৭৮ জন আর মারা গেছেন ৯ জন। আর অন্যান্য অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়েছেন দুই লাখ ৩৬ হাজার ৪০৭ জন, মারা গেছেন ৩০ জন। অন্যান্য অসুস্থতা বলতে জন্ডিস, আমাশয়, চোখের প্রদাহ, চর্মরোগ ও জ্বরকে সংজ্ঞায়িত করেছে হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম।
স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা গত চার বছরের মোট আক্রান্তের হারকে ছাড়িয়েছে। কন্ট্রোল রুমের তথ্যানুযায়ী, ২০১৫-১৬ সালের শীত মৌসুমে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, ডায়রিয়া, জন্ডিস, আমাশয়, চোখের প্রদাহ, চর্মরোগ ও জ্বরের মতো শীতজনিত অসুখে আক্রান্ত হন এক লাখ সাত হাজার ৩৬৯ জন আর মারা যান ৩৮ জন। পরের মৌসুমে ( ২০১৬-১৭) আক্রান্ত হন ৬১ হাজার ৫৬৪ জন ও মারা যান ১১ জন, ২০১৭-১৮ সালে আক্রান্ত হন এক লাখ চার হাজার ৬৭ জন, এদের মধ্যে মৃত্যু হয় ২০ জনের। গত ২০১৮-১৯ মৌসুমে আক্রান্ত হন ৮৬ হাজার ৭৫৯ জন আর মারা যান ১১ জন।
জানতে চাইলে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জীবনাচরণ বদলাতে হবে’। একইসঙ্গে এবারে অন্যান্য বছরের চেয়ে শীত পড়েছে বেশি। সবকিছু মিলিয়েই রোগীর সংখ্যা কয়েক বছরের তুলনায় বেশি। পরিবেশের সঙ্গে যুগ যুগ ধরে অসুখের সম্পর্ক রয়েছে মন্তব্য করে অধ্যাপক সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, দেশে দূষণ বাড়ছে। শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের জন্য এটাই মূল কারণ। তিনি বলেন, যেখানে সেখানে থুথু ফেলা, হাঁচি দেওয়ার সময় নিয়ম না মানা, কাশি শিষ্টাচার না মানার কারণে বাতাসে রোগের জীবাণু ঘুরে বেড়াচ্ছে। যার কারণে ঘরে ঘরে ঠান্ডাজনিত রোগী পাওয়া যাচ্ছে ।
শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত রোগ থেকে বাঁচতে তিনি এই সময়ে আক্রান্তদের থেকে একমিটার দূরে থাকা, হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময়ে টিস্যু বা রুমাল ব্যবহার করা, সে টিস্যু কাভারযুক্ত বিনে ফেলা আর রুমাল ভালো করে ধুয়ে ফেলা, হ্যান্ডশেক এবং কোলাকুলি না করা এবং অন্তত দুই সেকেন্ড ধরে ভালো করে হাত ধুয়ে খাবার খাওয়ার কথা বলেন।
এদিকে, হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেন, আবহাওয়ার ধরনে বদল আর বাতাসে ধুলার কারণে অসুখ বেড়েছে। তিনি বলেন, শীত কিছুটা কমলেও দিনের বেলায় গরম আবার রাতের বেলাতে ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে। যার কারণে শরীরে কিছুটা ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয় ২৪ ঘণ্টার ভেতরে। আবার ধুলা এত বেড়েছে যে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ বেড়েছে, বেড়েছে ডায়রিয়া।
সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাবরিনা সুলতানা (ছদ্মনাম)। শীতজনিত রোগ শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে ভুগছেন বহুদিন ধরে। কোনোভাবেই ঠান্ডা কমছে না। একদিন ভালো থাকেন তো পরেরদিন থেকে আবার শুরু হয়। তার ছয় বছরের ছেলে মোহাইমেনও একইভাবে ঠান্ডা-জ্বর আর সর্দিতে আক্রান্ত।
গণমাধ্যমকর্মী সোহানা পারভীন ভুগছেন অ্যালার্জিতে। ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খাচ্ছেন। তাতে করে একদিন কিছুটা কম থাকলেও পরের দিন থেকে আবার ভুগতে থাকেন। চিকিৎসক তাকে বেশকিছু পরীক্ষা দিয়েছেন।
ওপরের তিনটা উদাহরণ একেবারে সাম্প্রতিক সময়ের। এমন দৃষ্টান্ত এখন ঘরে ঘরে। পরিবেশের দূষণ আর শীতজনিত রোগের সংক্রমণে প্রায় প্রতিটি পরিবারে কেউ না কেউ আক্রান্ত। কারও সর্দি-কাশি, কারও অ্যালার্জিজনিত সমস্যা কারওবা ঠান্ডা থেকে ডায়রিয়ার মতো রোগ।
মগবাজারের ডাক্তার গলিতে অবস্থিত নোয়াখালী ফার্মেসির ওষুধ বিক্রেতা মাহবুবুল হক বলেন, চলতি শীত মৌসুমে দোকান থেকে মানুষ যে পরিমাণে শীতজনিত রোগের ওষুধ কিনেছেন তিনি গত কয়েক বছরে এমনটা দেখেননি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আবহাওয়ার ধরনে পরিবর্তনের কারণে এবারে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। একইসঙ্গে রয়েছে ঢাকার ধুলাবালি। রাজধানীতে উন্নয়নমূলক কাজ বাড়ছে, কিন্তু যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নেওয়ায় উন্নয়নের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে শহরময় ছড়িয়ে পড়েছে ধুলার দূষণ। আর এতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক বছরের মধ্যে চলতি শীত মৌসুমে কয়েকগুণ বেশি মানুষ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি। গত বছরের ১ নভেম্বর থেকে সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচ লাখ ৪৯ হাজার ১১৩ জন আর মারা গেছেন ৩১ জন। এর মধ্যে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন ৯৩ হাজার ৮২৮ জন আর মারা গেছেন ২২ জন; ডায়রিয়াতে আক্রান্ত হয়েছেন দুই লাখ ১৮ হাজার ৮৭৮ জন আর মারা গেছেন ৯ জন। আর অন্যান্য অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়েছেন দুই লাখ ৩৬ হাজার ৪০৭ জন, মারা গেছেন ৩০ জন। অন্যান্য অসুস্থতা বলতে জন্ডিস, আমাশয়, চোখের প্রদাহ, চর্মরোগ ও জ্বরকে সংজ্ঞায়িত করেছে হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম।
স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা গত চার বছরের মোট আক্রান্তের হারকে ছাড়িয়েছে। কন্ট্রোল রুমের তথ্যানুযায়ী, ২০১৫-১৬ সালের শীত মৌসুমে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, ডায়রিয়া, জন্ডিস, আমাশয়, চোখের প্রদাহ, চর্মরোগ ও জ্বরের মতো শীতজনিত অসুখে আক্রান্ত হন এক লাখ সাত হাজার ৩৬৯ জন আর মারা যান ৩৮ জন। পরের মৌসুমে ( ২০১৬-১৭) আক্রান্ত হন ৬১ হাজার ৫৬৪ জন ও মারা যান ১১ জন, ২০১৭-১৮ সালে আক্রান্ত হন এক লাখ চার হাজার ৬৭ জন, এদের মধ্যে মৃত্যু হয় ২০ জনের। গত ২০১৮-১৯ মৌসুমে আক্রান্ত হন ৮৬ হাজার ৭৫৯ জন আর মারা যান ১১ জন।
জানতে চাইলে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জীবনাচরণ বদলাতে হবে’। একইসঙ্গে এবারে অন্যান্য বছরের চেয়ে শীত পড়েছে বেশি। সবকিছু মিলিয়েই রোগীর সংখ্যা কয়েক বছরের তুলনায় বেশি। পরিবেশের সঙ্গে যুগ যুগ ধরে অসুখের সম্পর্ক রয়েছে মন্তব্য করে অধ্যাপক সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, দেশে দূষণ বাড়ছে। শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের জন্য এটাই মূল কারণ। তিনি বলেন, যেখানে সেখানে থুথু ফেলা, হাঁচি দেওয়ার সময় নিয়ম না মানা, কাশি শিষ্টাচার না মানার কারণে বাতাসে রোগের জীবাণু ঘুরে বেড়াচ্ছে। যার কারণে ঘরে ঘরে ঠান্ডাজনিত রোগী পাওয়া যাচ্ছে ।
শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণজনিত রোগ থেকে বাঁচতে তিনি এই সময়ে আক্রান্তদের থেকে একমিটার দূরে থাকা, হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময়ে টিস্যু বা রুমাল ব্যবহার করা, সে টিস্যু কাভারযুক্ত বিনে ফেলা আর রুমাল ভালো করে ধুয়ে ফেলা, হ্যান্ডশেক এবং কোলাকুলি না করা এবং অন্তত দুই সেকেন্ড ধরে ভালো করে হাত ধুয়ে খাবার খাওয়ার কথা বলেন।
এদিকে, হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেন, আবহাওয়ার ধরনে বদল আর বাতাসে ধুলার কারণে অসুখ বেড়েছে। তিনি বলেন, শীত কিছুটা কমলেও দিনের বেলায় গরম আবার রাতের বেলাতে ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে। যার কারণে শরীরে কিছুটা ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয় ২৪ ঘণ্টার ভেতরে। আবার ধুলা এত বেড়েছে যে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ বেড়েছে, বেড়েছে ডায়রিয়া।