২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ২:১৫

আ.লীগ নেতা এনামুল-রুপনের বাড়িতে পাঁচ সিন্দুকভর্তি টাকা

রাজধানীর ওয়ারীর লালমোহন স্ট্রিট এলাকায় একটি বাসায় অভিযান চালাচ্ছে র‌্যাব। ক্যাসিনোবিরোধী এই অভিযানে আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা এনামুল হক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুপন ভূঁইয়ার বাড়ি থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচটি সিন্দুকভর্তি টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, এফডিআর ও ক্যাসিনোসামগ্রী জব্দ করেছে পুলিশের এই এলিট ফোর্সটি। সোমবার গভীর রাত থেকে শুরু হওয়া এই অভিযান এখনো চলছে।

এর আগেও গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর এনামুল ও রূপনদের বাসায় এবং তাদের দুই কর্মচারীর বাসায় অভিযান চালিয়েছিল র‌্যাব। তখন সেখান থেকে চারটি ভল্ট ভেঙে নগদ এক কোটি পাঁচ লাখ টাকা ও ৭৩০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার জব্দ করা হয়েছিল।

জানা যায়, গভীর রাতে পুরান ঢাকার ১১৯ লালমোহন সাহা স্ট্রিটে এনামুল ও রুপন ভূঁইয়ার বাড়িতে অভিযান শুরু করে র‌্যাব। এ সময় কয়েক কোটি টাকার এফডিআর ও ও পাঁচটি সিন্দুকে থাকা কয়েক কোটি টাকা জব্দ করে র‌্যাব। জব্দ করা হয়েছে অনেক ক্যাসিনো সরঞ্জাম।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক এএসপি সুজয় সরকার  এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে ওয়ারীর লালমোহন স্ট্রিটে র‌্যাবের অভিযানে এখন পর্যন্ত বিপুল টাকা ও ক্যাসিনো সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে। পরে এ নিয়ে বিস্তারিত সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে।

গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে শুরু হয় ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান। অভিযানে ক্যাসিনোর সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সম্পৃক্ততার কারণে ক্যাসিনো বন্ধের অভিযান সরকারি দলের নেতাদের ভাষায় হয়ে ওঠে শুদ্ধি অভিযান। সেই অভিযান রাজনীতির অঙ্গনেও কাঁপন ধরিয়ে দেয়।

১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার ফকিরাপুলের ইয়ংমেনস ক্লাবের মধ্য দিয়ে অভিযানের শুরু। এরপর মোহামেডান, ওয়ান্ডারার্স, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং, দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব, আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ, গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব এবং কলাবাগান ক্রীড়াচক্রে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চালায় র‌্যাব-পুলিশ।

এসব অভিযানে গ্রেপ্তার হন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, শফিকুল আলম ফিরোজ, ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, এনামুল হক আরমান, হাবিবুর রহমান মিজান, তারেকুজ্জামান রাজিব ও ময়নুল হক মঞ্জু, ঢাকা মোহামেডান ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়াসহ সরকারি দলের অনেক নেতা। জব্দ হয় কোটি কোটি টাকা, মাদক ও ক্যাসিনো সরঞ্জাম।

সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর থেকেই আলোচনায় আসেন দুই ভাই এনামুল হক ও রূপন ভূঁইয়া। অভিযানের পর থেকেই তারা পলাতক ছিলেন।

গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর এনামুল ও রূপনদের বাসায় এবং তাদের দুই কর্মচারীর বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। সেখান থেকে চারটি ভল্ট ভেঙে নগদ এক কোটি পাঁচ লাখ টাকা ও ৭৩০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার জব্দ করা হয়েছিল।

এরপর সূত্রাপুর ও গেন্ডারিয়া থানায় তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়। একাধিকবার অভিযান চালিয়েও তাদের ধরা যায়নি। অবশেষে গত ১৩ জানুয়ারি রাজধানীর অদূরে কেরানীগঞ্জ থেকে এনামুল হক ও রূপন ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।

এনামুল ও রূপন গত ছয় থেকে সাত বছরে পুরান ঢাকায় বাড়ি কিনেছেন কমপক্ষে ১২টি। ফ্ল্যাট কিনেছেন ৬টি। পুরোনো বাড়িসহ কেনা জমিতে গড়ে তুলেছেন নতুন নতুন ইমারত। স্থানীয় লোকজন জানান, এই দুই ভাইয়ের মূল পেশা জুয়া। আর নেশা হলো বাড়ি কেনা।

জুয়ার টাকায় এনামুল ও রূপন কেবল বাড়ি ও ফ্ল্যাটই কেনেননি, ক্ষমতাসীন দলের পদও কেনেন বলে জানা যায়।

২০১৮ সালে এনামুল পান গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির পদ। আর রূপন পান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ। তাদের পরিবারের ৫ সদস্য, ঘনিষ্ঠজনসহ মোট ১৭ জন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগে পদ পান। তারা সরকারি দলের এসব পদ-পদবি জুয়া ও ক্যাসিনো কারবার নির্বিঘ্নে চালানোর ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলেন বলে স্থানীয় লোকজন জানান।

প্রকাশ :ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২০ ১২:২৮ অপরাহ্ণ