জনসন অ্যান্ড জনসন লোশন, ডাভ শ্যাম্পু , কুমারিকা তেলসহ সব বিদেশি ব্র্যান্ডের নকল প্রসাধনী তৈরি হচ্ছে পুরান ঢাকায়।
সোমবার দিবাগত রাতে পুরান ঢাকার একটি ভবনের কয়েকটি ফ্ল্যাটে গোপনে মাদক বিক্রি হচ্ছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে দেখা যায় সেসব ফ্ল্যাট নকল প্রসাধনী তৈরির কারখানা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তৈরী হচ্ছে বিশ্ব বিখ্যাত জনসন ব্র্যান্ডের লোশন, ডাবরের আমলা কেশ তেল, ভ্যাসলিন, হরলিক্স, ব্যথানাশক ওষুধ মুভসহ বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক ওষুধ।
মঙ্গলবার সকালে র্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, জনসন অ্যান্ড জনসন লোশন, ডাভ শ্যাম্পু , কুমারিকা তেলসহ সব বিদেশি ব্র্যান্ডের নকল প্রসাধনী তৈরি হচ্ছে পুরান ঢাকায়। শুধু এগুলোই নয়। নিভিয়া বেবি লোশন, দামি মেকআপ বক্স, পাউডার সবকিছুই বিদেশি ব্র্যান্ডের আদলে তৈরি হচ্ছে পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে। এর সঙ্গে পুরান ঢাকার এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী জড়িত। তারা গোপনে বেশকিছু কারখানা গড়ে তুলেছে।
এসময় ভেজাল পণ্য তৈরি ও বাজারজাতের অভিযোগে দুইজনকে দুই বছর কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেয়ার পাশাপাশি মামলা করে র্যাব।
স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মৌলভীবাজার, নয়াবাজার, চকবাজার, আরমানিটোলা, মালিটোলা, বংশাল, কেরানীগঞ্জসহ আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন বাসা বাড়িতে গড়ে উঠেছে এসব নকল প্রসাধনী তৈরির কারখানা।
তারা ভেজাল এবং বাজারে ফেলে দেওয়া কেমিক্যাল সংগ্রহ করে। এরপর ময়দা, মেয়াদ উত্তীর্ণ পাউডার, আটার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে প্রসাধনী তৈরী করে। এর আগে তারা প্রসাধনী সামগ্রীর ব্যবহৃত কৌটা হকারের মাধ্যমে বাসাবাড়ি এবং ভাঙারির দোকান থেকে সুলভ মূল্যে ক্রয় করে। পরে তা পরিষ্কার করে নিজেদের প্রেস থেকে তৈরি করা লেভেল লাগিয়ে বিদেশি বলে বাজারজাত করে।
সরেজমিন জানা গেছে, এই চক্রে দেড় শতাধিক প্রতারক জড়িত। এর মধ্যে আটজন ভেজাল ব্যবসাকে অতিগোপনে নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। ইতোমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তাদের নাম এসেছে। খোঁজ খবর নিতে মাঠে নেমেছে এনবিআরের গোয়েন্দারা।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষ বাজার থেকে ভেজাল এসব সামগ্রী কিনে প্রতারিতই হচ্ছেন না। এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। নিয়মিত এসব ব্যবহার করলে স্কিনের নানা ক্ষতি হয়। ক্যান্সারও হতে পারে। এ কারণে বাজার থেকে এসব প্রসাধনী সামগ্রী কেনার আগে ভালো করে যাচাই বাছাই করে নিতে হবে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে। তবে নকল কিছুটা এড়াতে আসল প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহারের পর কৌটা ভেঙে ফেলার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।