একদিন বাদেই (১৪ ফেব্রুয়ারি) পয়লা ফাল্গুন, বসন্তবরণ। এবার ঠিক একই দিনেই গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে উদযাপিত হবে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। ফুলে ফুলে এক দিনেই জমে উঠবে দুটি উৎসব। তার ঠিক এক সপ্তাহ পরেই ২১ ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। দেশের প্রতিটি শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হবে ভাষা শহীদদের। সঙ্গত কারণে সামনের সপ্তাহজুড়েই ফুলের চাহিদা ঊর্ধ্বমুখী। একারণে দামও থাকে বেশ বাড়তি। এই সময়কে কেন্দ্র করেই আশায় বুক বাঁধেন ফুলচাষিরা। বাজার ধরতে তাই ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
প্রতি বছরই এই সময়কে কেন্দ্র করে ফুলের রাজ্য খ্যাত যশোরের গদখালি ও শার্শা উপজেলার ফুলচাষিদের বিশেষ প্রস্তুতি থাকে। তাদের কাছে পুরো ফেব্রুয়ারি মাসটি তাই উৎসব হিসেবে বিবেচিত হয়। পাইকারিভাবে তারা এবার ৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির তথ্যমতে- এই কয়দিনে যশোরে পাইকারি পর্যায়ে ৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যশোরে প্রায় ৬ হাজার ফুলচাষি ১৫শ’ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার ফুল চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সবচেয়ে বেশি চাষ হয় গ্লাডিওলাস। তারপরই চাষ হয় রজনীগন্ধা ও গোলাপ। তাদের উৎপাদিত জারবেরা, গাঁদা, জিপসি, রডস্টিক, কলনডালা, চন্দ্রমল্লিকাসহ ১১ ধরনর ফুল সারাদেশের বাজারে যাচ্ছে।
সরেজমিনে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি, পানিসারা, নাভারণ, নির্বাসখোলা শার্শার উলাশী এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে- জমিতে সেচ প্রদান, গোলাপের কুঁড়িতে ক্যাপ পরানো, সার-কীটনাশক, আগাছা পরিষ্কার করাসহ ফুলের পরিচর্যা করছেন চাষিরা।
শার্শার উলাশী এলাকার ফুলচাষি মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাবা ফুল চাষ করতেন। এখন আমিও ফুল চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আমি তিন বিঘা জমিতে ফুল চাষ করছি। এর মধ্যে রজনীগন্ধা, গোলাপ ও জারবেরা। সামনে ফুলের বড় বাজার, তাই তো বাজার ধরতে সকাল-বিকাল ফুলের পরিচর্যা করছি।’
গদখালির ফুল ফুলচাষি আজগর আলী বলেন, ‘চার বিঘা গোলাপ, দুই বিঘা জারবেরা ও এক বিঘা গ্লাডিওলাস ও রডস্টিক চাষ করেছি। আমরা গোলাপের কুঁড়িতে ক্যাপ পরিয়ে রাখি, যাতে ফুল একটু দেরি করে ফোটে। বসন্ত দিবস, ভালবাসা দিবস আর ২১ ফেব্রুয়ারিতে যাতে বাজারে ফুল দেওয়া যায়। প্রতিটি গোলাপে ক্যাপ পরানোসহ খরচ প্রায় চার টাকার মতো। যদি সাত থেকে আট টাকা বিক্রি করা যায় তাহলে মুনাফা বেশি পাবো।’ ফুল চাষের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি সফলভাবে ফুল চাষ করে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, ‘যশোরের ঝিকরগাছা, শার্শা উপজেলাসহ এই জেলায় বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ হচ্ছে। ১৯৮৩ সালে গদখালীতে মাত্র ৩০ শতক জমিতে ফুল চাষ শুরু হয়। এখন চাষ হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে। দেশে ফুলের মোট চাহিদার ৭০ ভাগই যশোরের গদখালি ও শার্শা থেকে সরবরাহ করা হয়। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এই ফুল এখন যাচ্ছে দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়াতেও। বাংলাদেশে বর্তমান সময়ে ৩০ লাখ মানুষের জীবিকা এই ফুলকে কেন্দ্র করে। প্রায় ২০ হাজার কৃষক ফুলচাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এর মধ্যে কেবল যশোরেই প্রায় ৬ হাজার ফুলচাষি রয়েছেন।’
আগামী সপ্তাহের ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘সামনের দিবসগুলোতে প্রায় ৭০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সারাবছর টুকটাক ফুল বিক্রি হলে ও মূলত ফেব্রুয়ারি মাসকে কেন্দ্র করেই এখানকার চাষিরা বেশি ফুল চাষ করে থাকেন।’