ক্রিকেটে হাটি হাটি পা পা করার পর থেকে ২০১৫ সালে এসে প্রথমবারের মতো বড় স্বপ্ন দেখতে শুরু করে বাংলাদেশ। ট্রান্স-তাসমানিয়ান অঞ্চলে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডে লায়নদের হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো কোনো বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের নক আউট পর্বে মুখোমুখি ভারতের বিপক্ষে। নানা বিতর্ককে সঙ্গী করে হার নিয়ে মাঠ ছাড়লো মাশরাফির বাংলাদেশ। সেবারই প্রথম স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় বিধুর টাইগার শিবির।
২০১৬ সালে ঘরের মাঠে যুব বিশ্বকাপে আবারো অন্যতম ফেভারিট হিসেবে মাঠে নামে বাংলাদেশ। পুরো আসর জুড়ে দুর্দান্ত খেলতে থাকে মেহেদি হাসান মিরাজের বাংলাদেশ। ব্যাটে-বলে অসাধারন পারফরম্যান্স করে প্রথমবারের মতো আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টে টাইগারদের সেমিফাইনালে তোলে অধিনায়ক মিরাজ। তবে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে আবারো দুঃখের গল্পের ভাগীদার বাংলাদেশ। সেমিফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে কান্নাকে সঙ্গী করে বিদায় নেয় টাইগাররা।
ওয়ানডের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ততদিনে মোটামুটি সমীহ জাগানিয়া দল হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া শুরু করে বাংলাদেশ। ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর র্যাঙ্কিংয়ে আটের মধ্যে থেকে ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ। এবার কোয়ার্টার ফাইনালে আর থমকে থাকেনি টাইগাররা। দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার সাকিব ও মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে কার্ডিফ রাঙায় বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে সেমিফাইনালে জায়গা করে নেয় টাইগাররা। এবং আবার প্রতিপক্ষ ভারত। আবার দুস্বপ্নের রাত।
২০১৮ সালে এসে প্রথম কোনো টুর্নামেন্টে শিরোপার স্বাদ পায় বাংলাদেশ ক্রিকেট। তবে সেটি নারীদের হাত ধরে মহাদেশীয় টুর্নামেন্টে। মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত ২০১৮ এশিয়া কাপে বাংলাদেশকে শিরোপার স্বাদ এনে দেয় নারীরা। ফাইনালে ভারতীয় নারীদের হারায় টাইগার নারীরা।
তবে বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের শিরোপা অপেক্ষা যেনো ঘুচেও ঘুচছিল না। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভালো শুরুর পরেও হোঁচট খায় জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। সে আক্ষেপ ভুলাতে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিকে বেছে নিলো যুবারা।
এবারের যুব বিশ্বকাপে হট ফেভারিট হিসেবে খেলতে আসে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। আসর শুরুও করে প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিয়ে। গ্রুপ পর্বে অপরাজিত থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়। ওঠে শেষ আটে। প্রতিপক্ষ স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে পাত্তাই দেয়নি বাংলার যুবারা। হারিয়ে ওঠে শেষ চারে।
সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে পায় টাইগার যুবারা। তবে পচেফস্ট্রুমের মাঠ নিজেদের চেনা হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের। সহজ জয় নিয়ে শিরোপার চেয়ে আর এক জয় দূরে জায়গা করে নেয় টাইগার যুবারা।
আবার বাধা হয়ে দাঁড়ায় ভারত। তবে দানে দান তিন দান বেছে নিয়েছিল বাংলাদেশের যুব ক্রিকেটাররা। বড় ভাইদের দুই হারের বদলা নিতে পচেফস্ট্রুমে টস জয় দিয়ে শুরু বাংলাদেশের। নিয়ন্ত্রিত বোলিং ও অসাধারণ ফিল্ডিংয়ে দুর্দান্ত ভারতকে মাটিতে নামিয়ে আনলো যুব ক্রিকেটাররা। ১৭৭ রানে গুটিয়ে দিলো ভারতীয় যুবাদের।
জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে দারুণ শুরু করে টাইগার ক্রিকেটাররা। তবে মাঝপথে খেই হারিয়ে ফেললো ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু মাঠে ছিল দলনেতা আকবর আলী। সব দায়িত্ব যেনো নিজের ঘাড়ে নিলেন। দলীয় ৬২ রানে দলকে বাঁচাতে মাঠে আসেন এ ক্রিকেটার। ঠান্ডা মাথায় খেলে দল জিতিয়ে শিরোপা নিশ্চিত করে তবেই থামলেন।
বাংলাদেশকে এনে দিলেন ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় সাফল্য। কান্নার গল্প গুলো বদলে দিলেন সুখে। সমর্থকদের ভাসালেন আনন্দে। আর দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বাংলাদেশের মানুষকে উপহার দিলেন প্রথম শিরোপার স্বাদ।
যুবাদের হাত ধরে তো কাটলো বৈশ্বিক শিরোপার গেরো। এবার জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের দায়িত্ব নিজেদের আরো উচ্চতায় পৌঁছানোর।