নির্বাচনের এক সপ্তাহ পরেও নগরে দেখা মিলছে নির্বাচনী পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন। নির্বাচন শেষে প্রার্থীরা নিজ নিজ উদ্যোগে সেগুলো অপসারণ করার নির্দেশনা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। কিন্তু সেটি যে পরিপালন হয়নি, তা নগরীর বিভিন্ন স্থানে ঝুলে থাকা, সেঁটে থাকা পোস্টার বলে দিচ্ছে।
নির্বাচনের পর বিশেষ করে মেয়র প্রার্থীরা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে তাদের আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে বলেছিলেন, রাজধানীর সড়ক, গলিপথ, দেওয়াল থেকে নিজেদের নির্বাচনী পোস্টার-ব্যানার সরিয়ে ফেলতে কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। বাস্তবে নগরীর কোথাও এমন দৃশ্য চোখে পড়েনি।
ইতিমধ্যে অবশ্য অন্যভাবে নগরীর পরিত্যক্ত পোস্টার-জঞ্জাল কমেছে। দুই সিটির হাতে গোনা কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থী নিজ নিজ পোস্টার-ব্যানার অপসারণ করেছেন। বাকিগুলো অপসারণ করতে হয়েছে সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগকে। তবে এক সপ্তাহেও শতভাগ পোস্টার-ব্যানার অপসারণ করতে পারেনি দুই সিটি। আগামী দুই-এক দিনে নির্বাচনী প্রচারসামগ্রী শতভাগ অপসারণ করা হবে বলে জানিয়েছে নগর কর্তৃপক্ষ।
গতকাল শনিবার নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বহু নির্বাচনী পোস্টার ও ব্যানার চোখে পড়েছে। এর মধ্যে উত্তর সিটির মোহাম্মদপুর টাউনহল, কাঠপট্টি, আসাদ এভিনিউ, হুমায়ূন রোড, বাবর রোড, মিরপুরের ৬০ ফিট, মনিপুর এলাকায় পোস্টার-ব্যানারের দেখা মিলেছে। এসব এলাকার বিভিন্ন বৈদ্যুতিক খুঁটিতে পাঁচ-দশটি করে পোস্টার দড়িতে ঝুলতে দেখা গেছে। পোস্টারের সঙ্গে দেখা গেছে পলিথিন।
দক্ষিণ সিটির ধানমণ্ডি, কলাবাগান, পান্থপথ, শুক্রাবাদ, কাঁঠালবাগান, বাংলামোটর এলাকাতেও পোস্টার ঝুলতে দেখা গেছে। অনেক জায়গায় সড়কের ওপর দিয়ে আড়াআড়ি ঝুলানো পোস্টার দুই পাশ দিয়ে কেটে নেওয়া হলেও পোস্টার রয়ে গেছে সড়কের দুই পাশের বৈদ্যুতিক তার ও খুঁটির সঙ্গে। রয়েছে ব্যানার ও ফেস্টুন।
গত ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। পরদিন এক সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীদের নিজ নিজ পোস্টার সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেন নির্বাচন কমিশন সচিব। সময় বেঁধে দেন ২৪ ঘণ্টা।
ইসি সচিব মো. আলমগীর বলেছিলেন, ‘যে যে প্রার্থী প্রচার করেছেন আগামীকালের (৩ ফেব্রুয়ারি) মধ্যে নিজ দায়িত্বে তারা পোস্টার অপসারণ করে নিয়ে যাবেন। তা না হলে নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী, যারা দায়িত্বরত আছেন তারা সরাতে গেলে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং অন্য যে বিধান আছে তাও মেনে নিতে হবে।’
নির্দেশনার পর হাতে গোনা কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থী তা অনুসরণ করেছেন বলে দেখা গেছে। মেয়রসহ অন্য প্রার্থীদের কোনো কর্মীকে পোস্টার সরাতে মাঠে দেখা যায়নি।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির দুই প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তার মতে, তারা চেষ্টা করছেন দ্রুত সব পোস্টার-ব্যানার অপসারণ করতে। কিন্তু এবারের নির্বাচনে বিপুল পোস্টার ব্যবহৃত হওয়ায় তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
উত্তর সিটির দাবি এরই মধ্যে প্রায় সব পোস্টার অপসারণের কাজ শেষ হয়েছে। অলিগলিতে যদি কোথাও বাকি থাকে তাও অপসারণ করা হবে বলে জানান করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এম মঞ্জুর হোসেন।
মঞ্জুর হোসেন বলেন, ‘বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তারের সঙ্গে যুক্ত থাকায় অনেক পোস্টার নামাতে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। বিচ্ছিন্ন কিছু জায়গায় অল্প কিছু পোস্টার থাকতে পারে। তবে আমাদের মনিটরিং অব্যাহত রয়েছে। যেখানে পোস্টার পাওয়া যাবে তা অপসারণ করা হবে।’
জনবল কম থাকায় দক্ষিণ সিটির পোস্টার অপসারণে সময় বেশি লাগছে বলে জানান এই সিটির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর মো. জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘এবার পোস্টারের ব্যাপকতা অনেক বেশি ছিল। পোস্টারের কারণে আকাশে দেখা যাচ্ছিল না। আমাদের তো বাড়তি জনবল নেই। পরিচ্ছন্নতাকর্মী যারা আছে, তাদের দিয়েই এই বিপুল পোস্টার অপসারণের কাজটা করাতে হচ্ছে।’
তবে এই কাজ সিটি করপোরেশনের করার কথা নয় বলে জানান মো. জাহিদ হোসেন। বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী প্রার্থীদের নিজ নিজ পোস্টার সরিয়ে নেয়ার কথা। কিন্তু তারা সেটা করেন না। নগর পরিষ্কারের দায়বদ্ধতা সিটি কপোরেশনের রয়েছে বলে স্বপ্রণোদিত হয়ে আমরা পোস্টার সরানোর কাজটি করছি।’
শতভাগ কাজ শেষ না হলেও পোস্টার অপসারণের কাজটি সহনীয় অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে দাবি জাহিদ হোসেনের। বলেন, ‘কিছু জায়গায় এখনো পোস্টার রয়েছে। আমার টিম আমাকে এটি জানিয়েছে। এখন পর্যন্ত পোস্টার শতভাগ অপসারণ না হলেও মানানসই অবস্থায় নিয়ে এসেছি। দু-এক দিনের মধ্যে একটা পোস্টারও অবশিষ্ট থাকবে না।’