অভ্যন্তরীণ সংকট মেটাতে ভারত যে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করেছিল রাজ্যগুলো না কেনায় সেসব পেঁয়াজ কেজিপ্রতি মাত্র দশ রুপিতে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে ভারত। দীর্ঘদিন ধরে মুম্বাইয়ের জওহারলাল নেহরু বন্দরে পড়ে থাকা সেই পেঁয়াজ এরইমধ্যে নষ্টের উপক্রম হয়েছে। দ্রুত এই পেঁয়াজগুলোর গতি করতে না পারলে বন্দরের গুদামেই চালানগুলো পঁচে পঁচে নষ্ট হবে বলে আশঙ্কা করছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। বিবিসি।
গেল বছরের সেপ্টেম্বরে অভ্যন্তরীণ পেঁয়াজ সংকট সৃষ্টি হলে ভারত বিভিন্ন রাজ্য সরকারের চাহিদার প্রেক্ষিতে নিত্যপন্যটি আমদানি শুরু করে ভারত। কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা দ্য মেটালস অ্যান্ড মিনারেলস ট্রেডিং কর্পোরেশন (এমএমটিসি) বিদেশ থেকে এই পেঁয়াজ আমদানির দায়িত্ব পেয়েছিল।
তবে টেম্পার চলে যাওয়ার ও স্বাদের ভিন্নতার কারণ দেখিয়ে আমদানি করা সেসব বিদেশি পেঁয়াজ কিনতে রাজি হয়নি বিভিন্ন রাজ্যের সরকার। এছাড়া এরইমধ্যে রাজ্যগুলো অভ্যন্তরীন পেঁয়াজ সংকট কাটিয়ে উঠেছে।
ফলে আমদানির এই পেঁয়াজ নিয়ে বিপাকে পড়ে কেন্দ্রীয় সরকার। এমন অবস্থায় গেল জানুয়ারিতে ভারত সেই পেঁয়াজের বড় একটি অংশ বাংলাদেশকে বিক্রির প্রস্তাব দেয় বলেও দেশটির গণমাধ্যমে খবর আসে।
তবে ভারত রপ্তানি বন্ধের পর চীন, মিশর, মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি হওয়ায় ভারতের আমদানি করা সেসব পেঁয়াজ বাংলাদেশ কিনতে আগ্রহী নয় বলে বক্তব্য আসে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এখন এই পেঁয়াজের ই-অকশন বা ইলেকট্রনিক নিলামের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। এর জন্য টেন্ডারও তাদের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। সরকারি ওই সংস্থাটি এ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানিতে প্রায় ২২৬ কোটি রুপি খরচ করেছে।
কিন্তু বিভিন্ন রাজ্যের সরকার তাদের কাছ থেকে মাত্র ১৮ কোটি রুপির পেঁয়াজ কিনেছে। অর্থাৎ এপর্যন্ত মোট আমদানির মাত্র ৮ শতাংশ বিভিন্ন রাজ্য সরকার কিনেছে। আর বাকি পেঁয়াজ মুম্বাই বন্দরের গুদামে পচে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিপুল ক্ষতির ধাক্কা কিছুটা কমানোর চেষ্টায় এমএমটিসির সামনে পেঁয়াজের অভাবি বিক্রি (ডিসট্রেস সেল) করা ছাড়া কার্যত কোনও উপায় নেই।
দিল্লির সরকারি সূত্রগুলোর বরাতে বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, মাত্র দুসপ্তাহ আগেও এই পেঁয়াজের জন্য রাজ্যগুলোর কাছে ৪৮ থেকে ৫৪ রুপি প্রতি কেজি দাম চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন পেঁয়াজের মানভেদে মাত্র ১০ থেকে ২৫ রুপি দাম পেলেই এমএমটিসি এই পেঁয়াজ বেচে দিতে প্রস্তুত।
উল্লেখ্য, গেল বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে ভারত পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এরপর দেশের বাজারে শতক হাকিয়ে দুই শতকের ঘরও পার করে বাংলাদেশে বহুল ব্যবহৃত নিত্যপন্যটির দাম।
চাহিদা মেটাতে সরকার বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুল পরিমান পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেয়। পার্শ্ববর্তী মিয়ানমারসহ চীন, তুরষ্ক ও মিশর থেকে আমদানি করা হয় পেঁয়াজ। তবে প্রায় পাঁচ মাস পরও বাংলাদেশ সেই অভাবনীয় পেঁয়াজ সঙ্কট পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি।