এসব তথ্য নিশ্চিত করে র্যাব-১৫, সিপিসি-১ টেকনাফ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট মির্জা শাহেদ মাহতাব বলেন, ‘ক্যাম্পের কিছু মাঝির কারণে রোহিঙ্গা শীর্ষ ডাকাতদের ধরা সম্ভব হচ্ছে না। কেননা মাঝিরা ডাকাতদের তথ্য আদান-প্রদানসহ খাদ্য সরবরাহ করে ও বিভিন্নভাবে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি অভিযানে যাওয়ার আগে তাদের কাছে খবর পৌঁছে যাচ্ছে। এতে খুব সহজে পার পেয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা। এসব কাজে জড়িত কিছু মাঝির বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে। সেগুলো নিয়ে গোয়েন্দারা তদন্ত করছেন। পরে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’.
তিনি বলেন, ‘সর্বশেষ গত বুধবার শীর্ষ রোহিঙ্গা ডাকাত দলের সঙ্গে পাহাড়ে গোলাগুলিতে ক্যাম্পের মাঝি মো. ইলিয়াছ ওরফে ডাকাত ইলিয়াছ (৪০) নিহত হয়েছে। তবে এ অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ডাকাত দলের ইন্ধনে ক্যাম্পের কিছু মাঝি অপপ্রচারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু অপরাধীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত থাকবে। এছাড়া জানুয়ারি মাসে র্যাবের হাতে তিন লাখ ইয়াবাসহ ১০ জন ধরা পড়েছে, এর মধ্যে পাঁচ জন রোহিঙ্গা।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে সক্রিয় ডাকাত দলের নেতৃত্বে রয়েছে−জাকির ডাকাত, কামাল, খায়রুল আমিন, নুরারী, আমান উল্লাহ, মাহমুদুল হাসান, হামিদ, নেছার, রাজ্জাক, বুল ওরফে বুইল্লা, রফিক, মাহনুর ওরফে ছোট নুর। তারা একাধিক দলে ভাগ হয়ে নানা অপরাধ করছে। তাদের মূল নেতা হিসেবে রয়েছে আবদুল হাকিম জকির ও সালমান।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘শালবন ক্যাম্প অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বেশ কয়েক দফা ওই ক্যাম্পে অভিযান চালাতে গিয়ে হামলার মুখে পড়েছে র্যাব। কেননা অভিযানের আগে ডাকাত দলের কাছে অভিযানের খবর পৌঁছে যাচ্ছে। ক্যাম্পের কিছু অসাধু মাঝি অর্থের লোভে ডাকাতদের সহযোগিতা করছে। সর্বশেষ গত বছর ডিসেম্বরে রোহিঙ্গা ডাকাত
সাধারণ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্যাম্পের অনেক মাঝিই ডাকাতদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলছে। ফলে মাঝিদের বাইরে গিয়ে কিছু বলা ও করার সুযোগ থাকে না তাদের। পাশাপাশি পাহাড়ি ডাকাতদের ভয়ে তারা তাদের ইচ্ছার কথা প্রকাশ করতে পারেন না। এছাড়া স্বদেশে ফেরার কথা বললে তাদের হত্যা করার হুমকি দেওয়া হয়। যার ফলে স্বদেশে ফেরার আগ্রহ দেখাতেও ভয় পান সাধারণ রোহিঙ্গারা।
টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আলম বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নানা অপরাধের কারণে এই অঞ্চলের মানুষ এখন চরম বিপদে। কক্সবাজারের ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গার মধ্যে স্থানীয়রা এখন সংখ্যালঘু। বিশাল ক্যাম্পে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষেও সম্ভব হচ্ছে না। দিনের বেলায় যেমন তেমন, রাত নামলেই রোহিঙ্গা ক্যাম্প যেন এক আতঙ্কের জনপদ।’
র্যাব-১৫-এর অধিনায়ক উইং কমান্ডার আজিম আহমেদ বলেন, ‘যতই দিন যাচ্ছে, রোহিঙ্গারা বিভিন্ন অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে। বিশেষ করে ক্যাম্পে রোহিঙ্গা ডাকাত দল সক্রিয় রয়েছে। এতে অভিযানের সময় আমাদের সদস্যরাও গুলিবিদ্ধ হচ্ছে। তাছাড়া ডাকাতদের সহযোগিতাকারী কিছু মাঝির নাম পাওয়া গেছে, তদের শনাক্ত করা হয়েছে। গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’