১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ভোর ৫:৩৩

চীনসহ ২৮ দেশে করোনাভাইরাস, বাংলাদেশের পরিস্থিতি কী?

চীন ছাড়াও বিশ্বের আরো ২৭ দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। এসব দেশে এ পর্যন্ত ২৩৭ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে।

আর চীনে আক্রান্তের সংখ‌্যা ২৪ হাজার ৩৮৪ জন। সারা বিশ্বে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ‌্যা ২৪ হাজার ৬২১ জন।

বুধবার সন্ধ‌্যায় উহান ভাইরাস ডট কেআর ওয়েবসাইট থেকে এ তথ‌্য জানা গেছে।

এ পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪৯৪ জন। মৃতদের মধ‌্যে হংকং ও ফিলিপাইনের দুই ব‌্যক্তি রয়েছেন। বাকিরা চীনেই মারা গেছেন।

চীন ছাড়া করোনাভাইরাসে জাপানে ৩৩ জন, থাইল‌্যান্ড ২৫ জন, সিঙ্গাপুরে ২৪ জন, হংকংয়ে ২১ জন, দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৯ জন, অস্ট্রেলিয়ায় ১৪ জন, জার্মানিতে ১২ জন, মালয়েশিয়ায় ১২ জন, যুক্তরাষ্ট্রে ১১ জন, তাইওয়ানে ১১ জন, ভিয়েতনামে ১০ জন, ম‌্যাকাও ১০ জন, ফ্রান্সে ছয় জন, ইউনাইটেড আবর আমিরাতে (ইউএই) পাঁচ জন, কানাডায় পাঁচ জন, ভারতে তিন জন, ফিলিপাইনে তিন জন, যুক্তরাজ‌্য-ইতালি-রাশিয়ায় দুই জন করে আক্রান্ত হয়েছে।

এছাড়া নেপাল, কম্বোডিয়া, ফিনল‌্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, সুইডেন, স্পেন, বেলজিয়ামে একজন করে আক্রান্ত হয়েছেন।

গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে চীনে আক্রান্ত হয়েছেন তিন হাজার চারশ ৯৪ জন। মারা গেছেন ৬৭ জন। জার্মানে ১১ জন, হংকংয়ে চারজন, দক্ষিণ কোরিয়ায় তিনজন, মালয়েশিয়ায় দুইজন, তাইওয়ান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ায় ও ফিলিপাইনে একজন করে আক্রান্ত হয়েছে।

আক্রান্ত দেশগুলোর মধ‌্যে চীনে নয়শ ৪৬ জন, থাইল‌্যান্ডে আটজন, অস্ট্রেলিয়ায় দুই জন সুস্থ হয়েছেন।

এছাড়া জাপান, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম ও শ্রীলঙ্কায় একজন করে সুস্থ হয়েছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মূল্যায়নে ঝুঁকির মাত্রা চীন, পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলসহ সারা বিশ্বে উচ্চ।

চীনের সব রোগীদের মধ্যে ৯৭ শতাংশ হুবেই প্রদেশের। রোগীদের মাঝে মৃত্যুহার চীনে ২.১ শতাংশ, হুবেই প্রদেশে ৩.১ শতাংশ।

রোগীদের মাঝে ৮০ শতাংশই ৬০ বছরের বেশি বয়সি, ৭৫ শতাংশ রোগী অন্যান্য রোগেও আক্রান্ত, মৃত্যুবরণকারীদের দুই-তৃতীয়াংশ পুরুষ।

করোনাভাইরাস ও বাংলাদেশ পরিস্থিতি

বাংলাদেশে এখনো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়নি। তবে এই ভাইরাস প্রতিরোধে ব‌্যাপক ভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ।

আইইডিসিআর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এ পর্যন্ত বিমান বন্দরে চীন থেকে আগত স্ক্রিনিংকৃত যাত্রীর সংখ্যা সাত হাজার দুইশ ৮৪ জন। এরমধ‌্যে বুধবার চারশ ৯৫ জনের স্ক্রিনিং করা হয়। আজ সাতজনসহ এপর্যন্ত নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৫০ জনের। খোলা হয়েছে হট লাইন। তাতে নয়শ ৫৩টি কল এসেছে। সেবা নিয়েছেন ছয়শ ৭৬ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেন, শুধু চীন না; সব দেশ থেকে আসা রোগীদেরই স্ক্রিনিং করা হয়। যেহেতু চীন থেকেই শুরু, চীনেই সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত। সেই কারণে চীনকে গুরুত্ব দিয়ে চীন থেকে আসাদের স্ক্রিনিং তথ‌্য রাখা হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী যদি অন‌্য দেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের তথ‌্য রাখার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, সেক্ষেত্রে সেসব দেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের তথ‌্যও রাখা হবে।

তিনি জানান, ১৭ জন চিকিৎসক বিমান বন্দরে কাজ করছেন। দুই এক দিনে চীন থেকে আসা যাত্রীদের হ‌্যান্ড হেল্ড ইনফ্রারেড থার্মোমিটারে জ্বর শনাক্ত শুরু করা হবে।

বুধবার দুপুরে আইইডিসিআর সম্মেলনে বাংলাদেশে করোনা মোকাবেলার পরিস্থিতি সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করা হয়।

আইইডিসিআর-এর পরিচালক প্রফেসর ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, আশকোনা কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্রে সাতটি ডরমেটরিতে চীন ফেরত যাত্রীরা অবস্থান করছেন। চিকিৎসা সেবা ও নার্সিং সেবা কার্যক্রমকে সেনা কর্তৃপক্ষের মেডিক্যাল সার্ভিস পুরোটাই সহায়তা দিচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা সকল ওষুধ সরবরাহ করছে, জরুরি প্রয়োজনে তাৎক্ষণিকভাবে ওষুধ কেনা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আশাকোনা কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্রে চীনের উহান থেকে আগত যাত্রীদের মধ‌্যে জ্বরে আক্রান্ত একজন শিশুকে বাবা-মাসহ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। তাদের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআর-এ প্রেরণ করা হয়েছে। নিয়মিতভাবে চার বেলা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।

ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা আরো জানান, আইইডিসিআর যাত্রীদের স্বাস্থ্যসেবা ছাড়াও যাত্রীদের রোগতাত্ত্বিক তথ্য সংগ্রহ করছেন। সামরিক বাহিনীর মিলিটারি পুলিশ কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন। এ উদ্দেশে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৩০ শয্যার আইসোলেশন শাখা খোলা হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সবার খাবার, শিশু খাদ্য, শিশুদের ডায়াপার ও অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করছে। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ অফিস কোয়ারেন্টাইন ভবনের সার্বিক ব্যবস্থাপনা করছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মশক নিধনসহ ক্যাম্পের স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করছে।

বাংলাদেশ পুলিশ কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্রের চারপাশে নিরাপত্তা দিচ্ছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চীনে অবস্থিত বাংলাদেশের নাগরিকদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন।

প্রতিদিন দু বেলা মাস্ক সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, সেনা কর্তৃপক্ষ কোয়ারেন্টাইন কক্ষগুলো ও চারপাশের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার দায়িত্ব পালন করছেন। নিয়মিতভাবে কোয়ারেন্টাইনকৃত যাত্রীদের মতামত ও প্রতিক্রিয়া নিচ্ছি এবং সে অনুযায়ী সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি বলেন, জেলা পর্যায়ে আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হচ্ছে। সকল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আইসোলেশন কক্ষ প্রস্তুত করা হচ্ছে। কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে ২৫০ শয্যার আইসোলেশন কক্ষ স্থাপন করা হবে। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, সংক্রামক ব্যধি হাসপাতাল প্রাথমিক পর্যায়ে রোগী গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।

ঝুঁকি সংযোগ নিয়মিতভাবে করা হচ্ছে। সংক্রমণ প্রতিরোধে জোর দেয়া চীনের নাগরিকদের স্বাস্থ্য নিয়মিতভাবে পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও অন্যান্য মাধ্যমে প্রচারিত গুজবকে যথাযথভাবে সঠিক তথ্য দিয়ে জবাব দেয়ার বিষয়ে বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক প্রফেসর ডা. শাহনীলা ফেরদৌসী উপস্থিত ছিলেন।

প্রকাশ :ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২০ ১:৪৮ অপরাহ্ণ