অর্থনীতি ডেস্ক : আসছে ‘আমানত সুরক্ষা আইন ২০২০’। বিদ্যমান ‘ব্যাংক আমানত বীমা আইন ২০০০’ রহিত করে নতুন এই আইন চালু করা হবে। চালু থাকা ব্যাংক আমানত বীমা আইনে শুধু ‘ব্যাংক’ অন্তর্ভুক্ত ছিল। নতুন আমানত সুরক্ষা আইনে ব্যাংকের পাশাপাশি ‘আর্থিক প্রতিষ্ঠান’কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নতুন এই আইনের অধীনে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমানত সুরক্ষার বিপরীতে বীমা প্রিমিয়াম পরপর দু’বার দিতে ব্যর্থ হলে সেই প্রতিষ্ঠানকে অবসায়নের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংককে। সে ক্ষেত্রে ট্রাস্টি বোর্ডের পরামর্শের প্রয়োজন পড়বে। বিদ্যমান আইনে অবসায়নের কথা উল্লেখ ছিল না। এই আইনের অধীনে গঠন করা হবে একটি ‘আমানত সুরক্ষা ট্রাস্ট তহবিল’। এরই মধ্যে এই আইনের খসড়ার ওপর মতামত আহ্বান করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আইনের খসড়ার ওপর মতামত প্রদান করতে হবে।
আইনের খসড়ায় ‘আমানত’-এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘আমানত অর্থ কোনো তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে, তার আমানতকারীর হিসাবে অপরিশোধিত অবশিষ্টের সমষ্টি।’ আইনে বীমার অর্থ বোঝানো হয়েছে, ‘বীমা’ অর্থ আমানত বীমা, যা দ্বারা আমানত সুরক্ষাও বোঝাবে, তবে তা দ্বারা দেশে বিদ্যমান অন্য কোনো আইনে সংজ্ঞায়িত বীমাকে বোঝাবে না। বীমাকৃত আমানত বলতে আমানতের সেই অংশকে বোঝাবে, যার বিপরীতে যথাযথভাবে প্রিমিয়াম পরিশোধিত হয়েছে।
এই আইনের আওতায় একটি ‘আমানত সুরক্ষা ট্রাস্ট তহবিল’ থাকবে। বলা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক আমানত সুরক্ষা ট্রাস্ট তহবিল নামে একটি তহবিল সংরক্ষণ করবে এবং এই তহবিলের অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুমোদিত কোন খাতে বিনিয়োগ করা যাবে।
তহবিলে নিম্নবর্ণিত অর্থ জমা হবে, যথা :
(ক) বীমাকৃত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত অর্থ; (খ) তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ হতে প্রাপ্ত আয়। ধারা ৭ এর অধীন অবসায়িত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হইতে প্রাপ্ত অর্থ; অন্য কোন উৎস হইতে প্রাপ্ত আয়। তহবিলের অর্থ ধারা ৭ এর বিধান মোতাবেক অবসায়িত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানতকারীর পাওনা পরিশোধ এবং এ তহবিল রক্ষণাবেক্ষণের খরচ ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে ব্যয় করা যাবে না।
আইনের খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘এই আইন বা তদধীন কোন বিধি বা প্রবিধানের অধীন সরল বিশ্বাসে কৃত কোন কার্য বা দায়ের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোন মামলা, ফৌজদারি কার্যক্রম বা অন্য কোন আইনগত কার্যধারা রুজু করা যাবে না। বীমাকৃত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রিমিয়াম বিষয়ে আইনের খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘প্রত্যেক বীমাকৃত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তার আমানতের ঐ অংশের উপর প্রতিবৎসর ঐ রূপ হারে তহবিলে প্রিমিয়াম প্রদান করবে, যা বাংলাদেশ ব্যাংক সময় সময় নির্ধারণ করবে। তবে শর্ত থাকে যে, বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে প্রিমিয়ামের হার কম-বেশি করতে পারবে।
(২) বীমাকৃত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তার ব্যয় খাত হতে প্রিমিয়াম পরিশোধ করবে।
(৩) বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত সময় ও পদ্ধতিতে প্রিমিয়াম পরিশোধ করবে।
(৪) বীমাকৃত কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রিমিয়াম প্রদানে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যাংক তার কাছে রক্ষিত উক্ত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান এর হিসাব হতে সমপরিমাণ অর্থ উক্ত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রিমিয়াম বাবদ কর্তন করে তহবিলে জমা দানের নিদেশ প্রদান করতে পারবে।
প্রিমিয়াম প্রদানে ব্যর্থতার বিষয়ে আইনের খসড়া বলা হয়েছে- (ক) কোন বীমাকৃত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রিমিয়াম প্রদানে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যাংক তার কাছে রক্ষিত উক্ত ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এর হিসাব হতে সমপরিমাণ অর্থ উক্ত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রিমিয়াম বাবদ কর্তন করে তহবিলে জমা দানের নির্দেশ প্রদান করতে পারবে। সেক্ষেত্রে বিলম্বিত সময়ের জন্য নির্ধারিত প্রিমিয়ামের উপর ব্যাংক রেট অনুযায়ী দণ্ডসুদ আরোপ করতে পারবে।
(খ) কোন বীমাকৃত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরপর দুইবার প্রিমিয়াম পরিশোধে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যাংক উক্ত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে শুনানির সুযোগ প্রদান করে সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা প্রজ্ঞাপনে উল্লেখিত সময়ের জন্য, আমানত গ্রহণ হতে বিরত খাকার নির্দেশ প্রদান করতে পারবে।
(গ) একাধিক্রমে দুই বা ততোধিকবার প্রিমিয়াম পরিশোধে ব্যর্থতার ক্ষেত্রে ট্রাস্টি বোর্ড সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে অবসায়ন করার পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে পরামর্শ দিতে পারবে।
তহবিলের দায় বিষয়ে আইনে উল্লেখ রয়েছে (১) কোন বীমাকৃত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান এর অবসায়নের আদেশ প্রদান করা হলে, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ওই অবসায়িত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে আমানতকারীকে তার বীমাকৃত আমানতের সমপরিমাণ টাকা, যা সর্বাধিক এক লাখ টাকা অথবা সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সময়ে সময়ে নির্ধারিত টাকার বেশি হবে না, তহবিল হতে প্রদান করবে।
বলা হয়েছে- অবসায়িত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কোন আমানতকারীর একাধিক হিসাব থাকলে এবং ওই সকল হিসাবে একত্রে এক লাখ টাকার অধিক স্থিতি থাকলেও তাকে তহবিল হতে সর্বাধিক এক লাখ টাকা কিংবা সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সময়ে সময়ে নির্ধারিত টাকার অধিক পরিশোধ করা হবে না। তবে এরূপ পরিশোধ অবসায়িত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিট সম্পদের বিপরীতে লিকুইডেটর কর্তৃক আমানতকারীদিগকে দেয় অংকের সহিত সমন্বয় করা হবে।
(৩) অবসায়িত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবসায়ক যে নামেই অভিহিত হোক না কেন, তাহার কার্যভার গ্রহণের পর অনধিক নব্বই দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত ছকে আমানতকারীর আমানতের তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট দাখিল করবে। তহবিলে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ পরিশোধিতব্য টাকা হতে কম হইলে বাংলাদেশ সরকার, ঘাটতি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক হইতে ব্যাংক রেটে কর্জ করে তহবিলে প্রদান করবে।
ট্রাস্টি বোর্ড- এই আইনের অধীনে তহবিল পরিচালনা ও প্রশাসনের জন্য একটি ট্রাস্টি বোর্ড থাকবে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড ডাইরেক্টরস তহবিলের ট্রাস্টি বোর্ড হবে বলে আইনের খসড়া উল্লেখ করা হয়েছে।