কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় দুইটি হাসপাতাল নির্মাণ করা হচ্ছে। এর একটি হুশেনশান হাসপাতাল; যার আয়তন ২৫ হাজার বর্গমিটার। সোমবারই এটি চালু করা সম্ভব।
উহান শহরে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর গত ২৪ জানুয়ারি হাসপাতালটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরু হয় চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে। সেখানে এক কোটি ১০ লাখ মানুষের বাস। দেশটির সরকারি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, হুশেনশান হাসপাতালে এক হাজার শয্যার ব্যবস্থা থাকবে।
এই হাসপাতালটি কত দ্রুত তৈরি করা হচ্ছে সেটা যাতে লোকজন দেখতে পায়, সেজন্য এর নির্মাণকাজ চীনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সিসিটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে। টেলিভিশনে হাসপাতাল নির্মাণের এই দৃশ্য দেখছে বহু মানুষ। সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস জানিয়েছে, দেশটিতে প্রায় চার কোটি মানুষ হাসপাতাল নির্মাণের লাইভ স্ট্রিমিং দেখেছে।
এই সম্প্রচার এতোটাই জনপ্রিয় হয়েছে যে সেখানে ক্রেন, বুলডোজার ও ডিগারের মতো যেসব যন্ত্র দিয়ে হাসপাতালটি নির্মাণ করা হচ্ছে সেগুলোও মানুষের কাছে খ্যাতি পেয়ে গেছে। লোকজন সিমেন্ট মেশানোর একেকটি মেশিনের নাম দিয়েছে দ্য সিমেন্ট কিং, বিগ হোয়াইট র্যাবিট এবং দ্য হোয়াইট রোলার।
২০০৩ সালে সার্স ভাইরাস মোকাবেলায় রাজধানী বেইজিংয়ে যে শিয়াওতাংশান হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছিল, তার অনুকরণেই হুশেনশান হাসপাতালটি তৈরি করা হচ্ছে উহানে।
শিয়াওতাংশান হাসপাতালটি তৈরি করা হয়েছিল মাত্র সাতদিনে। বলা হয় যে, দ্রুতগতিতে হাসপাতাল তৈরির বেলায় এটা ছিল বিশ্বরেকর্ড।
একজন কর্মকর্তা ইয়াংঝং হুয়াং জানিয়েছেন, চীনে এই হাসপাতালটির মতো প্রকল্প খুব দ্রুত বাস্তবায়নের ইতিহাস আছে। বেইজিংয়ের হাসপাতালটির মতো উহানের এই হুশেনশান হাসপাতালটিও আগে থেকে তৈরি ছোট ছোট ভবন একসঙ্গে জোড়া দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে।
মি. হুয়াং বলেছেন, নির্মাণ কাজ খুব দ্রুত শেষ করার জন্য সারা দেশ থেকে প্রকৌশলীদের উহানে নিয়ে আসা হয়েছে। তার ভাষায়, প্রকৌশল কাজে চীন খুবই দক্ষ। পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষে এটা কল্পনা করাও কঠিন। কিন্তু এটা করা সম্ভব।
চীনের সব প্রদেশ ছাড়াও এখন পর্যন্ত অন্তত ২৭টি দেশে এ ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। গত ৩১ জানুয়ারি উহান কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান স্বীকার করেন, এ ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে শহর কর্তৃপক্ষের আরও ত্বরিত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কেননা আগেই জোরালো ব্যবস্থা নেওয়া হলে পরিস্থিতির এতোটা অবনতি ঘটতো না।
এদিকে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চীন সম্পর্কে বৈরী মনোভাব বাড়তে শুরু করেছে। অনেক ক্ষেত্রেই এটি বাস্তবিক উদ্বেগের মাত্রাকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। জাপানে টুইটার ট্রেন্ডিংয়ে উঠে এসেছে, ‘চীনারা জাপানে এসো না’ হ্যাশট্যাগ। সিঙ্গাপুরে কয়েক হাজার মানুষ দেশটিতে চীনা নাগরিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে একটি আবেদন করেছেন সরকারের কাছে। হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভিয়েতনামের ব্যবসায়ীরা একটি প্রতীক তুলে ধরছেন যাতে বলা হচ্ছে, চীনা ক্রেতাদের স্বাগত জানানো হবে না। ফ্রান্সে একটি আঞ্চলিক দৈনিক পত্রিকায় ‘হলুদ সংকেত’ প্রকাশ করে সতর্কতা জারি করেছে। কানাডার টরেন্টোর উপকূলে একটি জেলা স্কুলের অভিভাবকরা দাবি করেছেন, সম্প্রতি চীন থেকে ফেরা একটি পরিবারের শিশুদের যেন ১৭ দিন শ্রেণিকক্ষে আসতে দেওয়া না হয়।
চীনের সঙ্গে সব ধরনের ফ্লাইট চলাচল স্থগিত রেখেছে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় এয়ারলাইন্সগুলো। অনেক দেশই হুবেই প্রদেশে ভিসা দেওয়া বন্ধ রেখেছে। ফিলিপাইনের আইনপ্রণেতা রাল্প রেক্টো বলেন, আমি মনে করি চীনা ভ্রমণকারীদের সাময়িক সময়ের জন্য ‘প্রবেশ নিষিদ্ধ’ নির্দেশিকা বসানোর সময় এসেছে।