পরিপত্রে বলা হয়, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ১ ফেব্রুয়ারি (২০২০)। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের বিষয়টি অনেকাংশেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যথাযথ ভূমিকার ওপর নির্ভর করে। তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করলে, নির্বাচন সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠান করা সম্ভব। সেজন্য তারা কে কীভাবে কাজ করবে—সে ব্যাপারে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রতিটি সাধারণ ভোটকেন্দ্রে অস্ত্রসহ চার জন পুলিশ এবং প্লাটুন কমান্ডারসহ আনসার সদস্য থাকবে ১২ জন। গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোতে ছয় জন সশস্ত্র পুলিশ সদস্য এবং ১২ জন আনসার সদস্যসহ ১৮ জন দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া, মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), ব্যাটালিয়ন আনসার, বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে এক হাজার ৩১৮টি ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে এক হাজার ১৫০টি ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে ১২৯টি মোবাইল টিম, স্ট্রাইকিং ফোর্স ৪৩টি এবং ৫২টি রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন থাকবে। এছাড়া, র্যাবের ১৩০টি টিম এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৬৫টি প্লাটুন দায়িত্ব পালন করবে।
কেন্দ্রগুলোতে ভোটগ্রহণের জন্য রাখা ইভিএম ও ইভিএমের কারিগরি সহায়তার জন্য একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের নেতৃত্বে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনি কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে প্রতিকেন্দ্রে দুই জন সেনা সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। তারা কোনও ধরনের অস্ত্র ও গোলাবারুদ বহন করবেন না। কিন্তু ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় দায়িত্ব পালন করবেন। দায়িত্ব পালনের সময় ইভিএমের মাধ্যমে ভোট প্রদান যথাযথভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করবেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের যার যা করণীয়
নারী ভোটকেন্দ্রে ও কক্ষে নারী এবং পুরুষ ভোটকেন্দ্রে ও কক্ষে পুরুষ অঙ্গীভূত আনসার ও ভিডিপি সদস্য মোতায়েন থাকবেন। ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভোটগ্রহণের দিন এবং এর আগের দু’দিন ও পরের একদিনসহ মোট চারদিনের জন্য নিয়োজিত থাকবেন। অঙ্গীভূত আনসার ও ভিডিপি সদস্যরা পাঁচ দিন মাঠে থাকবেন। আগের দিন রাতে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর সব সদস্য ভোটকেন্দ্রে অবস্থান করবেন। মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স ভোটগ্রহণের দিন এবং তার আগের দু’দিন ও পরের একদিনসহ চার দিন অর্থাৎ ৩০ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন।
স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ভোটকেন্দ্রের বাইরে র্যাব ও পুলিশের টিম সংশ্লিষ্ট ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে। স্থানীয় চাহিদা, ভোটকেন্দ্রের অবস্থান ও ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা, ওয়ার্ড বিন্যাস ইত্যাদি বিবেচনায় এবং বাস্তবতার নিরিখে রিটার্নিং অফিসার, সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে আলোচনা করে মোবাইল স্ট্রাইকিং ফোর্সের সংখ্যা বাড়াতে ও কমাতে পারবেন। দুই সিটিতে পাঁচ প্লাটুন করে বিজিবি সদস্য সুবিধাজনক স্থানে রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত রাখতে হবে। সেই সঙ্গে উভয় সিটি করপোরেশনে পাঁচটি করে র্যাবের রিজার্ভ টিম নিয়োজিত রাখতে হবে। মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত প্রতিটি টিম বিশেষ করে বিজিবির টহল দলে একজন করে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিতে হবে। ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্যান্য সবার নিরাপত্তা, ইভিএমের নিরাপত্তা বিধান ও সুশৃঙ্খলভাবে ভোটগ্রহণের নিশ্চয়তা বিধানের লক্ষ্যে ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রয়োজনীয় সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার এবং ক্ষেত্র বিশেষে প্রিজাইডিং অফিসার ভোটকেন্দ্রে অবস্থানকারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং টহল কাজে নিয়োজিত পুলিশ, র্যাব, বিজিবির সহায়তায় সশস্ত্র বাহিনীর কারিগরি সদস্যদের যাবতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া, যেকোনও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা প্রিজাইডিং অফিসারের সহায়তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করবেন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সশস্ত্র বাহিনী কী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক শাখার যুগ্ম সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রে ইভিএমের কারিগরি সহায়তা দিতে সশস্ত্র বাহিনীর যেসব সদস্য নিয়োজিত থাকবেন, তারা যদি কোনও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির শিকার হন, তখন তাদের উদ্ধারের জন্য সশস্ত্র বাহিনী ব্যবস্থা নিতে পারবে।’
এ বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনায় ছিল না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের নির্দেশেই করা হয়েছে।’
পরিপত্রে আরও বলা হয়, দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ১২৯ জন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন ৬৪ জন। থাকবে আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় ও মনিটরিং সেল। এছাড়া, দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে চেকপোস্ট বসানো হবে। নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেগুলো চালু থাকবে। নির্বাচনি এলাকার নিকটবর্তী নদীপথে নৌ-পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া, আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো নিয়ে পরিপত্রে বিস্তারিত নির্দেশনা দেওয়া হয়।