২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৮:০৭

মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে প্রচারণা

ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আজ দিবাগত মধ্যরাত থেকে প্রচারণা শেষ হচ্ছে। নির্বাচনী এলাকায় বহিরাগতদের অবস্থান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ১২৯ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচনের দায়িত্বে থাকছেন। আজ মাঠে নামছে ৬৫ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বৃহস্পতিবার থেকে ভোটের দিন ও ভোটের পরদিন-মোট চার দিন তারা নির্বাচনী মাঠে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবে।এ ছাড়া দুই সিটিতে আরও ৫ প্লাটুন করে মোট ১০ প্লাটুন বিজিবি সদস্য রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে মোতায়েন থাকবে। তাদের পাশাপাশি মাঠে থাকছেন পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা। মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে তারা টহল দেবেন।

ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় নির্বাচনী এলাকায় রাজনৈতিক উত্তাপ বিরাজ করছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে নির্বাচন কমিশনও। যেকোনো ধরনের সহিংসতা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

১ ফেব্রুয়ারি হবে ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন। নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী ভোটের ৩২ ঘণ্টা আগে প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। নির্বাচনের দিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত একযোগে সব কেন্দ্রে ভোট হবে ইভিএমে। অন্যদিকে প্রচারণার শেষ হওয়ার এক দিন আগে গতকাল নির্বাচন কমিশন অবৈধভাবে লাগানো নির্বাচনের প্রচার সামগ্রী অপসারণের নির্দেশ দিয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এসব প্রচারসামগ্রী অপসারণে ব্যবস্থা নিতে বলা হয় নির্দেশনায়।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবুল কাসেম বলেন, ‘বিজিবির সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। আজ সকাল নয়টা থেকেই বিজিবির সদস্যরা মাঠে থাকবেন। শুধু তারাই নয়, এদিন থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন। প্রতিটি ওয়ার্ডের জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং দুইটি ওয়ার্ডের জন্য একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট থাকছেন।

আবুল কাসেম বলেন, আজ দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারবেন। এরপর যদি কোনো প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারণা চালায় সেক্ষেত্রে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা তাদের সামারি ট্রায়াল করে এরপর ব্যবস্থা নেবেন।

ইসি সূত্র জানায়, ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ৬৫ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মাঠে থাকবে। তারা ভোটের আগে ও পরে মোট চার দিন দায়িত্ব পালন করবেন। এবারের নির্বাচনে সব বাহিনী মিলে মোট ৪০ হাজারের মতো ফোর্স নিয়োজিত থাকবে। বিধি অনুযায়ী, ভোটের ৩২ ঘণ্টা আগে প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ১ ফেব্রুয়ারি দুই সিটিতে ভোট রয়েছে। ওই দিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একযোগে সব কেন্দ্রে ভোট চলবে ইভিএমে।

ভোটের দুই দিন আগে ৩০ জানুয়ারি থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চার দিনের জন্য দায়িত্ব পালন করবে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স। দুই সিটি ভোটকে সামনে রেখে ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন’-সংক্রান্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে এ তথ্য জানানো হয়।

এ নির্বাচনে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও ভিডিপি নিয়োগে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন করে ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ জন করে নিরাপত্তা সদস্য নিয়োজিত থাকবে। মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সে দায়িত্ব পালন করবে পুলিশ, এপিবিএন, ব্যাটালিয়ন আনসার, বিজিবি ও র‌্যাব। নির্বাহী ও বিচারিক হাকিমও থাকবে এ সময়। ইভিএমের কারিগরি সহায়তায় প্রতি ভোটকেন্দ্রে দুজন করে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য নিয়োগ থাকবে।

মহিলা ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ভোটাররা যাতে নিরাপদে, নির্বিঘেœ ও স্বাচ্ছন্দ্যে ভোট দিতে পারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রয়োজনীয় সহায়তা করবে। ৩০ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সধারীদেরও আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন ও আগ্নেয়াস্ত্রসহ চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে।

ইসি কর্মকর্তরা জানান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মোট সাধারণ ওয়ার্ড সংখ্যা ৫৪টি ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১৮টি। এই সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৩০ লাখ ১০ হাজার ২৭৩ জন। এখানে সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১ হাজার ৩১৮টি, ও ভোট কক্ষের সংখ্যা ৭ হাজার ৮৪৬টি। দক্ষিণ সিটিতে মোট সাধারণ ওয়ার্ড ৭৫, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ২৫। এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৪ জন। সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র রয়েছে এক হাজার ১৫০টি, ভোটকক্ষ ৫৫৮৮টি।

এদিকে শেষ বেলায় এসে হাতের বাকি সময়টুকু নষ্ট করতে রাজি না মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তাই যে এলাকায় গণসংযোগ করার সুযোগ হয়নি এখন সেখানে ছুটছেন প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা। গতকালও বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগে ব্যস্ত আওয়ামী লীগ, বিএনপির মেয়রপ্রার্থীরা। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে দিয়েছেন নানা প্রতিশ্রুতি। মেয়রের পাশাপাশি নিজ এলাকার উন্নয়নে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিজ নিজ প্রতীকে ভোট চাইছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা করছেন সবাই।

ইতোমধ্যে দুই সিটিতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। ফলে নির্বাচনী আমেজ সৃষ্টি হলেও ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন ভোটাররা। আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলেও অনেক জায়গায় ইসির কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। তবে প্রার্থীরা ভোটারদের নির্ভয়ে কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান করছেন। একইসঙ্গে নির্বাচনের পরিবেশ যাতে সুন্দর থাকে তার ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেছেন, সুনির্দিষ্টভাবে কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাতে বড় ধরনের আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়েছে এমন নয়। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে দুটি অতর্কিত ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া যেসব অভিযোগ পাওয়া গেছে তা সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা নিষ্পত্তি করেছেন।

প্রকাশ :জানুয়ারি ৩০, ২০২০ ১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ