২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ভোর ৫:১৪

শিবির সন্দেহে ঢাবিতে চার শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতন

নির্যাতনের পর আহত শিক্ষার্থীদের হল প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ও পুলিশের মাধ্যমে শাহবাগ থানায় দেওয়া হয়। রাতেই আহত দুই শিক্ষার্থীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর জন্য নিয়ে যায় পুলিশ।

মারধরের শিকার চার শিক্ষার্থী হ‌লেন, ট্যুরিজম অ্যান্ড হস‌পিটা‌লি‌টি ম্যা‌নেজ‌মেন্ট বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুকিমুল হক চৌধুরী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সানোয়ারুল ইসলাম, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃ‌তি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মিনহাজ উদ্দিন, আরবি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আফসার উদ্দিন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত ১১টার দিকে জহুরুল হক হলের গেস্টরুমে ছাত্রলীগের নিয়মিত গেস্টরুম চলছিল। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মুকিম চৌধুরীকে শিবির সন্দেহে গেস্টরুমে ডাকা হয়। সেখানে হল শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা তাদের অনুসারীদের দিয়ে মুকিমকে প্রথমে মানসিক চাপ দেন। এতে স্বীকার না করায় তাকে লাঠি, স্টাম্প ও রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করতে থাকেন। পরে তার ফোনের চ্যাটলিস্ট দেখে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে সঙ্গে নিয়ে সানওয়ারুল ইসলাম, মিনহাজ উদ্দীন ও আফসার উদ্দীনকে গেস্টরুমে আনা হয়। সেখানে তাদের বেধড়ক মারধর করেন ছাত্রলীগের নেতারা। রাত দুইটা পর্যন্ত তাদের ওপর বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন চলে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, নির্যাতনকারী আনোয়ার হোসেন ও আমির হামজা দুজনেই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের অনুসারী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শী এক শিক্ষার্থী বলেন, রাত ১১টা থেকে মুকিমকে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে আমরা বন্ধুরা রাত একটায় তাকে খুঁজতে বের হলে গেস্ট রুম থেকে বড় ভাইয়েরা মুকিমকে সাথে নিয়ে বের হতে দেখি। এসময় মুকিম আহত অবস্থায় ছিল বলেও নিশ্চিত করেছেন এ শিক্ষার্থী।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগের নেতারা দাবি করছেন, তাদের কাছ থেকে শিবির সংশ্লিষ্ট বই উদ্ধার করা হয়েছে। তবে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে এর কোনো ছবি অথবা প্রমাণ দিতে পারেননি তারা।

শিবির সন্দেহে গেস্টরুমে ডাকা হলেও তাদের কাছে শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়‌নি।

শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় হল সংসদের ভিপি সাইফুল্লাহ আব্বাসী অনন্ত জড়িত থাকায় শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের ভিপি শিক্ষার্থীদের নির্যাতন থেকে রক্ষা করার কথা। উল্টো তিনি স্বয়ং শিক্ষার্থী নির্যাতনে অংশ নিচ্ছেন। এটা আমাকে খুব হতাশ করেছে। আমরা কি তাকে এজন্যই ভোট দিয়েছিলাম।’

নির্যাতনের বিষয়ে হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা  বলেন, ‘আমরা তাদের মারধর করিনি। শুধু জিজ্ঞাসা করেছি। তাদের কাছ থেকে শিবিরের দুটি বই উদ্ধার করেছি।’ তবে বইয়ের ছবি ও নামের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে আমির হামজা কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি।

প্রসঙ্গত, ঢাকা মেডিকেলে চাঁদা চেয়ে এক ওষুধ ব্যবসায়ীকে মারধরের কারণে ঢাবি শাখা ছাত্রলীগ থেকে আমির হামযাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এর কিছুদিন পর ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত থাকায় তাকে হল থেকে নামিয়ে দেয়া হয়। পরে ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের ছত্রছায়ায় আবার হলে ওঠেন।

এ বিষ‌য়ে জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান  বলেন, ‘গতকাল রাত আনুমানিক তিনটার দিকে জহুরুল হক হলের চার শিক্ষার্থীকে থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী  বলেন, ‘আমরা হল প্রশাসনের মাধ্যমে এ বিষয়ে অবহিত হয়েছি। ইতিমধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। যদি ওই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী ও শৃঙ্খলাবিরোধী কাজে জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হয়, তাহলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর যদি কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া না যায় তাহলে তাদেরকে কোনো ধরনের হয়রানি করা যাবে না, এটা আমরা বলে দিয়েছি।’

হল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চলমান থাকা অবস্থায় ছাত্রলীগের নেতারা কীভাবে শিক্ষার্থীদের মারধর করে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটাও তো শৃঙ্খলা ভঙ্গ। যে বা যারাই শৃঙ্খলা ভঙ্গ করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রকাশ :জানুয়ারি ২২, ২০২০ ২:৪৩ অপরাহ্ণ